সংগৃহীত চিত্র।
আকাশে পেঁজা তুলোর মেঘের আনাগোনা, শিউলি ফুলের মিষ্টি গন্ধ আর ঢাকের বাদ্যি জানান দেয় উমা আসছেন। শুধু রূপ আর জৌলুস নয়, কলকাতার দুর্গাপুজো এখন গল্প বলে, সমাজের কথা শোনায়। সেই তালিকায় সামনের সারিতেই রয়েছে উত্তর কলকাতার অর্জুনপুর আমরা সবাই ক্লাব। ১৯৭৩ সালে পথ চলা শুরু করা এই ক্লাব প্রতি বছরই বিষয়ভিত্তিক পুজোর ভাবনা নিয়ে আসে। প্রতিবাদ, পারফরম্যান্স আর উৎসব—সব মিলিয়ে মণ্ডপ পায় এক ভিন্ন মাত্রা।
এ বারও তার ব্যতিক্রম নয়। ২০২৫-এর পুজোয় তাদের থিম— ‘মুখোমুখি’। দেবীর সঙ্গে সরাসরি দেখা, নিজের অন্তরের শক্তির মুখোমুখি হওয়া—এই ভাবনাতেই গড়ে উঠছে পুরো প্যান্ডেল। কেবল প্রদর্শনী নয়, দর্শনার্থীকে ভাবতে শেখানোই যেন মূল লক্ষ্য।
এই ভাবনাকে মূর্ত রূপ দিয়েছেন দুই শিল্পী - শোভিন ভট্টাচার্য এবং শম্পা ভট্টাচার্য। শোভিনের তৈরি ‘কাইনেটিক’ শক্তির স্টেইনলেস স্টিলের কাঠামো দর্শনার্থীদের থমকে যেতে বাধ্য করবে। অন্য দিকে, শম্পার প্রতিমা মাতৃশক্তির লালন ও শিক্ষার প্রতীক। তাঁদের মিলিত কাজ জানিয়ে দেবে—জ্ঞানই বদলায় সমাজ, আর শিক্ষা দেয় শক্তি।
অর্জুনপুর ক্লাবের দর্শন বরাবরই সহজ—প্যান্ডেল মানে কেবল দেখনদারি নয়, সক্রিয় অংশগ্রহণ। তাই প্রতি বছরই এখানে থিম শিল্পী, প্রতিমা শিল্পী, স্থানীয় মানুষ, সবাই মিলে তৈরি করেন এক জীবন্ত শিল্প মঞ্চ। গানের আসর, সরাসরি পরিবেশনা, আচার-অনুষ্ঠানে দর্শনার্থীরাও যেন হয়ে ওঠেন অংশীদার।
প্রতিমা আর তার সন্তানরা এখানে কেবল দেবতা নয়, যেন সমাজের ঐক্য, প্রতিবাদ আর দৃঢ়তার প্রতীক। তাই হয়তো ছোট পাড়া হলেও, অর্জুনপুরের প্যান্ডেল টানে সারা কলকাতাকে।
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।