সংগৃহীত চিত্র।
আজ নবমী। চন্দননগর-সহ বাংলার অন্যান্য় প্রান্তের মতো নদিয়ার কৃষ্ণনগরেও ধুমধাম করে দেবী দুর্গার আর এক রূপ মা জগদ্ধাত্রীর পুজো চলছে। কৃষ্ণনগরের জগদ্ধাত্রী পুজোর ইতিহাস শতাব্দী প্রাচীন। যার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে এখানকার রাজবাড়ি এবং মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায় স্বয়ং। তবে, বর্তমানে এই অঞ্চলে কেবল মাত্র রাজবাড়ি বা অন্যান্য পরিবারের পারিবারিক পুজোই নয়, সেই সঙ্গে অসংখ্য নজরকাড়া বারোয়ারি পুজোও অনুষ্ঠিত হয়। যাদের মধ্যে অন্যতম - গোলাপট্টি বারোয়ারি।
থিম ভাবনা ও তা রূপায়নে গোলাপট্টি বারোয়ারির এ বারের আয়োজন সকলকে যেমন চমকে দিয়েছে, তেমনই প্রত্যেকটি বাঙালি হৃদয়কে অনুপ্রাণিত করেছে। এ বছরের জগদ্ধাত্রী পুজোর মণ্ডপ তারা সাজিয়েছে বাংলা ভাষা ও বাংলা সাহিত্যকে আশ্রয় করে।
আজ, সারা পৃথিবীতে আন্তর্জাতিক ভাষা দিবস পালন করা হয় বাংলা ভাষা তথা সমস্ত মাতৃভাষার প্রতি সম্মান জানিয়ে। এই স্বীকৃতি এমনই এমনই আসেনি। তার জন্য অনেক রক্ত ঝরাতে হয়েছে। অথচ, বর্তমানে কেবল রাজনীতির স্বার্থে সেই বাংলা ভাষাকেই যেন ফের এক বার শ্বাসরোধ করে মুছে ফেলার অপচেষ্টা করা হচ্ছে! গোলাপট্টি বারোয়ারির পুজো মণ্ডপ সেই অপচেষ্টারই শৈল্পিক প্রতিবাদ।
মণ্ডপের অন্দর সজ্জায় বাঙালিয়ানার ষোলোয়ানা প্রদর্শন সত্যিই প্রশংসনীয়। সেখানে গড়ে তোলা হয়েছে - সাবেকি ধাঁচে তৈরি পুরোনো দিনের বাঙালি বাড়ির অন্দরমহল। যেখানে দেখা মিলবে আগেকার দিনের কড়িকাঠ থেকে শুরু করে দরজা, জানলা, আসবাব, এমনকী সামিয়ানার। মণ্ডপের ভিতর ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর থেকে শুরু করে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কবি কাজী নজরুল ইসলাম, সাহিত্যিক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্য়ায় প্রমুখদের সম্মান জ্ঞাপন করা হয়েছে।
পুরো মণ্ডপ সাজানো হয়েছে - বাংলা হরফ, বাংলা ভাষায় লেখা স্লোগান, কবিতার লাইন প্রভৃতির মাধ্যমে। দেওয়াল চিত্র থেকে শুরু করে নানা ধরনের ইনস্টলেশনের মাধ্যমে উঠে এসেছে ২১শে ফেব্রুয়ারির ইতিহাস, ধ্রুপদী ভাষা হিসাবে বাংলার স্বীকৃতি, কিংবা সত্যজিতের কালজয়ী ছবির কোনও দৃশ্য! তাই, কৃষ্ণনগরে জগদ্ধাত্রী ঠাকুর দেখতে এলে এই মণ্ডপে এক বার ঘুরে যেতেই হবে!
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।