ঢাকায় ওলিও ইন্টারন্যাশনাল হোটেলে পুলিশের তল্লাশি।
জাতীয় শোক দিবসে আরও একটি ভয়ানক গণহত্যার জঙ্গি-ছক ভেস্তে দিল পুলিশ। পুলিশি অভিযানে কোণঠাসা হয়ে আত্মঘাতী হল জঙ্গি।
১৯৭৫-এর ১৫ অগস্ট রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের ধানমন্ডির বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাঁকে সপরিবার হত্যা করেছিল সেনারা। প্রতি বছরের মতো এ দিনও মুজিবকে শ্রদ্ধা জানাতে ফুল নিয়ে সেই বাড়ির সামনে হাজির হয়েছিলেন হাজার হাজার মানুষ। এসেছিলেন রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্পিকার শিরিন শরমিন চৌধুরী ও বহু মন্ত্রী। পুলিশের দাবি, সেই ভিড়ের মধ্যেই শক্তিশালী মানববোমা বিস্ফোরণের পরিকল্পনা করেছিল জঙ্গিরা।
আরও পড়ুন: দুর্নীতি দমনে সরব মোদী, জবাব নেই নোট ফেরতের প্রশ্নে
পুলিশের আইজি কে এম শহিদুল হক জানিয়েছেন, জাতীয় শোক দিবসের দিনে জঙ্গিরা নাশকতা চালানোর ছক কষছে বলে জঙ্গি-দমন শাখা আগেই খবর পেয়েছিলেন। তার পরে বিভিন্ন জায়গায় নজরদারি চলছিল। ধানমন্ডির অদূরে পান্থপথে ওলিও ইন্টারন্যাশনাল হোটেলেও নজরদারি ছিল। পরে তাঁরা খবর পান, এই হোটেলে শুক্রবার সাইফুল নামে এক যুবক দোতলায় রাস্তার দিকের একটি ঘরে উঠেছে। পুলিশ রেকর্ডে যার জঙ্গি-সংস্রবের ইতিহাস রয়েছে। এর পরে সকালে পুলিশ সাইফুলের ঘরের বাইরে পৌঁছলে ভিতরে তার সাড়া পায়। কিন্তু পুলিশের ডাকে সাড়া দিয়ে সে বেরিয়ে আসেনি। তখনই আশেপাশের এলাকা ফাঁকা করে দেওয়া হয়। পান্থপথ দিয়ে যান চলাচলও বন্ধ করে দেওয়া হয়। জড়ো হওয়া সাংবাদিক ও আলোকচিত্রীদেরও পুলিশ নিরাপদ জায়গায় সরে যেতে বলে।
পুলিশ এর পরে আরও বাহিনী এনে হোটেল ঘিরে ফেলে। শুরু হয় ‘অপারেশন অগস্ট বাইট’। কোণঠাসা হয়ে পড়েছে বুঝে ওই জঙ্গি ঘরের মধ্যেই প্রচণ্ড শক্তিশালী একটি বোমা ফাটায়। তাতে ঘরের রাস্তার দিকের দেওয়াল, দরজা-জানলা উড়ে যায়। খাট-বিছানা ছিটকে গিয়ে রাস্তায় পড়ে।
বিস্ফোরণের পর হোটের ঘরেই পড়ে আছে জঙ্গির দেহ।
পুলিশ প্রধান জানান, দেওয়াল উড়ে যাওয়ায় ওই জঙ্গি পুলিশের সামনা সামনি পড়ে যায়। পুলিশ ফের তাকে আত্মসমর্পণ করতে বলায় সে আরও একটি বোমা ফাটাতে যায়। তাকে ঠেকাতে পুলিশ গুলি চালায়। কিন্তু এ বার সে শরীরে লাগানো বিস্ফোরক ভর্তি জ্যাকেটটির সুইচ টিপে দেয়। মুহূর্তে বিস্ফোরণে তার দেহ টুকরো হয়ে যায়। এর পরে পুলিশ ঘরে ঢুকে সেখানে থাকা কয়েকটি বোমাকে নিষ্ক্রিয় করে।
পুলিশ জানিয়েছে, নিহত জঙ্গি সাইফুল ইসলামের বাড়ি খুলনার ডুমুরিয়ায় নোয়াকাটি গ্রামে। খুলনা শহরে একটি মেসে থেকে সে সেখানকার বিএল কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে চতুর্থ বর্ষে পড়াশোনা করত। তার বাবা জামাতে ইসলামির স্থানীয় ইউনিয়ন শাখার কোষাধ্যক্ষ। বছর ২১-এর সাইফুল নিজেও জামাতের ছাত্র সংগঠন ইসলামি ছাত্র শিবিরের কর্মী। নব্য জেএমবি জঙ্গিদের সঙ্গেও তার ওঠাবসা ছিল।
গ্রামের বাড়িতে সাইফুলের বোন ইরানি খাতুন দাবি করেছেন, চাকরির খোঁজে যাচ্ছে বলে শুক্রবার সে ঢাকায় যায়। রবিবার রাতে সে শেষ বার বাড়ির সঙ্গে ফোনে কথা বলে।
পুলিশের দাবি, পান্থপথে রাস্তার ওপর হোটেলটিতে থেকে এবং বেশ কয়েক বার সেখান থেকে ৩২ নম্বর ধানমন্ডি রোডে মুজিবের বাড়ি পর্যন্ত হেঁটে সে হামলা ও নাশকতার মহড়া দিয়েছে। এই জন্যই শুক্রবার সে হোটেলে এসে ওঠে।
পুলিশের এক অফিসার বলেন, “হামলায় বহু মানুষকে হত্যা করার জন্যই এই জঙ্গি ঘাঁটি গেড়েছিল। বিস্ফোরণের ক্ষমতাই বলে দিচ্ছে, তাদের ছক বাস্তবায়িত হলে কত মানুষ মারা যেতে পারতেন!”
নিজস্ব চিত্র।