Bangladesh Durga Puja

কলি কালে অশ্বমেধ যজ্ঞ 'করা যায় না' বলেই শারদীয়া দুর্গোৎসবের সূচনা করেন কংসনারায়ণ!

সেই আমলে মায়ের পুজোয় প্রায় ৮ থেকে ৯ লক্ষ টাকা খরচ করেছিলেন কংসনারায়ণ!

Advertisement

আনন্দ উৎসব ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০১ অক্টোবর ২০২৫ ১৭:০৮
Share:

সংগৃহীত চিত্র।

পড়শি রাষ্ট্র বাংলাদেশের রাজশাহী জেলার বাগমারা উপজেলার তাহেরপুর (পূর্ব নাম: তাহিরপুর) ঐতিহাসিক এক গৌরব বহন করে চলেছে। প্রচলিত বিশ্বাস এবং ঐতিহাসিক তথ্য অনুযায়ী, এই তাহেরপুরেই রাজা কংসনারায়ণ রায় বাহাদুর প্রথম আধুনিক ও জাঁকজমকপূর্ণ শারদীয়া দুর্গোৎসবের প্রচলন করেন। মূলত তাঁর হাত ধরেই এই উৎসব ব্যক্তিগত রাজবাড়ির আঙিনা পেরিয়ে বাংলায় এক সর্বজনীন রূপ লাভ করে বলে কয়েকটি সূত্রে দাবি করা হয়।

Advertisement

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ও সূচনা

সময়কাল ও প্রবর্তক:

Advertisement

রাজা কংসনারায়ণ রায় বাহাদুর, যিনি ছিলেন মুঘল সম্রাট আকবরের আমলে প্রভাবশালী রাজাদের মধ্যে অন্যতম, ১৫৮২ খ্রিস্টাব্দে (মতান্তরে ১৪৮০ খ্রিস্টাব্দ বা ৮৮৭ বঙ্গাব্দে) শরৎকালে এই দুর্গাপুজোর আয়োজন করেন।

অনেক ঐতিহাসিক মনে করেন, এটিই ছিল বাংলায় (অবিভক্ত) শারদীয়া দুর্গাপুজোর প্রথম আনুষ্ঠানিক সূচনা। যা রামচন্দ্রের 'অকাল বোধন'-এর প্রথা অনুসরণ করে কলি যুগে এক মহাযজ্ঞের রূপ নেয়।

মুঘল আমলে বাংলার হিন্দু সমাজে স্থায়ী অবদান রাখার মানসে রাজা কংসনারায়ণ এক মহাযজ্ঞ (অশ্বমেধ) করার পরিকল্পনা করেন। কিন্তু, তাঁর রাজসভার পণ্ডিত রমেশ শাস্ত্রী তাঁকে বলেন, কলি যুগে অশ্বমেধ বা রাজসূয় যজ্ঞের চেয়ে দুর্গোৎসবই অধিক উপযুক্ত। কারণ এই যজ্ঞে সব যজ্ঞের ফল লাভ হয় এবং এটি সকল জাতি ও লোকেই করতে পারে। অনুমান করা হয়, পণ্ডিত রমেশ শাস্ত্রীর সেই বিধানেই তৈরি হয় আধুনিক দুর্গোৎসব পদ্ধতি।

প্রথম পুজোর জাঁকজমক:

কথিত আছে, রাজা কংসনারায়ণ প্রথম পুজোর আয়োজনে প্রায় ৯ লক্ষ টাকা (মতান্তরে ৮ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা) ব্যয় করেছিলেন! যা সেই সময় ছিল অকল্পনীয়! বর্তমান হিসাবে এই অর্থের পরিমাণ কয়েকশো কোটি টাকারও বেশি হতে পারে!

পুজোটি হয়েছিল তাহেরপুর রাজবাড়ি সংলগ্ন বারনই নদীর পূর্ব তীরে রামরামা গ্রামের দুর্গা মন্দিরে।

পুজোয় দেবী প্রতিমার সমস্ত গয়না সোনা ও মণি-মুক্তো দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল!

উৎসবের আয়োজন ছিল ব্যাপক। পুজোর ক'দিন ১০৮টি ঢাক বাজানো হতো। যে গ্রাম পর্যন্ত এই বাজনার আওয়াজ পৌঁছাত, সেই সব এলাকার মানুষের বাড়িতে উনুন জ্বালানো নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়! বদলে সকলের খাবারের ব্যবস্থা হত রাজবাড়িতে। বাইজি নাচ, গান-বাজনা লেগে থাকত পুজোর দিনগুলিতে।

মন্দির প্রতিষ্ঠা:

রাজা কংসনারায়ণ পুজোর সূচনা করার পর রাজবাড়ি সংলগ্ন এলাকায় দুর্গা মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন। এটি রাজা কংসনারায়ণের মন্দির নামেও পরিচিত।

ঐতিহাসিক এই স্থানে রাজা কংসনারায়ণ আরও তিনটি মন্দির নির্মাণ করিয়েছিলেন — গোবিন্দ মন্দির, শিব মন্দির এবং কালী মন্দির।

প্রথম দুর্গাপুজোর স্থানটি কালক্রমে ভগ্নদশাপ্রাপ্ত হলেও স্থানীয় উদ্যোগে এবং পৃষ্ঠপোষকতার মাধ্যমে সেখানে এখনও দুর্গাপুজো অনুষ্ঠিত হয়।

পণ্ডিত মহলের একাংশ মনে করে, রাজা কংসনারায়ণের উদ্যোগই বাংলার শারদোৎসব এক নতুন মাত্রা পায় এবং ধীরে ধীরে তা এই উপমহাদেশের অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসবে পরিণত হয়।

‘আনন্দ উৎসব ২০২৫’-এর সাফল্যের নেপথ্যে রয়েছেন একাধিক সহযোগী। প্রেজ়েন্টিং পার্টনার ‘মারুতি সুজ়ুকি অ্যারেনা’। অন্যান্য সহযোগীরা হলেন ওয়েডিং পার্টনার ‘এবিপি ওয়ানস্টপ ওয়েডিং’, ফ্যাশন পার্টনার ‘কসমো বাজ়ার’, নলেজ পার্টনার ‘টেকনো ইন্ডিয়া ইউনিভার্সিটি’, ব্যাঙ্কিং পার্টনার ‘ইউনিয়ন ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া’, কমফোর্ট পার্টনার ‘কার্লন’।

এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement