মৌলবাদের বিরুদ্ধে পথে ঢাকার ছাত্ররা

এ কি শাহবাগ— পার্ট টু? বহু রক্তক্ষয়ী আন্দোলনের স্মৃতি বিজড়িত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আজকের চিত্রনাট্যকে এই নামেও ডাকা চলতে পারে।

Advertisement

অগ্নি রায়

ঢাকা শেষ আপডেট: ২৯ মার্চ ২০১৭ ০২:৫২
Share:

ছবি সংগৃহীত

এ কি শাহবাগ— পার্ট টু?

Advertisement

বহু রক্তক্ষয়ী আন্দোলনের স্মৃতি বিজড়িত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আজকের চিত্রনাট্যকে এই নামেও ডাকা চলতে পারে।

তফাত শুধু প্রেক্ষাপটের। শাহবাগে প্রতিবাদের আগুন জ্বলেছিল একাত্তরের গণহত্যার নায়ক আব্দুল কাদের মোল্লার ফাঁসি চেয়ে। আর আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জেগে উঠেছে দেশ জুড়ে মাথাচাড়া দেওয়া সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে। গুলশন থেকে সিলেট— জঙ্গিদের বিরুদ্ধে ডাইরেক্ট অ্যাকশন নেওয়ার দাবিতে।

Advertisement

গত কালই সিলেটের আতিয়া মহলে জঙ্গি বনাম পুলিশের পাঁচ দিনের লড়াই শেষ হয়েছে। এ দেশের বিভিন্ন স্থানে মৌলবাদী জঙ্গিদের শিকড় গাড়ার বিষয়টি প্রকাশ্যে চলে আসছে ক্রমশ। আর তার প্রতিবাদে আজ আক্ষরিক অর্থেই হাজার হাজার ছাত্রছাত্রীর গর্জনে কেঁপে উঠল ক্যাম্পাস। জানা গেল, ক্যাম্পাস ছাড়িয়ে এই স্বর আগামী দিনে ছড়িয়ে পড়তে চলেছে প্রতিটি জেলার প্রতিটি থানায়। হাজার কণ্ঠ এক হয়ে যেখানে বলছে, “পাকিস্তানের প্রেতাত্মা, পাকিস্তানে ফিরে যা!’’

একাত্তরের কুখ্যাত গণহত্যার পরের দিন (২৬ মার্চ) ক্যান্টিন মালিক মধুসূদন দে কে বাইরে টেনে এনে হত্যা করেছিল পাক সেনা। সেই স্মৃতিজড়ানো ‘মধুর ক্যান্টিনে’ আজ তিল ধারণের জায়গা নেই। বিভিন্ন রাস্তা দিয়ে ছাত্রছাত্রীদের স্লোগানমুখর মিছিল এসে মিলছে এখানে। ভিতরেও ঠাসা ছাত্রছাত্রীরা। বাংলাদেশ ছাত্র লিগ-এর সভাপতি আবিদ আল হাসান ভিড় সামলাতে সামলাতেই জানালেন, “রাজাকাররা চলে গিয়েছে ঠিকই, কিন্তু ষড়যন্ত্রকারীরা থেকেই গিয়েছে। জামাতের মাধ্যমে বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে ইন্ধন দিয়ে যাচ্ছে। শুধু জঙ্গিপনাই নয়, তারা সাম্প্রদায়িক বিষও ছড়াচ্ছে সমাজে।”

আর কোনও কোনও বিশেষ সময়ে হঠাৎ বেড়ে ওঠে জঙ্গিদের তৎপরতা। যেমন এখন— প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লি সফরের ঠিক আগে। ভারত-বিরোধী স্বরও তুঙ্গে তুলেছে বিরোধীদের সেই অংশ, যারা মনে প্রাণে চায় এই সফর ব্যর্থতায় পর্যবসিত হোক।

আওয়ামি লিগ-এর ছাত্র সংগঠন এই ছাত্র লিগ সিলেটের ঘটনার প্রতিবাদে গোটা দেশে প্রতিবাদ কর্মসূচি শুরু করল আজ থেকে। দেশের সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আন্দোলন, গণস্বাক্ষর অভিযান চলবে। আর এক ছাত্রনেতা আনাসার চৌধুরীর কথায়, “গরিব মানুষদের টোপ দিয়ে জঙ্গি বানানো হচ্ছে। আবার বেসরকারি কলেজের ধনী ছাত্রদেরও মগজ ধোলাই করে মৌলবাদের বিষ গেলানো হচ্ছে। আমরা সে দিকেও সতর্ক থাকার চেষ্টা করছি।”

তবুও প্রশ্ন কিছু থেকেই যাচ্ছে। বোরখা পরা মহিলার সংখ্যা বেড়েই চলেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের অলিতে গলিতে। যদিও তাঁদেরই এক দল বলছেন, হিজাব মানুষে মানুষের সম্পর্কের প্রতিবন্ধক নয়। ইসলামিক স্টাডিজ-এর ছাত্রী সীমা মকসুদ যেমন জানাচ্ছেন, “এটা আমাদের পারিবরিক ঐতিহ্য। মানতে তো হবেই! যে যার ঐতিহ্য মানবে, সেটাই তো উচিত।” তবে মৌলবাদের বিরুদ্ধে মিছিল থেকে অল্প সংখ্যক যাদের সরে থাকতে দেখা গেল, সীমা তাঁদেরই
এক জন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন