বজ্রপাত
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুতুল নাচের ইতিকথা উপন্যাসের শুরুতেই বজ্রপাতে হারুর পুড়ে কয়লা হবার ছবি পাঠকের নিশ্চয় মনে আছে। এই বজ্রপাতই এখন বাংলাদেশের নতুন দুর্যোগ। ইদানীং বজ্রপাত বাংলাদেশের কাছে আতঙ্কে পরিণত হয়েছে। গত এক সপ্তাহে এই দুর্যোগে সারা দেশে মারা গিয়েছে অন্তত ৩৫ জন।
জাতিসংঘের চ্যাম্পিয়নস অফ আর্থ অ্যাওয়ার্ড বিজয়ী পরিবেশবিদ আতিক রহমান আনন্দবাজারকে বলেন, ‘‘বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। কেন বাড়ছে, তা নিয়ে গবেষণার প্রয়োজন আছে। তবে এ জন্য জলবায়ু পরিবর্তন একটা বড় কারণ।’’
জলবায়ু বিশেষজ্ঞ আতিকের মতে, উষ্ণায়নের ফলে মেঘ তৈরির তীব্রতা বাড়ছে। শহরের পরিবেশ খুব উত্তপ্ত হয়ে পড়ায় শীতল হতে সময় নিচ্ছে। যার ফলে বাষ্পায়নটা ক্রমশ গ্রামের দিকে চলে যাচ্ছে। মেঘ তৈরির তীব্রতায় বজ্রপাতের সংখ্যা বাড়ছে বলে তিনি জানান। এ ছাড়াও তিনি জানান, দেশজুড়ে দীর্ঘকায় গাছ বিশেষ করে তাল গাছের সংখ্যা অনেকটাই কমে গিয়েছে। যার জন্য এ ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ অনেক বেশি হচ্ছে। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাটাও। একমাত্র সচেতনতাই এই দুর্যোগ প্রতিরোধ করতে পারবে।
দুর্যোগ ফোরাম সূত্রে খবর, বাংলাদেশে ২০১৫ সালে বজ্রপাত হয়েছে ১২১৮টি। যা ২০১৪ সালের তুলনায় প্রায় ৩০০ বেশি। শুধুমাত্র ২০১৫ সালে বজ্রপাতে মারা যান ২৭৪ জন। ২০১৪-তে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ২১০। আর ২০১৬ সালে এপ্রিল পর্যন্ত বজ্রপাতে মৃত্যু হয়েছে ৪৮ জনের। এর মধ্যে ১৪ জন শিশু এবং ৩১ জন পুরুষ। যার জন্য ২০১০ সাল থেকেই বজ্রপাতকে আলাদাভাবে দুর্যোগ হিসাবে বিবেচনা করে আসছে বাংলাদেশ সরকার।
তবে শুধু বজ্রপাতই নয়, চলতি বছরে যে ভাবে গরম বাড়ছে তাতে তাপপ্রবাহের ফলে দুর্ভোগে পড়তে পারেন সাধারণ মানুষ। ইতিমধ্যেই বেশ কিছু জায়গায় হালকা থেকে মাধারি তাপপ্রবাহের সতর্কতা জারি করেছে আবহাওয়া দফতর। আবহাওয়া দফতরের তথ্য অনুযায়ী, মে মাসে দেশের উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে ১ থেকে ২টি তীব্র এবং অন্যত্র ২ থেকে ৩টি মৃদু বা মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। পূর্বাভাসে এও জানানো হয়েছে, চলতি মাসে দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে ২-৩ দিন বজ্রসহ মাঝারি বা তীব্র কালবৈশাখী অথবা বজ্রঝড় ও দেশের অন্যত্র ৩-৪ দিন হালকা বা মাঝারি কালবৈশাখী বা বজ্রঝড় হতে পারে।
আরও পড়ুন: বিশ্ব জুড়ে সাইবার হানার কবল থেকে বাঁচতে এ বার আগাম সতর্কতা
থার্মোমিটারের পারদ যদি ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠে, আবহাওয়াবিদরা তাকে মৃদু তাপপ্রবাহ বলেন। উষ্ণতা বেড়ে ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে তাকে বলা হয় মাঝারি তাপপ্রবাহ। আর তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি ছাড়িয়ে গেলে তাকে তীব্র তাপপ্রবাহ হিসেবে বিবেচনা করে আবহাওয়া অফিস।
ছবি: সংগ্রহ।