প্রতীকী চিত্র।
চন্দননগরের অলিতে-গলিতে এখন উৎসবের রং। কিন্তু কুণ্ডুঘাট দালান সর্বজনীন জগদ্ধাত্রী পুজো কমিটির এ বারের আয়োজন যেন শুধু আলোর রোশনাই নয়। এ হল স্মৃতির মায়া আর জ্ঞানের আলোয় এক মণ্ডপ-শোভা। ১৯৫০ সালে যে কমিটি শুধু দুর্গা দালান রূপে যাত্রা শুরু করেছিল, ২০০০ সাল থেকে তারা জগদ্ধাত্রী পুজোতেও স্বতন্ত্র এক পরিচয় তৈরি করেছে। তাদের এই দীর্ঘ যাত্রাপথই এক ইতিহাস! আর সেই ঐতিহ্যকে সঙ্গে নিয়েই এ বারের থিম— ‘বর্ণপরিচয়’।
মণ্ডপে ঢুকলেই মন চলে যাবে এক প্রাচীন পাঠশালার আবহে। এ যেন এক বিশাল গ্রন্থালয়! মণ্ডপসজ্জায় অজস্র বইয়ের ব্যবহার, পুরনো ছাপাখানার যন্ত্রপাতির উপস্থিতি—সব মিলিয়ে এক অন্য স্বাদের পরিবেশ। এখানকার শিল্পকর্ম যেন নীরবে কিছু বলতে চায়, স্মৃতির সুতোয় বেঁধে দেয় মনকে। কারিগর মহাদেব পাল ও আকাশ পালের হাতের ছোঁয়ায় দেবী এখানে সুউচ্চ, হলুদ শাড়িতে ডাকের সাজে অপরূপা। দেবীর মাথার উপরে স্থান পেয়েছেন স্বয়ং দেবাদিদেব মহাদেব। এমন শৈল্পিক বুনন আর ভক্তির এমন যুগলবন্দি সত্যি বিরল।
তবে এই কমিটির আকর্ষণ শুধু মণ্ডপে সীমাবদ্ধ নয়। ‘আর্টিস্ট্রি ইন ডেকোরেশন, ডিভোশন ইন এভরি ডিটেল’—এই মন্ত্রে বিশ্বাসী উদ্যোক্তাদের প্রতিটি আচারে রয়েছে নিষ্ঠা। প্রথা মেনে প্রতি বছর ঘাটে স্নানের সময়ে দেবীকে ‘স্টিল পালকি’তে বহন করে নিয়ে যাওয়া হয়। আর পুজোকে আলাদা মাত্রা দেয় তাদের ‘ধামসা মাদল’-এর বাদ্যি। লোকসঙ্গীতের এই ঐতিহ্যবাহী সুর যখন পুজোর আবহে মেশে তখন উৎসবের রেশ যেন আরও গভীর হয়ে ওঠে।
আর উৎসব তো কেবল আনন্দ নয়, সেবারও অঙ্গ। রক্তদান শিবিরের মতো সামাজিক কাজে সারা বছর এই কমিটির উদ্যোগ তাই মানবিকতার এক উজ্জ্বল স্বাক্ষর। এই পুজো কেবল প্রতিমা দর্শন নয়, এক আবেগ, এক ভালবাসার গল্প— যা চন্দননগরের সংস্কৃতিকে প্রতি বছরই আরও বেশি সমৃদ্ধ করে তোলে।
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।