Bangladesh

ভারত-বাংলাদেশ যাত্রী যাতায়াত এ বার জাহাজেও, পথ খোঁজা চলছে

আরব সাগর আছড়ে পড়ছে মুম্বইয়ের গায়ে। বন্দরে নোঙর করা সার সার বিদেশি অর্ণব। ব্যস্ততা অবিরাম। সাগর সংযোগে আন্তর্জাতিক যোগাযোগ। সেটা হওয়ার নয় ঢাকা বা কলকাতার। সাগর যে নেই।

Advertisement

অমিত বসু

শেষ আপডেট: ২২ ডিসেম্বর ২০১৬ ১২:৫৯
Share:

প্রতীকী ছবি-

আরব সাগর আছড়ে পড়ছে মুম্বইয়ের গায়ে। বন্দরে নোঙর করা সার সার বিদেশি অর্ণব। ব্যস্ততা অবিরাম। সাগর সংযোগে আন্তর্জাতিক যোগাযোগ। সেটা হওয়ার নয় ঢাকা বা কলকাতার। সাগর যে নেই। বঙ্গোপসাগর অনেক দূরে। কলকাতার নদী বন্দর দুরবস্থায়। ৫২টি বার্থের দু'-একটি বাদে সব খালি। কোথায় জাহাজ। পশ্চিমবঙ্গে বন্দর বলতে এখন পূর্ব মেদিনীপুরের হলদিয়া। বঙ্গোপসাগরের সান্নিধ্যে সচল। এই জেলায় দু হাজার বছরের পুরোন তাম্রলিপ্ত বা তমলুক বন্দর ছিল আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের কেন্দ্র। চৈনিক পরিব্রাজক হিউয়েন সাং এখান থেকে শ্রীলঙ্কা সফর করেছিলেন। যন্ত্র নয়, দাঁড় টানা জাহাজ ধীরে ধীরে এগিয়েছিল দ্বীপদেশের দিকে। এখন শ্রীলঙ্কায় জাহাজ যায় মুম্বই বন্দর থেকে। যাত্রী নিয়ে নয়, পণ্য বোঝাই হয়ে।

Advertisement

বাংলাদেশ-ভারতের আমদানি-রফতানির অনেকটা জাহাজেই। এবার যাত্রীও যাওয়া আসা করবে জাহাজে। দু’দেশের নৌকর্তাদের মধ্যে আলাপ আলোচনা হয়ে গেছে। বিলাসবহুল ক্রুজশিপ দু'দেশের মধ্যে সেতু গড়বে। যাত্রীদের আনন্দ সফরে দু'দেশের সম্পর্ক ভিন্ন মাত্রা পাবে। আগে নৌকা, স্টিমার, লঞ্চে যাতায়াত চলত। জাহাজে নয়। তবে জাহাজে যাত্রার সুযোগটা ঢাকা-কলকাতার যাত্রীরা সরাসরি পাবে না। কী করে পাবে। বন্দর কোথায়। কলকাতা-বন্দর সংস্কার করে যদিও বা তার ব্যবস্থা করা যায়, ঢাকার সেটা অসম্ভব। সেখানে যে বন্দরই নেই। দু'দেশের বন্দর নির্বাচন নিয়ে সমস্যা কাটেনি। ভারতের সব থেকে বড় বন্দর মুম্বই থেকে বাংলাদেশ যাওয়া কঠিন। আরব সাগর থেকে বঙ্গোপসাগরে ঢুকতে হলে অনেকটা ঘুর পথে যেতে হবে। ভাড়া বাড়বে, সময় লাগবে প্রচুর। তার চেয়ে বড় কথা, কলকাতা থেকে বাংলাদেশ সফরের যত বেশি যাত্রী পাওয়া যাবে, মুম্বই থেকে ততটা নয়।

আরও পড়ুন: শেখ হাসিনার বিমানে ত্রুটির ঘটনায় তিন চিফ ইঞ্জিনিয়ার-সহ ধৃত সাত

Advertisement

বন্দর নিয়ে ভাবতে হচ্ছে বাংলাদেশকেও। সেখানকার সবচেয়ে বড় বন্দর চট্টগ্রাম ঢাকা থেকে ২৬৪ কিলোমিটার দূরে। শহরটা মনোরম। দেখার মতো। উত্তাল কর্ণফুলী অতিথিদের স্বাগত জানাতে প্রস্তুত। তার নীচে টানেল করে যোগাযোগ হবে দুই পারের। চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার যাওয়া সহজ। ঢাকা-কক্সবাজার দূরত্ব ৩৭০ কিলোমিটার। অপূর্ব সমুদ্র সৈকতে নিশ্চিন্ত বিশ্রাম। এখন রোহিঙ্গারা ভিড় করছে মায়ানমারের অত্যাচার থেকে নিস্তার পেতে। কক্সবাজারে বন্দর নেই। জাহাজ পাশ দিয়ে চলে গেলেও দাঁড়াতে পারে না।

খুলনার পাশে মংলা বন্দর অবহেলায় পড়েছিল ২০০৮ পর্যন্ত। শেষ আট বছরে ভোল পাল্টেছে। পণ্য ওঠানামা ২৮ শতাংশ বেড়েছে। ক্ষতি পুষিয়ে লাভের মুখ দেখছে। আগে কন্টেনার স্ক্যানার না থাকায় আমদানি করা পণ্য পরীক্ষা নিরীক্ষা করা যেত না। সেই কন্টেনার স্ক্যানার এসেছে। সেটা ঠিকঠাক বসাতে একটু সময় লাগছে। টেন্ডার ডেকে নির্দিষ্ট সংস্থাকে তার দায়িত্ব দেওয়া হবে। ২০১৮-তে পদ্মা সেতু চালু হলে মংলার সঙ্গে বৃহত্তর বাংলাদেশের যোগাযোগে আর কোনও অসুবিধেই থাকবে না। মংলা বন্দরের উন্নতিতে ভারত বিনিয়োগ করবে। পাশের ময়রা বন্দরেও আধুনিকীকরণের কাজ চলছে। ভারতের বেসরকারি সংস্থা সেখানে টার্মিনাল নির্মাণে আগ্রহী। বাংলাদেশের নৌসচিব অশোকমাধব রায় আর ভারতের নৌসচিব রাজীব কুমারের মধ্যে ঢাকায় বন্দর নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশের বন্দর যাতে ভারত ব্যবহার করতে পারে তা নিয়ে চুক্তি হবে। পরিবর্তে বন্দর উন্নয়নে সহযোগী দেশ হিসেবে ভারতকে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়াতে হবে।

ঢাকার বুড়িগঙ্গায় দু'টি ফেরিঘাট। সদরঘাট, বাদামতলী। সব সময়ে জলযানে ঠাসা গিজগিজ করছে নৌকা আর লঞ্চ। বন্দর হলে চিন্তাই ছিল না। কলকাতা থেকে জাহাজ গিয়ে ভিড়ত ঢাকায়। ঢাকা থেকে আসত কলকাতায়। যাত্রীদের হত পোয়াবারো। সুখ সাগরে ভাসত নির্দ্বিধায়। শেষ পর্যন্ত কোন পথ বেরোয় দেখা যাক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন