ক্যানসার নিয়ে সচেতনতা বাড়াতেই এমন উদ্যোগ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেব বলছে, চলতি বছরে পৃথিবীতে শুধু ক্যানসারেই ৯৬ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হতে পারে। বিশ্বে প্রতি ছ’টি মৃত্যুর একটির কারণ ক্যানসার। পৃথিবী জুড়ে সেলিব্রিটিদের মধ্যেও হু হু করে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। পরিস্থিতি এমনই যে, আনন্দ-উৎসবের মরসুমেও এই রোগের আতঙ্ক থেকে দূরে থাকা যায় না। তাই বাঙালির বৃহত্তম উৎসব দুর্গা পুজোকে ক্যানসার সম্পর্কে সচেতনতা প্রসারের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে শহরের একটি পুজো কমিটি। কারণ সচেতনতার অভাবেই ক্যানসার এমন মহামারীর আকার নিচ্ছে, বলে মত চিকিৎসক মহলের।
পরিস্থিতি যে উদ্বেগজনক তা মানছেন চিকিৎসকেরা। পরিসংখ্যান বলছে, মহিলাদের মধ্যে ক্যানসার আক্রান্তের সংখ্যায় বিশ্বে চিন এবং আমেরিকার পরেই ভারতের স্থান। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ক্যানসার প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চের হিসেবে, ভারতে প্রতি আট মিনিটে এক জন মহিলা জরায়ুমুখের ক্যানসারে মারা যান। তামাক সেবনের ফলে প্রতিদিন মারা যাচ্ছেন ২,৫০০ মানুষ। স্তন ক্যানসার শনাক্ত হওয়া প্রতি দু’জন মহিলার এক জনের মৃত্যু হচ্ছে। ধূমপানের কারণে প্রতি পাঁচ জন পুরুষের এক জন এবং কুড়ি জন মহিলার এক জনের মৃত্যু হচ্ছে এ দেশে।
পরিসংখ্যানগুলো শুধু চমকে দেওয়া নয়, মানুষকে সচেতন করার জন্য। চিকিৎসকদের মতে, সচেতনতার প্রয়োজন তৃণমূল স্তর থেকেই। এ বার তাই পুজো দেখতে আসা দর্শকদের মনেও সচেতনতার চারা বুনতে ক্যানসারকে থিম করেছে ‘বাঘা যতীন বি অ্যান্ড সি দুর্গা পুজো কমিটি’। পুজো কমিটির তরফে ক্যানসার সচেতনতায় ইতিমধ্যেই বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হচ্ছে। পাশাপাশি ক্যানসার নিয়ে আলোচনা, হাঁটা প্রভৃতিও থাকছে।
আরও পড়ুন: রাজবাড়ির পুজো অথবা বাঁশের কেল্লা, শিল্প নির্দেশকের তৃপ্তির ঠিকানা
আরও পড়ুন: বারান্দা-মণ্ডপে মুক্তি রূপে দেবী
থিমের মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করতে এই পুজো কমিটি ‘বেঙ্গল অঙ্কোলজি ফাউন্ডেশন’কে পাশে পেয়েছে। তারা এই পুজোর থিম ইনপুট পার্টনার। ফাউন্ডেশনের তরফে ক্যানসার চিকিৎসক গৌতম মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সিগারেট, গুটখা, রঙিন খাবার, অ্যালকোহল কী ভাবে শরীরে ক্যানসারের থাবা বসায়। ব্রেস্ট ক্যানসার, কোলন ক্যানসার, লিভার, ফুসফুস বা মুখে ক্যানসারের ক্ষেত্রে কী কী উপসর্গ দেখে শুরুতেই সচেতন হবেন, সাধারণ মানুষকে সে সবই জানানো হবে প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুনের মাধ্যমে। যে হেতু ক্যানসার নিয়ে থিম তাই বিষয়টি যথাযথ উপস্থাপনের চেষ্টায় ওঁরা প্রতি মুহূর্তে যোগাযোগ রাখছেন আমাদের সঙ্গে।’’
পুজো কমিটির সদস্য সিদ্ধার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘তিনটি ধাপে তৈরি হচ্ছে গোটা মণ্ডপ। অন্য শিল্পীদের নিয়ে কয়েক হাজার বিভিন্ন আকারের কাঁকড়া তৈরি করছেন সব্যসাচী পাল তাঁর কারখানায়। সে সবই ছড়ানো থাকবে মণ্ডপের ভিতরে। এ ছাড়াও মানুষের বিভিন্ন মডেল তৈরি হচ্ছে। মণ্ডপে কোনও অসুর থাকবে না। সেই জায়গায় থাকছে বিশাল একটি কাঁকড়া। কারণ ক্যানসারই বর্তমান সমাজের মূল শত্রু। প্রতিমার হাতের ত্রিশূল তাকেই বধ করবে। মণ্ডপের ছাদের দিকে তাকালে দর্শকেরা দেখতে পাবেন কোষ আর তার ধাপে ধাপে পরিবর্তন। তাতে আলোর প্রতিফলন এক অন্য পরিবেশ তৈরি করবে।’’
পুজো কমিটির সদস্যদের কথায়, পুজো দেখতে আসা হাজার হাজার দর্শকের মধ্যে একশো জনও যদি এর পরে সচেতন হন, সেটাই হবে পুজোর সেরা প্রাপ্তি।