বান্দরবানে শুরু হয়েছে উদ্ধারকাজ। ছবি: এএফপি।
অতি বর্ষণে পাহাড় ধসে এখনও পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ১২৪। এর মধ্যে গাছ ভেঙে, দেওয়ালচাপা পড়ে এবং বজ্রপাতে তিন জনের মৃত্যু হয়েছে।
সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি হয়েছে রাঙামাটিতে। সেখানে চার সেনাকর্তা ও জওয়ান-সহ ৮৮ জন মারা গিয়েছেন। মৃত সেনাকর্মীরা রাঙামাটির মানিকছড়ি ক্যাম্পে কর্মরত ছিলেন। এ ছাড়া পাহাড় ধসে চট্টগ্রামে ১৭ জন এবং বান্দরবানে ৭ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। ওই সব এলাকায় সড়ক যোগাযোগ বিপর্যস্ত। বিদ্যুৎ পরিষেবা এখনও স্বাভাবিক হয়নি। রাস্তায় রাস্তায় পড়ে আছে গাছ ও পাহাড় ধসের মাটি পাথর।
রাঙামাটির মানিকছড়ি এলাকায় ধসের মাটি সরাতে গিয়ে দুই কর্তা-সহ চার সেনা জওয়ান মারা গিয়েছেন। গুরুতর আহত হয়েছেন ৫ জন। আহতদের রাঙামাটির সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল থেকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে আনা হচ্ছে। সকালে মানিকছড়ির রাস্তা থেকে পাহাড় ধসের মাটি সরিয়ে পথ পরিষ্কারের কাজ করছিলেন ১৬ জন সেনার একটি দল। তখন আবারও পাহাড়ে ধস নামে। সেই সময় প্রায় ৩০ ফুট নীচে পড়ে যান তাঁরা। রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলায় গাছচাপা পড়ে এক জন ও কর্ণফুলী নদীতে প্রবল ঢেউয়ের তোড়ে এক যুবক নিখোঁজ রয়েছেন। চট্টগ্রামের পাহাড় ও দেওয়াল ধসে মৃত্যু হয়েছে ২৯ জনের, চাক্তাইয়ে বজ্রপাতে এক জন মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গিয়েছে। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রশাসনের। রাঙামাটির পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, মঙ্গলবারও সেখানে প্রবল বৃষ্টি হচ্ছে। বিভিন্ন জায়গার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। বান্দরবানের পুলিশ সুপার সঞ্চিত কুমার জানান, প্রবল বর্ষণে ভূমিধসের সঙ্গে গাছপালা ভেঙে পড়েছে। জেলার অধিকাংশ জায়গায় কোনও বিদ্যুৎ নেই। উদ্ধারকাজের জন্য বিভিন্ন জায়গায় সেনা নামানো হয়েছে।
আরও পড়ুন- নিম্নচাপের বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত ঢাকা-সহ বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চল
বঙ্গোপসাগরে উদ্ভূত নিম্নচাপের প্রভাবে গত রবিবার রাত থেকে টানা বৃষ্টি হচ্ছে সারা দেশে। সোমবার সেটি বাংলাদেশের উপকূল ও স্থলভাগ অতিক্রম করে। এর প্রভাবে বৃষ্টির পরিমাণ আরও বাড়ে। টানা বৃষ্টিতে রাস্তাঘাট তলিয়ে গিয়ে দুর্ভোগে পড়ে মানুষ। এ কারণে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর সতর্কসংকেত জারি করা হয়। অনেক জায়গায় বন্ধ করে দেওয়া হয় নৌযান চলাচল।
পাহাড় ধসে হতাহতের ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। শোক প্রকাশ করেছেনপ্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ছাড়াও সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ, বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াও শোকবার্তা জানিয়েছেন।
পাহাড়ধসে মারা যাওয়ার ঘটনা এই প্রথম নয়। প্রায় প্রতি বছরই বর্ষা মৌসুমে রাঙামাটি, বান্দরবান ও চট্টগ্রামে পাহাড় ও দেওয়াল ধসে হতাহতের ঘটনা ঘটে। গত ২০০৭-এর ১১ জুন চট্টগ্রামের বিভিন্ন জায়গায় পাহাড়, দেওয়াল ও ভূমি ধসে ১২৭ জনের প্রাণহানি ঘটে।