Must-visit Places Near Kolkata

পুজোয় কলকাতা থেকে কাছাকাছির মধ্যে ঘুরতে যেতে চান? ৫টি জায়গার সন্ধান রইল এখানে

পুজোয় দূরে বেড়াতে যাওয়ার প্ল্যান নেই? আবার কলকাতাতেও থাকতে চান না? তা হলে ঘুরে আসতে পারেন এই ৫টি জায়গার কোনও একটি থেকে।

Advertisement

আনন্দ উৎসব ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২১ অগস্ট ২০২৫ ১৩:৫৮
Share:

প্রতীকী চিত্র

পুজোর সময় কলকাতার ভিড় থেকে একটু দূরে, শান্ত পরিবেশে কয়েকটা দিন কাটাতে অনেকেই পছন্দ করেন। কলকাতা থেকে কাছেপিঠে এমন অনেক সুন্দর জায়গা আছে, যা এক-দু'দিনের জন্য ঘুরে আসার পক্ষে এক পারফেক্ট। এখানে এমনই পাঁচটি জায়গার কথা আলোচনা করা হল। জায়গাগুলি আপনার চেনা। তবু পুজোর সময়ে এখানে গেলে অন্য রকম আমেজ পেতে পারেন।

Advertisement

১. শান্তিনিকেতন, বীরভূম

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত এই জায়গাটি এক অন্যরকম ভাললাগার অনুভূতি এনে দেয়। সবুজ আর লাল মাটির এই শান্ত অঞ্চলটি বাঙালির সংস্কৃতি, শিল্পকলা এবং ঐতিহ্যের প্রতীক।

Advertisement

যাবেন কীভাবে: কলকাতা থেকে গাড়ি বা বাসে শান্তিনিকেতনের দূরত্ব প্রায় ১৬০-১৭০ কিলোমিটার। নিজের গাড়ি বা ভাড়ার গাড়িতে যাওয়া সবচেয়ে সুবিধাজনক। এছাড়া, কলকাতা থেকে নিয়মিত বাস পরিষেবাও রয়েছে। ট্রেনে যেতে চাইলে হাওড়া বা শিয়ালদহ থেকে বোলপুর স্টেশনে নেমে সেখান থেকে অটো বা টোটো ভাড়া করে শান্তিনিকেতন যাওয়া যায়। ট্রেনের সময় লাগে প্রায় ২.৫ থেকে ৩ ঘণ্টা।

কী কী দেখা যায়: এখানকার প্রধান আকর্ষণগুলি হল– বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, কলা ভবন, উত্তরায়ণ কমপ্লেক্স, শান্তিনিকেতনী হস্তশিল্পের বাজার বা শনিবারের হাট, খোয়াই নদীর ধারের সুন্দর শান্ত বনভূমি।

থাকার ব্যবস্থা: শান্তিনিকেতনে থাকা-খাওয়ার জন্য সরকারি ও বেসরকারি অসংখ্য হোটেল, রিসর্ট এবং হোমস্টে রয়েছে। পুজোর সময়ে ভিড়ের চাপ থাকায় আগে থেকে বুকিং করা জরুরি। এখানকার রেস্তোরাঁগুলিতে বাঙালি খাবার পাওয়া যায়।

২. বিষ্ণুপুর, বাঁকুড়া

বাংলার টেরাকোটার শহর নামে পরিচিত বিষ্ণুপুর এক ঐতিহাসিক স্থান, যা মল্ল রাজাদের শিল্পকলার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এখানকার প্রাচীন মন্দিরগুলি পর্যটকদের মুগ্ধ করে তোলে।

যাবেন কীভাবে: কলকাতা থেকে সড়কপথে বিষ্ণুপুরের দূরত্ব প্রায় ১৫০ কিলোমিটার। নিজের গাড়ি বা বাসে সহজেই যাওয়া যায়। এছাড়া, হাওড়া থেকে ট্রেনে বিষ্ণুপুর জংশনে নেমে টোটো ভাড়া করে আশেপাশে ঘোরার ব্যবস্থা আছে।

কী কী দেখা যায়: এখানে বহু পুরনো টেরাকোটার মন্দির রয়েছে, যেমন - জোড় বাংলা মন্দির, রস মঞ্চ, শ্যাম রায় মন্দির, মদন মোহন মন্দির, লালজি মন্দির। এছাড়াও মল্ল রাজাদের পুরনো দুর্গ এবং গুমঘর দেখার মতো।

থাকার ব্যবস্থা: বিষ্ণুপুরে থাকার জন্য সরকারি লজ ও বিভিন্ন মানের হোটেল রয়েছে। পুজোর সময় আগে থেকে বুকিং করলে ভাল হয়। এখানকার স্থানীয় হস্তশিল্প, যেমন - বালুচরি শাড়ি এবং ডোকরার কাজের জন্য বিখ্যাত।

৩. সুন্দরবন, দক্ষিণ ২৪ পরগনা

যদি পুজোর ছুটিতে প্রকৃতির ভিতর হারিয়ে যেতে চান, তাহলে সুন্দরবন আপনার জন্য উপযুক্ত জায়গা। ম্যানগ্রোভের জঙ্গল, নদ-নদী, আর বাঘ দেখার সম্ভাবনা– সব মিলিয়ে এক রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা।

যাবেন কীভাবে: কলকাতা থেকে সুন্দরবন যাওয়ার জন্য সাধারণত ট্যুর প্যাকেজ বুক করা হয়। প্যাকেজে কলকাতা থেকে বাসে বা গাড়িতে গোদখালি বা সোনাখালি পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে লঞ্চ বা নৌকায় করে সুন্দরবনের ভিতরে যাওয়া হয়। নিজে ব্যবস্থা করে যেতে চাইলে শিয়ালদহ থেকে ক্যানিং পর্যন্ত ট্রেনে এবং সেখান থেকে বাস বা অটোতে সোনাখালি যাওয়া যায়।

কী কী দেখা যায়: সুন্দরবনের মূল আকর্ষণ হল ম্যানগ্রোভের জঙ্গল, নদী পথে ভ্রমণ, ওয়াচ টাওয়ার (যেমন সজনেখালি, সুধন্যখালি), পাখিরালয় এবং অবশ্যই রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার দেখার সম্ভাবনা। কুমির, হরিণ, বিভিন্ন প্রজাতির পাখিও দেখা যায়।

থাকার ব্যবস্থা: সুন্দরবনে থাকার জন্য বিভিন্ন ইকো-রিসর্ট এবং ট্যুরিস্ট লজ রয়েছে। নিরাপত্তা এবং সুবিধার জন্য সাধারণত প্যাকেজ ট্যুর বেছে নেন সকলে। প্যাকেজে সাধারণত থাকা, খাওয়া এবং যাতায়াতের সব ব্যবস্থা করা থাকে।

৪. মন্দারমণি, পূর্ব মেদিনীপুর

পুজোর ছুটিতে সমুদ্রের কাছে যেতে চাইলে মন্দারমণি এক অসাধারণ বিকল্প। দীঘা, তাজপুর থেকে তুলনামূলকভাবে কম ভিড়ের এই সৈকতটি তার শান্ত পরিবেশের জন্য পরিচিত।

যাবেন কীভাবে: কলকাতা থেকে সড়কপথে মন্দারমণির দূরত্ব প্রায় ১৮০ কিলোমিটার। নিজের গাড়ি বা ভাড়ার গাড়িতে যাওয়া সবচেয়ে ভাল। এছাড়া, ধর্মতলা থেকে বাস পরিষেবাও রয়েছে। ট্রেনে যেতে চাইলে হাওড়া থেকে কাঁথি বা দীঘা স্টেশনে নেমে সেখান থেকে গাড়ি ভাড়া করে মন্দারমণি পৌঁছোনো যায়।

কী কী দেখা যায়: এখানকার প্রধান আকর্ষণ হল বিশাল এবং শান্ত সমুদ্র সৈকত। স্থানীয় জেলেদের জীবনযাত্রা দেখার সুযোগ পাওয়া যায় এখানে। তাঁদের সংস্কৃতি সম্পর্কেও জানা যায়। এছাড়া, লাল কাঁকড়া দেখা, সমুদ্রের ধারে বসে সূর্যাস্ত দেখা এবং ওয়াটার স্পোর্টসের ব্যবস্থা রয়েছে।

থাকার ব্যবস্থা: মন্দারমণির সমুদ্র সৈকতের পাশে অসংখ্য রিসর্ট এবং হোটেল রয়েছে। পুজোর সময়ে ভিড় থাকার কারণে আগে থেকে বুকিং করা প্রয়োজন। বেশিরভাগ রিসর্টে ভাল মানের খাবার এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায়।

৫. চন্দ্রকেতুগড়, উত্তর ২৪ পরগনা

ইতিহাসপ্রেমীদের জন্য এটি এক অনন্য স্থান। কলকাতা থেকে মাত্র ৫০ কিলোমিটার দূরে এই প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানে প্রাচীন বাংলার এক হারিয়ে যাওয়া শহরের ধ্বংসাবশেষ লুকিয়ে আছে।

যাবেন কীভাবে: কলকাতা থেকে সড়কপথে বাসে বা ব্যক্তিগত গাড়িতে চন্দ্রকেতুগড়ে পৌঁছানো যায়। বেড়াচাঁপার কাছে এই জায়গাটি। শিয়ালদহ থেকে ট্রেনেও যাওয়া যায়।

কী কী দেখা যায়: এখানে একটি বিশাল মাটির ঢিবি আছে, যেখানে খননকার্য চালিয়ে অনেক প্রাচীন নিদর্শন পাওয়া গিয়েছে। এই স্থানটি প্রত্নতত্ত্বের জন্য বিখ্যাত। এখানে কোনও নির্দিষ্ট দর্শনীয় স্থান না থাকলেও, এই জায়গার ইতিহাস এবং প্রত্নতাত্ত্বিক গুরুত্ব ভাল ভাবেই টের পাওয়া যায়। এখানকার স্থানীয় মিউজিয়ামে অনেক নিদর্শন সংরক্ষিত আছে।

থাকার ব্যবস্থা: এটি সাধারণত একদিনের ভ্রমণের জন্য উপযুক্ত। এখানে থাকার জন্য তেমন কোনও ব্যবস্থা নেই, তবে কাছাকাছি ছোটখাটো হোটেলে থাকা যায়। খাবার ও জলের ব্যবস্থা সঙ্গে নিয়ে যাওয়া ভাল।

এই পাঁচটি স্থানই পুজোর ছুটিতে কলকাতা থেকে কাছেপিঠে বেড়াতে যাওয়ার জন্য আদর্শ। আপনার পছন্দ এবং সময় অনুযায়ী যে কোনও একটি স্থান বেছে নিয়ে পুজোর ছুটিকে আরও আনন্দময় করে তুলতে পারেন।

এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement