প্রতীকী চিত্র।
একটা সময় ছিল, যখন পেল্লায় অ্যান্টেনা ছাড়া টিভি দেখার উপায় ছিল না। সেই অ্যান্টেনায় ঝামেলা ছিল বিস্তর। কিন্তু, গত কয়েক দশকে টিভি দেখার প্রযুক্তি ও ব্যববস্থাপনা আমূল বদলে গিয়েছে। সাধারণ অ্যান্টেনা আজ অতীত। তার জায়গায় একে একে এসেছে ডিশ অ্যান্টেনা, কেবল কানেকশন এবং বর্তমানে সেট-টপ বক্স। কিন্তু, আজকাল সেট-টপ বক্সও বহু মানুষের পছন্দ হচ্ছে না। বদলে তাঁরা বেছে নিচ্ছেন স্ট্রিমিং ডিভাইস। কী এই স্ট্রিমিং ডিভাইস? সেট-টপ বক্সের সঙ্গে তার ফারাক কী? এর বাড়তি সুবিধাই বা কী কী? আসুন, জেনে নেওয়ার চেষ্টা করি।
স্ট্রিমিং ডিভাইস কী?
স্ট্রিমিং ডিভাইস হল, একটি ছোট হার্ডওয়্যার - যা আপনার সাধারণ টেলিভিশনকে স্মার্ট টিভিতে রূপান্তরিত করতে পারে। এই ডিভাইসটি ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিভিন্ন ভিডিয়ো, চলচ্চিত্র, টিভি শো এবং অন্যান্য ডিজিট্যাল কন্টেন্ট সরাসরি আপনার টিভিতে দেখার সুবিধা দেয়। এটি ওয়াইফাই বা ইথারনেট কানেকশনের মাধ্যমে ইন্টারনেটের সঙ্গে যুক্ত হয় এবং বিভিন্ন স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম (যেমন - নেটফ্লিক্স, অ্যামাজন প্রাইম ভিডিয়ো, ইউটিউব, হটস্টার ইত্যাদি) থেকে কন্টেন্ট স্ট্রিম করে।
টেলিভিশনের সেট-টপ বক্সের সঙ্গে এর পার্থক্য কী কী?
কার্যপ্রণালী:
সেট-টপ বক্সগুলি সাধারণত কেবল বা স্যাটেলাইট সিগন্যাল গ্রহণ করে এবং তা ডিকোড করে টেলিভিশনে তা সম্প্রচার করে। এর প্রধান উদ্দেশ্য হল, নির্দিষ্ট চ্যানেলগুলি দেখানো। অন্যদিকে, স্ট্রিমিং ডিভাইসগুলি ইন্টারনেটের মাধ্যমে ভিডিয়ো ডেটা স্ট্রিম করে - যা ব্যবহারকারীকে নির্দিষ্ট চ্যানেলগুলির পরিবর্তে বিভিন্ন স্ট্রিমিং অ্যাপের কন্টেন্ট দেখার সুযোগ করে দেয়।
কন্টেন্টের উৎস:
সেট-টপ বক্সের কন্টেন্ট সাধারণত কেবল বা ডিটিএইচ সরবরাহকারীর নির্ধারিত প্যাকেজ থেকে আসে। এর ফলে ব্যবহারকারী কেবলমাত্র সেই নির্দিষ্ট চ্যানেলগুলিই দেখতে পারেন। স্ট্রিমিং ডিভাইসের ক্ষেত্রে কন্টেন্টের উৎস হল, ইন্টারনেটভিত্তিক বিভিন্ন স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম। তাই, ব্যবহারকারী নিজের পছন্দ অনুযায়ী যেকোনও প্ল্যাটফর্মের কন্টেন্ট দেখতে পারেন।
স্বাধীনতা:
সেট-টপ বক্সে কন্টেন্ট দেখার সময় নির্ধারণ করে দেওয়া থাকে এবং চ্যানেল পরিবর্তন ছাড়া করা অন্য কোনও স্বাধীনতা থাকে না। স্ট্রিমিং ডিভাইসে দর্শক নিজের ইচ্ছা মতো যেকোনও সময়ে যে কোনও কন্টেন্ট দেখতে পারেন। এটি 'ভিডিয়ো অন ডিমান্ড' পরিষেবা প্রদান করে।
ইন্টারফেস ও অ্যাপ্লিকেশন:
সেট-টপ বক্সে সীমিত সংখ্যক অ্যাপ বা পরিষেবা থাকতে পারে। কিন্তু, একটি স্ট্রিমিং ডিভাইসে গুগল প্লে স্টোর বা অ্যাপ স্টোরের মতো প্ল্যাটফর্ম থেকে বিভিন্ন ধরনের অ্যাপ ডাউনলোড ও ব্যবহার করা যায়।
এতে কী কী ধরনের অনুষ্ঠান দেখা যায়?
স্ট্রিমিং ডিভাইসের মাধ্যমে আপনি বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান দেখতে পারেন। যার মধ্যে রয়েছে:
চলচ্চিত্র ও টিভি সিরিজ:
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক এবং ভারতীয় প্ল্যাটফর্মের (যেমন - নেটফ্লিক্স, অ্যামাজন প্রাইম ভিডিয়ো, জিও হটস্টার, জিফাইভ, সোনিলাইভ প্রভৃতি) নতুন এবং পুরোনো চলচ্চিত্র ও সিরিজ।
ওয়েব সিরিজ:
বর্তমান সময়ে অত্যন্ত জনপ্রিয় বিভিন্ন ওয়েব সিরিজ।
লাইভ স্পোর্টস:
অনেক স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মে লাইভ ক্রিকেট, ফুটবল এবং অন্যান্য খেলা দেখা যায়।
বাচ্চাদের জন্য প্রোগ্রাম:
বিভিন্ন কার্টুন ও শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান।
শিক্ষামূলক ভিডিয়ো:
ইউটিউব এবং অন্যান্য প্ল্যাটফর্মের শিক্ষামূলক কন্টেন্ট।
খবর:
বিভিন্ন নিউজ চ্যানেল এবং লাইভ সংবাদ।
দর্শক সাধারণ টিভির তুলনায় অতিরিক্ত কী কী সুবিধা বা স্বাধীনতা পেতে পারেন?
স্ট্রিমিং ডিভাইস ব্যবহার করে দর্শক কিছু বিশেষ সুবিধা এবং স্বাধীনতা উপভোগ করেন। যেমন -
সময়ের স্বাধীনতা:
সাধারণ টিভির মতো নির্দিষ্ট সময়ে অনুষ্ঠান দেখার বাধ্যবাধকতা থাকে না। দর্শক যেকোনও সময়, যেকোনও অনুষ্ঠান দেখতে পারেন।
পছন্দ মতো কন্টেন্ট:
চ্যানেল পরিবর্তনের পরিবর্তে দর্শক নিজের রুচি অনুযায়ী যেকোনও কন্টেন্ট খুঁজে নিতে এবং উপভোগ করতে পারেন।
বিজ্ঞাপনহীন অভিজ্ঞতা:
অনেক স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম সাবস্ক্রিপশনের মাধ্যমে বিজ্ঞাপনমুক্ত কন্টেন্ট দেখার সুবিধা দেয়।
সহজ ব্যবহার:
স্মার্টফোন বা ট্যাবলেটের মতো সহজ ইন্টারফেস এবং ভয়েস কমান্ডের মাধ্যমে কন্টেন্ট খোঁজা বা চালানো যায়।
উন্নত ছবির মান:
অনেক স্ট্রিমিং ডিভাইস ৪কে, এইচডিআর এবং ডলবি ভিশন সাপোর্ট করে। যা সাধারণ কেবল টিভির তুলনায় অনেক উন্নত ছবির গুণমান নিশ্চিত করে।
ভারতের বাজারে সেরা স্ট্রিমিং ডিভাইস কোনটি?
ভারতের বাজারে বর্তমানে বেশ কিছু জনপ্রিয় স্ট্রিমিং ডিভাইস পাওয়া যায়। প্রতিটি ডিভাইসের নিজস্ব কিছু সুবিধা এবং অসুবিধা আছে। এর মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্যগুলি হল -
অ্যামাজন ফায়ার টিভি স্টিক:
এটি ভারতের বাজারে সবচেয়ে জনপ্রিয় স্ট্রিমিং ডিভাইসগুলির মধ্যে অন্যতম। এটি ব্যবহার করা সহজ, দামে সাশ্রয়ী এবং অ্যালেক্সা ভয়েস রিমোটের মাধ্যমে কন্টেন্ট খোঁজা যায়।
গুগল ক্রোমকাস্ট উইথ গুগল টিভি:
এটি গুগল দ্বারা তৈরি একটি ডিভাইস। এর মাধ্যমে গুগল টিভি ইন্টারফেস ব্যবহার করা যায় - যেখানে বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মের কন্টেন্ট একসঙ্গে দেখা যায়। এটিতে গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট এবং ক্রোমকাস্টের মাধ্যমে ফোন থেকে কন্টেন্ট কাস্ট করার সুবিধা রয়েছে।
এমআই বক্স ৪কে:
এটি শাওমি সংস্থা দ্বারা তৈরি একটি স্ট্রিমিং ডিভাইস। এটি ৪কে রেজোলিউশন এবং অ্যানড্রয়েড টিভি ইন্টারফেস সাপোর্ট করে - যা বিভিন্ন অ্যাপ ব্যবহারের সুবিধা দেয়।
এর মধ্যে কোনটি সেরা, তা নির্ভর করে দর্শকের প্রয়োজন এবং বাজেটের ওপর। যাঁরা সহজে ডিভাইস ব্যবহার এবং অ্যালেক্সার সুবিধা চান, তাঁদের জন্য অ্যামাজন ফায়ার টিভি স্টিক ভালো। যাঁরা গুগল ইকোসিস্টেমের সঙ্গে পরিচিত এবং সব অ্যাপের কন্টেন্ট এক জায়গায় দেখতে চান, তাঁদের জন্য গুগল ক্রোমকাস্ট ভালো বিকল্প হতে পারে।
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।