International

নারায়ণগঞ্জের মাঠে লড়াই নৌকা, ধানের শীষে, আজ ভোট

চ্যালেঞ্জটা ষোল আনা বিএনপি’র। তবে ভোটে গণ্ডগোল বা ফলাফল খারাপ হলে, তার দায় বর্তাবে আওয়ামি লিগের কাঁধেই।

Advertisement

অঞ্জন রায়

শেষ আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০১৬ ১৮:৫৩
Share:

চ্যালেঞ্জটা ষোল আনা বিএনপি’র।

Advertisement

সংসদের বাইরে থাকা দলটি নারায়নগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকেই বেছে নিয়েছে হাসিনা সরকারের জনপ্রিয়তায় একটা বড়সড় ঘা দিতে। বিএনপি’র দলীয় ইমেজ এখন কার্যত, নিজের ছায়ার সঙ্গে লড়ছে। নারায়নগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের ফলাফলই পারে সেই পুরনো ইমেজ ফিরিয়ে দিতে। যার পরিণতিতে ফের চাঙ্গা হয়ে উঠতে পারে সরকারবিরোধী আন্দোলন। পক্ষান্তরে, শাসক দল আওয়ামি লিগের কাছে এই ভোট দলের জয়রথটাকে শুধুই এগিয়ে নিয়ে যাওয়া ছাড়া বিশেষ কিছু নয়। এই সমীকরণে রাত পোহালেই ভোট হতে যাচ্ছে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনে। এ বারের নির্বাচনের বাড়তি গুরুত্ব, এটি দলীয় প্রতীক নিয়ে লড়া প্রথম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। আর বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে এটাই শেষ নির্বাচন হতে চলেছে বাংলাদেশে।

এখনও নির্বাচনী পরিবেশ ‘উৎসবমুখর’ হলেও, যে প্রশ্নটি ঘুরপাক খাচ্ছে নির্বাচনের আগের দিন, তা হল, ভোটাররা কি নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারবেন? এই নির্বাচনে কি আমজনতার মনোভাবের সত্যি-সত্যিই কোনও প্রতিফলন ঘটবে? প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দিন আহমেদ অবশ্য বলেছেন, ‘‘নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।’’

Advertisement

নির্বাচন কমিশন জানাচ্ছে, নারায়নগঞ্জে ভোট হচ্ছে মোট ১৭৪টি কেন্দ্রে। তার মধ্যে ১৩৭টি কেন্দ্রই উত্তেজনাপ্রবণ। কেন্দ্রে মোট ভোটার রয়েছেন ৪ লক্ষ ৭৬ হাজার জন। পুরুষ ভোটারের সংখ্যা ২ লক্ষ ৪১ হাজার। আর নারী ভোটার রয়েছেন ২ লক্ষ ৩৫ হাজার জন। নতুন ভোটারের সংখ্যা প্রায় ৭৫ হাজার। মেয়র পদ-প্রার্থী রয়েছেন সাত জন।

গত ১৪ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জ ক্লাবে একটি গোলটেবিল বৈঠকে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা বলেছেন, ‘‘মেয়র পদে আমরা ভাল প্রার্থী পেলেও কাউন্সিলর পদ-প্রার্থীদের অনেকেই কালিমালিপ্ত। তাঁদের কারও কারও বিরুদ্ধে হত্যা, সন্ত্রাস ও দুর্নীতির মামলাও আছে। নির্বাচন কমিশন শেষ পর্যন্ত ওই সব প্রার্থীর ওপর ঠিক ভাবে নজর না রাখলে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভোটগ্রহণ অসম্ভব হয়ে পড়বে।’’ নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে যে সাত জন প্রার্থী রয়েছেন, তাঁদের অন্যতম-আওয়ামি লিগের সেলিনা হায়াৎ আইভি ও বিএনপি’র সাখাওয়াত হোসেন খান। দু’জনেই অবশ্য সজ্জন বলে পরিচিত।

বিএনপি নেতারা বারবারই বলছেন, ২২ ডিসেম্বর ‘নৌকা’ শীতলক্ষা নদীতে ডুবে যাবে। তবে আওয়ামি লিগ বলছে, ‘নৌকা’ ডুববে না। যদিও নারায়ণগঞ্জে ‘নৌকা’ প্রতীকের প্রার্থীকে ডোবানোর ইতিহাসও রয়েছে। আইভির মনোনয়ন নিয়ে গোড়া থেকেই জল ঘোলা হচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে চূড়ান্ত মনোনয়ন পান ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভি।

আরও পড়ুন- বাংলাদেশে নয়া নির্বাচন কমিশন: রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বৈঠকে এরশাদের দল

‘নৌকা’ প্রতীক ছাড়াও আইভির পরিচ্ছন্ন ব্যক্তি ইমেজেরও একটা বড় ভূমিকা থাকার কথা এই ভোটে। অন্য দিকে, বিএনপির সমস্যা হল, তাদের প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খান রাজনৈতিক পরিসরে কম পরিচিত। তাঁর প্রতিপক্ষ আইভি ২০১১ সালে শুধু মেয়রই হননি, পাঁচ বছর দক্ষতার সঙ্গে সিটি কর্পোরেশন পরিচালনাও করেছেন। বিএনপির নেতারা অবশ্য মনে করছেন, ‘‘প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী যত শক্তিশালীই হোন, এই নির্বাচনে ক্ষমতাসীন ‘নৌকার’ বিপক্ষে ‘ধানের শীষে’র জোয়ার আসবে।’’ অন্য দিকে আওয়ামি লিগের নেতাদের ধারণা, ‘‘আইভি গত পাঁচ বছরে যে কাজ করেছেন, তাতে ধানের শীষের পক্ষে জোয়ার আসার কোনও প্রশ্নই ওঠে না।’’

পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মাহফুজুল হক নুরুজ্জামান বলেছেন, ‘‘নির্বাচনে কেউ ভোটকেন্দ্র দখল ও ব্যালট বাক্স ছিনতাই বা জনগণের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করার চেষ্টা করলে নিরাপত্তা বাহিনী গুলি ছুড়বে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কোন বাহিনীর কত জন সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে, তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হল, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যাতে কেউ গুন্ডামি করতে না পারে, সেটা সুনিশ্চিত করা।’’

তবে ভোটে গণ্ডগোল হলে তার দায় বর্তাবে শাসক দল আওয়ামি লিগের কাঁধেই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement