Bangladesh

তিস্তা নিয়ে মমতার সহযোগিতা চাইল ঢাকা

অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। কাদের তাঁর বক্তব্যে সুব্রতবাবুকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘‘বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আপনার মাধ্যমেই আমি অনুরোধটা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পাঠালাম।’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০১৭ ২১:৪৩
Share:

বিজয় দিবসের সমাপ্তি অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ দূতাবাসে মঙ্গলবার।—নিজস্ব চিত্র।

বিজয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকেই তিস্তার জলবণ্টন প্রসঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইতিবাচক সহযোগিতা চাইলেন বাংলাদেশের মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। পাশাপাশি, এই মুহূর্তে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ভাল সম্পর্কের কৃতিত্ব তিনি দিয়েছেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে।

Advertisement

বাংলাদেশ দূতাবাস আয়োজিত পাঁচ দিনের ‘বিজয় উৎসব’-এর সমাপ্তি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে সোমবারই কলকাতায় এসে পৌঁছন সে দেশের সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বাংলাদেশের শাসক জোটের প্রধান দল আওয়ামি লিগের সাধারণ সম্পাদকও বটে। মঙ্গলবার সেই অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘‘ঢাকা সফরে গিয়ে নরেন্দ্র মোদী আশ্বাস দিয়েছেন শেখ হাসিনাকে। আশা করি তিস্তা, ফেনি-সহ অভিন্ন নদী জল বণ্টনে বাস্তবসম্মত, যুক্তিগ্রাহ্য, ন্যায়সঙ্গত একটা সমাধানে আমরা পৌঁছতে পারব। আমাদের প্রত্যাশা, ভারত সরকারের এই উদ্যোগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইতিবাচক সাড়া দেবেন।’’

এ দিনের ওই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। কাদের তাঁর বক্তব্যে সুব্রতবাবুকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘‘বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আপনার মাধ্যমেই আমি অনুরোধটা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পাঠালাম।’’

Advertisement

বাংলাদেশ দূতাবাসে স্বাগত জানানো হচ্ছে মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে।—নিজস্ব চিত্র।

কলকাতায় ‘বিজয় উৎসব’-এর শেষ দিনের ওই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে আমন্ত্রিত ছিলেন ওবায়দুল কাদের। সম্মানিত অতিথি হিসাবে এসেছিলেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়। বিশেষ অতিথি হিসাবে বাংলাদেশ থেকে এসেছিলেন সে দেশের দৈনিক জাগরণ পত্রিকার সম্পাদক আবেদ খান। দিল্লিতে নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাসের হাইকমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলি এবং কলকাতা দূতাবাসের ডেপুটি হাইকমিশনার তৌফিক হাসানও এ দিনের অনুষ্ঠানে ছিলেন।

সমাপ্তি অনুষ্ঠানের শুরুতেই তৌফিক জানান, কলকাতার সঙ্গে বাংলাদেশের স্বাধীনতার একটা সম্পর্ক আছে। কী সেই সম্পর্ক? ১৯৭১-এর ১৭ এপ্রিল মুজিব সরকার শপথ গ্রহণ করে। তার এক দিন পরেই কলকাতায় কর্মরত তৎকালীন ডেপুটি হাইকমিশনার হোসেন আলি এখানকার অফিসে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন। আর সে দিন থেকে কলকাতার ডেপুটি হাই কমিশন বিদেশে বাংলাদেশের প্রথম কূটনৈতিক মিশন হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে। সেই ঐতিহাসিক ভবনটি আজও বাংলাদেশের গৌরবোজ্জ্বল মুক্তিযুদ্ধের সাক্ষ্য নিয়ে স্বমহিমায় রয়েছে। তৌফিকের কথায়, ‘‘আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে তাই কলকাতার ভূমিকা অনস্বীকার্য।’’ তিনি বলেন, ‘‘মুক্তিযুদ্ধ-সহ গৌরবোজ্জ্বল বিভিন্ন ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক এবং বাণিজ্যিক বিষয়াবলী উপস্থাপনের মাধ্যমে বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি তুলে ধরাই এই অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্য।’’

এ দিন আবেদ খান তাঁর বক্তব্যে বিজয় উৎসবের সুখকর মুহূর্তের পাশাপাশি বাংলাদেশে বিরোধী শক্তির উত্থান নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেন। নাম না করে তিনি বলেন, ‘‘আমরা যদি মনে করে থাকি ষড়যন্ত্র শেষ হয়ে গিয়েছে, তা হলে ভুল হবে। মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তি নিশ্চুপ হয়ে বসে নেই।’’

সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের পরিচয় হিসাবে আবেদ খান বলছিলেন, মুক্তিযুদ্ধের এক জন অত্যন্ত সুপরিচিত এবং পরীক্ষিত বন্ধু। সেই সুব্রতবাবু এ দিন বলেন, ‘‘দু’টি ঘটনা আমাকে ইতিহাসের ছাত্র হিসাবে আজও শিহরণ জাগায়। এবং সে দু’টি বাংলাদেশে ঘটেছে। একটি স্বাধীনতার যুদ্ধকে চাক্ষুস দর্শন করা। আর অন্যটি বাংলা ভাষার আন্দোলন।’’

মঞ্চে বাঁ দিক থেকে সুব্রত মুখোপাধ্যায়, ওবায়দুল কাদের এবং আবেদ খান।—নিজস্ব চিত্র।

দু’দেশের সম্পর্ক নিয়েও স্মৃতিচারণ করেন সুব্রতবাবু। এমনকী, বাংলাদেশের স্বাধীনতা প্রাপ্তির দিন তাঁরা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সরাসরি খুলনা চলে গিয়েছিলেন বলে জানান। দু’দেশের সম্পর্ক নিয়ে বলতে গিয়ে নরেন্দ্র মোদীর ভূমিকার প্রশংসা করেন কাদের। তিনি বলেন, ‘‘ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কে ’৭৫ সালের পর ২১ বছর অনেক টানাপড়েন ছিল। সেই সম্পর্কে অবিশ্বাস ছিল। সন্দেহ ছিল। কিন্তু, আমরা আজ আনন্দিত। ভারতের জননন্দিত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় আসার পর আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে মিলিত ভাবে তিনি বহু দিনের সেই অবিশ্বাস এবং সন্দেহের দেওয়াল ভেঙে দিয়েছেন।’’ পাশাপাশি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কেও প্রশংসাসূচক মন্তব্য করেন কাদের। তিনি বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমাদের দিদি। তাঁকে আমরা শ্রদ্ধার চোখে দেখি। বাঙালি হিসাবে আমাদের মধ্যে আত্মার একটা বন্ধন আছে।’’

আরও পড়ুন
সংখ্যালঘুদের পাশেই হাসিনা,বললেন কাদের

মোয়াজ্জেম আলি ভারত-বাংলাদেশের নাগরিকদের দু’দেশে যাতায়াতের ক্ষেত্রে এক ভিসাহীন ভবিষ্যতের স্বপ্নের কথা বলেন। তাঁর কথায়, ‘‘ফ্রান্স-জার্মানি যদি পারে, আমরাও পারব। এটা কোনও অলীক স্বপ্ন নয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন