তৈরি হচ্ছে দেবীমূর্তি।—ছবি: নির্মল বসু
রামকৃষ্ণের প্রত্যক্ষ শিষ্য এবং রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের প্রথম অধ্যক্ষ স্বামী ব্রহ্মানন্দের বাড়ির পুজো বলে কথা। বসিরহাটের শিকড়াকুলিন গ্রামে স্বামী ব্রহ্মানন্দের বাড়ির এই পুজো তিনশো বছর পার করে ফেলেছে। একই কাঠামোর উপরে পূজিত হন দেবীদুর্গা। নবমীতে দুর্গার সঙ্গে পূজিত হন নারায়ণ এবং করুণাময়ীও।
১৮৬৩ সালে বসিরহাটের শিকড়াকুলিন গ্রামে আনন্দমোহন ঘোষের পরিবারে জন্মেছিলেন রাখালচন্দ্র। সন্ন্যাস গ্রহণের পরে নাম হয় ব্রহ্মানন্দ। আশ্রমিকদের কাছে তিনি ছিলেন ‘রাখাল মহারাজ’। আর রামকৃষ্ণদেব তাঁকে নিজের মানসপুত্র হিসেবে পরিচয় দিতেন। এ হেন এক আধ্যাত্মিক ব্যক্তির বাড়ির দুর্গাপুজো নিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই মানুষের মধ্যে আগ্রহের শেষ নেই।
কথিত আছে, যে গাছের নীচে দেবীর বোধন হত, পুজোর দিনগুলিতে তারই নীচে ‘পুজো-পুজো’ খেলতেন বালক রাখালচন্দ্র। কখনও শ্যামাসঙ্গীত গেয়ে করুণাময়ীর মন্দির প্রদক্ষিণ করতেন। কখনও আবার পুজোমণ্ডপে দেবীমূর্তির দিকে তাকিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধ্যানমগ্ন হয়ে থাকতেন। ঘোষ পরিবারের প্রবীণদের কথায়, যত দূর জানা যায়, ১৫৮০ খ্রিস্টাব্দে সদানন্দ ঘোষ হুগলি জেলার আকনা অঞ্চল থেকে শিকড়াকুলিন গ্রামে এসে বসবাস শুরু করেন। সদানন্দের পঞ্চম পুরুষ দেবীদাস ঘোষ ১৭০০ খ্রিস্টাব্দে দেবী চণ্ডীর আরাধনায় ব্রতী হয়েছিলেন। ১৯৪৫ সালে পরিবারের এক শরিক প্রতিমার কাঠামোয় কিছু পরিবর্তন করেছিলেন। শোনা যায়, পরিবারের দু’জনের অকালমৃত্যুর পরে আর কেউ প্রতিমার কাঠামো বা পুজোর আচার-অনুষ্ঠানে কোনও পরিবর্তন আনার কথা ভাবেননি। বংশপরম্পরায় প্রতিমা গড়ে স্থানীয় চট্টোপাধ্যায় পরিবার।
আরও পড়ুন: শহর মেদিনীপুরের পুজোর আকাশে এ বার ‘মা’-এর ছড়াছড়ি!
আরও পড়ুন: ভিড়ে চোখ টানতে ভরসা বুটিকের শাড়ি
ঘোষবাড়িতে পুজোর শুরুতে দুর্গাঘট বসত মাটির আটচালা ঘরে। ১৮১০ সালে জমিদার কালীপ্রসাদ ঘোষ পাঁচ খিলানযুক্ত পুজোর দালান তৈরি করে দেন। সেই থেকে ওই দালানেই পুজোর আয়োজন হয়ে আসছে। পরিবারের নিয়ম মতো বোধনের দিন ‘নিদ্রাকলস’ বসানো থাকে দশমী পর্যন্ত। পরিবারের বিশ্বাস, পুজোর দিনগুলিতে দালান পাহারা দেয় নিদ্রাকলসটি। ঘোষ পরিবারে পাঁচ শরিক পালা করে প্রতিবছর পুজোর দায়িত্ব নেন। এক শরিক গ্রামেই থাতেন। তিনি দিলীপ ঘোষ। যে শরিকেরই পালা পড়ুক না কেন, গ্রামে থাকার সুবাদে তাঁর উপরেই পুজোর প্রাথমিক আয়োজনের ভার পড়ে। পুজোর দিনগুলিতে মেলাও বসে গ্রামে।