বাঁশের গায়ে সিফন সুতো জড়ানো ইস্তক রেষারেষিটা ছড়িয়ে পড়েছে শহরের দু’টো প্রান্তে। তা নিয়ে তর্ক ইস্ট-মোহনের সাপোর্টারকেও লজ্জা দেবে, রেষারেষি বিব্রত করবে একই রুটের বাস-ট্রেকারের দৌড়কে! পুজোর বাজারে বহরমপুর শহরে এখন এটাই রাজনীতি, এটাই চায়ের আড্ডা। হোক না একই দলের কর্মী, তাদের ভিন্ন দু’টো পুজো মণ্ডপ তো রয়েছে!
বহরমপুর টাউন তৃণমূল সভাপতি নাড়ুগোপাল মুখোপাধ্যায় সদ্য ত্যাগ করেছেন কংগ্রেস। তাঁর উল্টো দিকে হাসি হাসি মুখে মান্নান তনয় ডোমকলের পুরপ্রধান সৌমিক হোসেন। প্রশ্ন একটাই কে কত লোক টানতে পারবে? দুর্গা পুজোর ভরা বাজারে সবার কাছেই এখন সেটা কোটি টাকার প্রশ্ন। দু’ পক্ষেরই দাবি, এখনও পর্যন্ত পুজোর ‘কাউন্ট ডাউন’-এ তাঁরাই এগিয়ে। সৌমিক হোসেনের পুরাতন কান্দি বাসস্ট্যান্ড পুজো কমিটির এ বারের ৩৮ বছরের পুজো মণ্ডপটা হয়েছে কিছুটা দূরে। মাছ ও আনাজের দৈনিক বাজারের পিছনে, কৃষ্ণনাথ কলেজ স্কুলের ফুটবল মাঠে। সৌমিক বলছেন, ‘‘পুজো দেখতে এ বার আমদের মণ্ডপে রেকর্ড ভিড় হবে, মিলিয়ে নেবেন। ফলে আগের জায়গায় এ বার আর পুজো করা সম্ভব হল না। তাই কৃষ্ণনাথ কলেজ স্কুলের ফুটবল মাঠটাকেই বেছে নিলাম।’’
সেখানে প্রায় দেড় কোটি টাকার বাজেটের ঢাউস মণ্ডপ তাঁর। পুজোয় থাকছে হিমাচল প্রদেশের কাঙরা মন্দির। আর তার অবিকল চেহারা ফুটিয়ে তুলতে গিয়ে ফুটবল মাঠের দফারফা করে তৈরি হয়েছে এক কোমর গভীর জলাশয়। সেখানে ভেসে উঠবে, মন্দিরের প্রতিচ্ছবি। তাঁর পুজো যাতে জেলার অন্য পুজোকে কয়েক কদম পিছনে ফেলতে পারে তার যথাসাধ্য ব্যবস্থা করেছেন সৌমিক, বলছেন, ‘‘আগামী বৃহস্পতিবার লক্ষ্মীবারের বিকালে আমাদের পুজোর উদ্বোধন করবেন টলিউডের সেলিব্রিটি রাজ-শুভশ্রী।’’ সৌমিকের প্রধান সেনাপতি, তথা তৃণমূল ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি ভীষ্মদেবের টিপ্পনি, ‘‘ওই রাজকীয় উদ্বোধনেই অন্যরা আশা করি কাত হয়ে যাবে।’’
আরও পড়ুন: ‘মহিষাসুর’-এর সঙ্গেই সুখের সংসার ‘দুর্গা’র
আরও পড়ুন: স্বামী ব্রহ্মানন্দের বাড়ির পুজোয় জাগে নিদ্রাকলস
তাঁর বুকের উপর (পড়ুন বহরমপুর শহর) ‘বহিরাগত’ অন্যের এমন ‘দাপট’ শুনবেন কেন নাড়ুগোপাল? বহরমপুর ‘ভট্টাচার্যপাড়া পুজো কমিটি’র সভাপতি নাডু তাই বলছেন, ‘‘এ বার একটি প্রসিদ্ধ গয়না ব্যবসায়ীর দেওয়া ১৫ কোটি টাকা মূল্যের ২৫ কেজি সোনার গয়নায় সাজিয়েছি মা’কে। ২৬ ফুট উচ্চতার দূর্গা। মণ্ডপের ভিতরে রয়েছে ৬০০ বর্গ ফুটের পেল্লায় ঝাড় লণ্ঠন। মণ্ডপটাও প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য মিলিয়ে তৈরি। খরচ পড়ছে ৫০ লক্ষ টাকা।’’ তা হলে? বাকিটা বলবে, বাঁধ ভাঙা দর্শনার্থী— দু’জনেই প্রবল আত্মবিশ্বাস নিয়ে হাসছেন!