Bangladesh News

কুমিল্লার মেয়র ভোটে বিএনপি-র জয়, অন্তর্তদন্তে আওয়ামি লিগ

কুমিল্লায় কেল্লাফতে বিএনপি-র। সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদটি তাদেরই। আওয়ামি লিগ হারলেও লড়াই ছিল হাড্ডাহাড্ডি। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কেউ কাউকে এক সেন্টিমিটার জমি ছাড়েনি। বিএনপি-র নির্বাচিত মেয়র মনিরুল হক সাক্কু পেয়েছেন ৬৮,৯৪৮ ভোট।

Advertisement

অমিত বসু

শেষ আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০১৭ ১৭:৫৯
Share:

কুমিল্লায় কেল্লাফতে বিএনপি-র। সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদটি তাদেরই। আওয়ামি লিগ হারলেও লড়াই ছিল হাড্ডাহাড্ডি। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কেউ কাউকে এক সেন্টিমিটার জমি ছাড়েনি। বিএনপি-র নির্বাচিত মেয়র মনিরুল হক সাক্কু পেয়েছেন ৬৮,৯৪৮ ভোট। প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামি লিগের প্রার্থী আঞ্জুম সুলতানা সীমার আয়ত্তে ৫৭,৮৬৩। ব্যবধান ১১ হাজার। ভোট চলার সময় একে অন্য দলের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানিয়েছে। অনিয়মের অভিযোগ তুলেছে। আবার ৩০ মার্চ সকাল ৮টা থেকে শুরু করে বিকেল ৪ টেতে ভোট শেষ হতেই আক্রমণ প্রতি আক্রমণের পালা শেষ। ভোট নিয়ে কোনও অসন্তোষ আর দেখা যায় নি। নতুন নির্বাচন কমিশন ঘোষণা করেছে, তারা একশো ভাগ সফল। শান্তিপূর্ণ অবাধ নির্বাচন।

Advertisement

শুধু তাদের কথা নয়। সাধারণ মানুষের অভিজ্ঞতার অভিব্যক্তিও তাই। ভোটে উৎসবের মেজাজটা নষ্ট হয়নি মুহূর্তের জন্য। নির্বাচনী এলাকার মধ্যেই কোটবাড়িতে জঙ্গি আস্তানার সন্ধান মেলায় শঙ্কার মেঘ জমে। মানুষের উৎসাহে সেটা উড়ে যায় নিমেষে। আস্তানার আশপাশ দিয়ে ভোটার নির্ভয়ে যাতায়াত করেছে। ভোট দিয়েছে নিশ্চিন্তে। ভিক্টোরিয়া কলেজে ছিল উপচে পড়া ভিড়। মহিলা ভোটাররা ধৈর্যের পরীক্ষা দিয়ে দীর্ঘ ক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দিয়েছেন। যাঁরা প্রথমবার ভোট দিয়েছেন তাঁদের উল্লাস ছিল লক্ষণীয়। ভিক্টোরিয়া কলেজের প্রাক্তনীদের অনেকেই কলকাতায় প্রতিষ্ঠিত। সেখানে ভোটের কথা শুনে তাঁরাও খোঁজখবর নিয়েছেন। ঈষৎ আক্ষেপের সুরে বলেছেন, ইস, আমরাও যদি ভোট দিতে পারতাম, কী ভাল হত।

আরও পড়ুন, মেলেনি ইলিশ, ভরসা ভেটকি-গলদা-চিতলই

Advertisement

ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলা থেকে কুমিল্লা আর কতটুকু। দু'অঞ্চলের বাসিন্দাদের নিত্য যাতায়াতে মৈত্রী গাঢ়। কুমিল্লার ভোটের খবর আগরতলায় পৌঁছতে সময় নেয়নি। তাদের অঙ্ক মিলেছে কিনা খতিয়ে দেখেছে। ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার ভোটে দাঁড়ানোর সময় কুমিল্লার শুভেচ্ছা কামনা করেন। নাই বা হল তারা ভোটার, বন্ধু তো বটে। আগরতলার লোকেরা আর সব ভুললেও কুমিল্লার রসমালাইয়ের কথা মনে রাখেন। এপার ওপার করার সময় নিয়ে আসেন। হাঁড়ি নয়, আনে প্লাস্টিকের ক্যানে। আনতে সুবিধে। অসুবিধে একটাই, রেখে খাওয়া যায় না।

ভোট প্রার্থী কম ছিলেন না। মেয়র পদে চার জন, কাউন্সিলর পদে ১১৪, ৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ৪০ প্রার্থী লড়েছেন। তাঁরা মানুষের কাছে ছুটেছেন। পৌর উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। মানুষ যাদের ওপর আস্থা রেখেছেন, তাদেরই ভোট দিয়েছেন। পাঁচ বছর আগে ২০১২-র সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের চেয়ে এই ভোটে ভোটার ছিল বেশি। অতিরিক্ত আগ্রহ ছিল মহিলা ভোটারদের। তাঁরা ভোট দিয়েছেন নিরুদ্বেগে। ভোটের ফলাফল মেনেছেন নির্দ্ধিধায়।

আরও পড়ুন, বাংলাদেশ যুদ্ধে নিহত সেনাদের স্বীকৃতি হাসিনার

কুমিল্লার কর্পোরেশন ভোট কোনও দিন দলীয় প্রতীকে হয়নি। প্রার্থীরা দলীয় সমর্থন নিয়ে লড়লেও কোনও প্রত্যক্ষ প্রমাণ ছিল না। এবার ভোট হয়েছে দলীয় প্রতীকে। ভোটাররা ব্যালটে ছাপ দিয়েছেন দলীয় প্রতীকের ওপরেই। সেখানেই প্রার্থীর থেকে দল বড় হয়ে উঠেছে। সে কারণেই পৌর ভোট সংসদীয় নির্বাচনের মতো গুরুত্ব পেয়েছে। ওই ভোটাররাই ২০১৯-এ সাধারণ নির্বাচনে ভোট দিয়ে দেশের সরকার তৈরি করবে। পরাজয়টা ছোট করে দেখছে না আওয়ামি লিগ। কোথায় কেমন ভোট পেয়েছে বিচার করছে। যেখানে কম, সেখানে কেন কম প্রশ্ন উঠছে। গোষ্ঠী কোন্দলকেই হারের বড় কারণ হিসেবে মনে করা হচ্ছে। যারা দায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত। সংগঠন আরও মজবুত করার পরিকল্পনা। জাতীয় নির্বাচনের আগে যেন সব দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠা যায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন