Durga Puja Vacation

হাজার নিষেধেই দিন কাটে ঝাড়গ্রাম রাজবাড়ির, সংগ্রহশালা চায় পরিবার, হবে কি সেই ইচ্ছেপূরণ?

১৯৩১ সালে পুরানো রাজবাড়িকে ঘিরে এই নতুন রাজবাড়ি গড়ে ওঠে। ৭০ বিঘা জমির ওপর তিন গম্বুজ বিশিষ্ট এই রাজবাড়িতে ইউরোপীয় ও মোঘল স্থাপত্যের ছাপ স্পষ্ট।

Advertisement

আনন্দ উৎসব ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৩:৩৭
Share:

ঝাড়গ্রাম রাজবাড়ি। সবুজে ঘেরা নিরিবিলি পথ আর জংলা ফুলের গন্ধ নিয়ে যে প্রাসাদ হয়ে উঠতেই পারে আপনার ছুটির ছুটের এক গন্তব্য।

Advertisement

রাজবাড়িতে ২০১৮ সালের পর থেকে সাধারণের প্রবেশ একেবারে নিষিদ্ধ। আপনি চাইলে বাইরে থেকে রাজবাড়ির ছবি তুলতে পারেন। ব্যস! এটুকুই। ভিতরে ঘুরে দেখতে চাইলে আপনাকে বিশেষ অনুমতি নিতে হবে অথবা হেরিটেজ হোটেলে ঘর ভাড়া নিয়ে তবেই যেতে হবে। এই রাজবাড়ি পুরোপুরি ভাবে 'ব্যক্তিগত সম্পত্তি'। আশ্চর্যের বিষয়, আজও রাজবাড়িতে নেই কোনও সংগ্রহশালা।

কিন্তু কেন ঝাড়গ্রাম রাজবাড়িতে প্রবেশে এমন হাজারো নিষেধাজ্ঞা? কেনই বা আজও গড়ে ওঠেনি সংগ্রহশালা?

Advertisement

একান্ত আলাপচারিতায় রাজবাড়ির উত্তরসূরি বিক্রমাদিত্য মল্লদেব জানালেন রাজবাড়ি ঘিরে অজস্র কাহিনি। উঠে এল নানা সমস্যার কথাও।

বিক্রমাদিত্য মল্লদেব বলেন, "আমরা পৃথ্বীরাজ চৌহানের বংশধর। মাল রাজাদের হারিয়ে রাজা মান সিংহের বিশ্বস্ত কর্মকর্তা সর্বেশ্বর সিংহ চৌহান এই ঝাড়্গ্রাম এলাকার প্রবর্তন করেন। তাঁর পর থেকে একে একে আঠারো জন রাজা রাজত্ব করেছেন। সতেরোতম রাজা নরসিংহ মল্লদেব ১৯৩১ সালে পুরানো রাজবাড়িকে ঘিরে এই নতুন রাজবাড়ি বানান। ৭০ বিঘা জমির ওপর তিন গম্বুজ বিশিষ্ট এই রাজবাড়িতে ইউরোপীয় ও মোঘল স্থাপত্যের ছাপ স্পষ্ট। "

ঝাড়গ্রাম রাজবাড়ির সিংহদ্বার পেরিয়ে ভিতরে ঢোকার পরে বাঁদিকে রয়েছে আউট হাউস।

এই আউট হাউসে একসময় লর্ড ওয়েলিংটন, প্রফুল্ল ঘোষ, বিধান রায়, লাল বাহাদুর শাস্ত্রী -কে আসেননি! শুধু তা-ই নয়, এই রাজবাড়িতে থেকেছেন উত্তম কুমার। 'বাঘ বন্দী খেলা', ফেলুদা কাহিনি- 'টিনটোরেটোর যীশু' থেকে হাল আমলের 'দুর্গেশগড়ের গুপ্তধনে'-- সবেতেই দেখা মিলেছে এই রাজবাড়ির।

আউট হাউস থেকে বেরিয়ে ডান দিকে তাকালে দেখা যায় ফোয়ারা। সামনে সুন্দর কেয়ারি করা ফুলের বাগান। এই বাগানের ঠিক পিছনেই রয়েছে রাজবাড়ি। তার একপাশে পুরনো রাজবাড়ি। সংস্কারের কাজ চলছে। রাজবাড়ির দোতলায় থাকেন রাজপরিবারের লোকজন।

বিক্রমাদিত্য মল্লদেবের কথায়, "ঝাড়গ্রাম রাজ পরিবারের শেষ রাজা নরসিংহ মল্লদেবকে আধুনিক ঝাড়গ্রামের রূপকার বলা হয়। তাঁর আমলে শুধু এই রাজবাড়িই যে নতুন রূপ পেয়েছিল তা নয়, ঝাড়গ্রামের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য পরিকাঠামোরও প্রভূত উন্নতি হয়েছিল। আমাদের পরিবার ঝাড়গ্রামের উন্নয়নের কথা ভেবেছে চিরকাল। কিন্তু কেন্দ্র অথবা রাজ্য সরকার কোনও দিনই আমাদের এই রাজবাড়িকে রক্ষা করার কথা ভাবেননি। আমরা নিজেরা রাজবাড়ির নীচের তলার ১৪ টি ঘর নিয়ে হেরিটেজ হোটেল করেছি। আরও ১০টি ঘর বাড়ানোর ইচ্ছে রয়েছে। বানানো হবে সুইমিং পুল। সেই কাজ চলছে। রাজবাড়ি ঘিরে এই বিরাট এলাকা এবং এই বিশাল বাড়ি রক্ষণাবেক্ষণ করা যথেষ্ট ব্যয়সাপেক্ষ। আমরা ব্যক্তিগত ভাবে চেষ্টা করছি। তবে কত দিন পারব জানি না। চুয়াড় বিদ্রোহের সময়ে এই বাড়ির উপরে আক্রমণ হয়। যার জেরে বেশ কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্তও হয়েছিল।"

রাজস্থান সহ দেশের বহু রাজপ্রাসাদে টিকিটের বিনিময়ে রাজবাড়িতে প্রবেশাধিকার রয়েছে। রাজপরিবার বা কর্তৃপক্ষ চাইলে এখানেও কি সে রকম হয়ে যায় না?

মৃদু হেসে বিক্রমাদিত্য মল্লদেব বললেন, "সুরক্ষা কে দেবে! সরকারের তরফ থেকে যেহেতু উদ্যোগ নেই, সে কারণে রাজপ্রাসাদ ভ্রমণ অথবা সংগ্রহশালার নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা কঠিন। শুধুমাত্র সিসিটিভি দিয়ে এই বিরাট এলাকার নিরাপত্তা দেওয়া সম্ভব নয়। আমাদের ব্যক্তিগত সংগ্রহে রাজাদের পোশাক, তলোয়ার, বন্দুক, দুষ্প্রাপ্য ছবি, মুদ্রা-সহ প্রচুর জিনিসপত্র রয়েছে, যা দিয়ে অনায়াসে একটি সংগ্রহশালা করা যায়। কিন্তু নিরাপত্তা এবং সরকারের উদ্যোগ ছাড়া তা সম্ভব নয়।"

প্রাণশক্তিতে ভরপুর এক মানুষ রাজা বিক্রমাদিত্য মল্লদেব। তাঁর কথায়, "মানুষ ঝাড়গ্রাম বেড়াতে আসেন। ঘোরেন। চলে যান। কেউ কেউ রাজবাড়ি দেখতে আসেন। ছবি তোলেন ও চলে যান। আমি চাই এই রাজবাড়ি মানুষের কাছে পরিচিতি পাক 'হেরিটেজ সাইট' হিসেবে। রাজবাড়িতে একটা সংগ্রহশালা গড়ে উঠুক। মানুষ এই রাজবাড়ির এবং ঝাড়্গ্রামের ইতিহাস জানুক।"

ঝাড়গ্রাম রাজবাড়িতে থাকতে হলে বুকিং করতে হবে রাজবাড়ির নিজস্ব বুকিং সাইটে। এ ছাড়াও রাজবাড়ির বাইরে সরকারি থাকার জায়গা রয়েছে। এই বাইরে ঝাড়গ্রাম শহরে থাকার জন্য বহু হোটেল এবং লজ রয়েছে।

এই প্রতিবেদনটি 'আনন্দ উৎসব' ফিচারের একটি অংশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন