Durga Puja Celebration

ছক ভাঙা থিমে বাবা-মায়ের নিঃসঙ্গতার গল্প

চেনা ছকের গণ্ডি পেরিয়ে অন্য ভাবনায় মেতেছে উত্তর শহরতলির বরাহনগর, পানিহাটি, বেলঘরিয়ার তিন পুজো।

Advertisement

শান্তনু ঘোষ

শেষ আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০১৮ ১০:০০
Share:

বেলঘরিয়া মানসবাগ সর্বজনীনের মণ্ডপ। নিজস্ব চিত্র।

হোক না একটু অন্য রকম!

Advertisement

কোনও চেনা ছক নয়, পরিচিত জিনিসের আদলেও নয়। থিম-যুদ্ধের ময়দানে ওঁরা টিকে থাকতে চান একেবারে নিজেদের ভাবনায়। আর সেটাই এ বছর ওঁদের লক্ষ্য। তাতে এক দিকে যেমন রয়েছে সারা বছর ধরে শারীরিক ভাবে অক্ষম মানুষের পাশে থাকার চিন্তাভাবনা, তেমনই রয়েছে এইচআইভি পজিটিভ যুবকদের দিয়ে মণ্ডপ তৈরি করিয়ে তাঁদের সমাজের সামনে তুলে ধরার প্রচেষ্টা। এ সবের পাশাপাশি বর্তমান সমাজে সন্তানদের নিয়ে বৃদ্ধ বাবা-মায়ের প্রত্যাশা ভাঙার গল্পও রয়েছে।

ভিড় টানার প্রতিযোগিতায় বাঙালির পুজো এখন থিম-নির্ভর। কোথাও আবার স্বাদে বদল আনতে প্রতিমা সাজছে কয়েক কেজি সোনার গয়নায়। এ সবের মাঝেই চেনা ছকের গণ্ডি পেরিয়ে অন্য ভাবনায় মেতেছে উত্তর শহরতলির বরাহনগর, পানিহাটি, বেলঘরিয়ার তিন পুজো। পুজোকর্তাদের কথায়, ‘‘পুজো মানেই থিম, এটা তো স্বাভাবিক। কিন্তু তার মধ্যে একটু অন্য ধরনের চিন্তাভাবনা আনলে ক্ষতি কী?’’

Advertisement

বরাহনগরের ন’পাড়ায় দাদা-ভাই সঙ্ঘের পুজোর উদ্যোক্তারা জানাচ্ছেন, তাঁদের মণ্ডপের ভিতরে যেমন বসন্তের পরিবেশ তৈরি হচ্ছে, তেমনই সারা বছর ধরে বরাহনগরের ১০০ জন শারীরিক প্রতিবন্ধীর পাশে দাঁড়ানোর অঙ্গীকারও করছেন তাঁরা। পুজোর খরচ কেটে তৈরি তহবিল থেকেই প্রতি মাসে আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া শারীরিক প্রতিবন্ধীদের ৫০০ টাকা করে ভাতা দেওয়া হবে। পুজোর মুখ্য সংগঠক তথা এলাকার কাউন্সিলর অঞ্জন পালের কথায়, ‘‘শারীরিক সমস্যাযুক্ত মানুষগুলির জীবনেও বসন্ত নিয়ে আসাটা আমাদের লক্ষ্য। আর এই কাজে ন’পাড়ার আরও ৪৭টি ক্লাবকে আমরা পাশে পেয়েছি।’’

আরও পড়ুন: ‘মহিষাসুর’-এর সঙ্গেই সুখের সংসার ‘দুর্গা’র​

আরও পড়ুন: রেষারেষিটা বাস-ট্রেকারের দৌড়কেও লজ্জা দেবে​

এইচআইভি পজিটিভ মানুষরা যে ব্রাত্য নন, তারই বার্তা দিতে এ বার উদ্যোগী হয়েছে পানিহাটি শহিদ কলোনি। তাদের থিমের নাম ‘আত্মানং বৃদ্ধি’। উদ্যোক্তারা জানাচ্ছেন, মান ও হুঁশ নিয়ে হয় মানুষ। কিন্তু মানুষের সেই পরিচয়ই হারিয়ে যাচ্ছে। সেই আঙ্গিকেই থিম তৈরি করতে প্রায় ২৭ জন এইচআইভি পজিটিভ শিল্পীকে শামিল করেছে ওই সংগঠন। সম্পাদক তন্ময় দাস বলেন, ‘‘সমাজে এখনও অনেকে এইচআইভি পজিটিভদের ভাল চোখে দেখেন না। ওঁরাও নিজেদের গুটিয়ে রাখেন। এই পরিস্থিতির বদল ঘটানো দরকার। তাই ওঁদের দিয়ে থিম সাজানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে।’’

কিন্তু প্রথমে এই উদ্যোগে রাজি ছিলেন না হাবড়ার একটি সংগঠনের সদস্য ওই এইচআইভি পজিটিভ শিল্পীরা। উদ্যোক্তারা অনেক বোঝানোর পরে রাজি হন প্রায় ২৭ জন। তাঁদেরই এক জন গৌর বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘শরীরে এমন রোগ, সকলে তো আমাদের মানতে পারেন না। তাই নিজেদের সমাজ থেকে দূরেই রাখি। কিন্তু এখানে এসে মনে হচ্ছে, আমরাও মানুষ।’’

বড় হাতের আঙুলকে মুঠোর মধ্যে চেপে ধরেই বেড়ে ওঠে কচি হাত। সময়ের পরিবর্তনে অবশ্য বদলায় ছবি। অশক্ত শরীরে বড় হাত খোঁজে ফেলে আসা দিনের কচি হাতটাকে। কিন্তু সময় কেটে গেলেও কেউ আসে না। বরং হাসপাতালের বিছানার চাদর আঁকড়ে ধরে কারও আসার দিন গোনে অশক্ত হাতটা। বর্তমান সমাজে সন্তানদের কাছে পাওয়ার সে‌ই প্রত্যাশা ভাঙার ছবিই এ বার মডেলের মাধ্যমে তুলে ধরছে বেলঘরিয়া মানসবাগ সর্বজনীন। যেখানে থাকছে বাবা-মায়ের হাত ধরে সন্তানের পথ চলা থেকে তাঁদের বড় হওয়ার ছবি। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত দোতলা বাড়ির একতলার ঘুপচি ঘরে বৃদ্ধ বাবা-মায়ের মাথা গোঁজার ঠাঁই, হাসপাতালের বিছানায় তাঁদের নিঃসঙ্গতা— সবই দেখবেন দর্শনার্থীরা।

প্রথাগত থিম-যুদ্ধের ময়দানে ছক ভাঙা এই ভাবনা কতটা জনপ্রিয় হয়, সেটাই দেখার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন