আইয়ুব বাচ্চুকে নিঃসন্দেহে বলা যেতে পারে উপমহাদেশের অন্যতম সেরা গিটারিস্ট। অবশ্য শুধু গিটারিস্ট হিসেবে নিজেকে আটকে রাখেননি বাংলা সংগীতের এই কিংবদন্তি শিল্পী। তিনি একাধারে গায়ক, লিড গিটারিস্ট, গীতিকার, সুরকার, প্লেব্যাক শিল্পী। বাংলা ব্যান্ডকে জনপ্রিয় করার পেছনে অন্যতম কারিগর ছিলেন আয়ুব বাচ্চু।
মূলত রক ঘরানার কণ্ঠের অধিকারী হলেও আধুনিক গান, ক্ল্যাসিক্যাল সঙ্গীত ও লোকগীতি দিয়েও শ্রোতাদের মুগ্ধ করেছেন তিনি। বহু সিনেমার প্লেব্যাক করেছেন। ক্যাসেট দিয়ে শুরু। তার পর সিডি, এমপি-থ্রির জমানা পেরিয়ে ইউটিউবেও তুমুল জনপ্রিয় ছিলেন আয়ুব বাচ্চু।
জিমি হেন্ড্রিক্স এবং জো স্যাট্রিয়ানীর বাজনায় তিনি ছিলেন দারুণভাবে অনুপ্রাণিত। আইয়ুব বাচ্চুর নিজের একটি স্টুডিয়ো আছে। ঢাকার মগবাজারের সেই মিউজিক স্টুডিয়োটির নাম এবি কিচেন।
জিমি হেন্ড্রিক্স এবং জো স্যাট্রিয়ানীর বাজনায় তিনি ছিলেন দারুণভাবে অনুপ্রাণিত। আইয়ুব বাচ্চুর নিজের একটি স্টুডিয়ো আছে। ঢাকার মগবাজারের সেই মিউজিক স্টুডিয়োটির নাম এবি কিচেন।
জেমসের সঙ্গে তাঁর দ্বৈরথ এগিয়ে দিয়েছিল বাংলা ব্যান্ডসঙ্গীতকে। একের পর এক ভাল গান তৈরি করার প্রতিযোগিতা ছিল আয়ুব বাচ্চু আর জেমসের মধ্যে। সেই দ্বৈরথ সামনে এলেও পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা ছিল অটুট।
আয়ুব বাচ্চুর মৃত্যুতে শোক জানিয়ে জেমস বলেছেন, ‘‘১৯৮০ সালের শুরুর দিকে আমাদের পরিচয়। এর পর দীর্ঘ প্রায় ৪০ বছর আমরা একে অপরের সুখে-দুঃখে, মানে-অভিমানে কাটিয়েছি। একসঙ্গে প্রচুর শো করেছি, গান করেছি, দেশ-বিদেশে ঘুরেছি। উনি হঠাৎ এ ভাবে আমাদের সবাইকে ছেড়ে চলে যাবেন, খবরটা শুনে মানতে পারছি না।’’
১৯৯১ সালে তৈরি করেছিলেন লিটল রিভার ব্যান্ড (এলআরবি)। আইয়ুব বাচ্চু, জয়, স্বপন এবং এস আই টুটুল ছিলেন এলআরবি ব্যান্ডের চার প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। জন্মের পাঁচ বছরের মধ্যেই ঢাকা, কলকাতা-সহ উপমহাদেশে তুমুল জনপ্রিয় হয় এই ব্যান্ড। সারা পৃথিবীতে দেড় হাজারেরও বেশি কনসার্ট করেছে এলআরবি।
এলআরবি দিয়ে শুরুতে বোঝানো হয়েছিল ‘লিটল রিভার ব্যান্ড’। কিন্তু কিছু দিন পর জানা যায়, এই নামে অস্ট্রেলিয়ায় একটি ব্যান্ড আছে। তাই প্রয়োজন হয় দলের নাম বদলের। এলআরবি আদ্যাক্ষর ঠিক রেখে ব্যান্ডের নতুন নাম রাখা হয়েছিল ‘লাভ রানস ব্লাইন্ড’।
১৯৯৩ সালে ঢাকার মালিবাগে বসে লিখেছিলেন ‘চল বদলে যাই’। স্থান, কালের বেড়াজাল ভেঙে জনপ্রিয়তার নিরিখে বাংলা সঙ্গীতের অন্যতম সেরা হয়ে ওঠে এই গান। এলআরবির ‘সুখ’ অ্যালবাম বের হওয়ার পর গানটি এতটাই জনপ্রিয় হয় যে, এলআরবির কনসার্ট মানে ‘চল বদলে যাই’ থাকতেই হত।
আইয়ুব বাচ্চু একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘‘গানটি মঞ্চে দাঁড়িয়ে গাওয়ার সময় দেখেছি, সব দর্শক আমাদের সঙ্গে গানটি গাইছে। তার মানে গানটি আর আমার বা এলআরবির নেই। সবার গান হয়ে গিয়েছে। কারণ, গানটির কথাগুলো শাশ্বত। সবার অন্তরের কথা।’’