দীর্ঘ তিন দশক পর বাংলাদেশের মাটিতে পা দিলেন চিনের কোনও শীর্ষনেতা। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে মুখোমুখি বসলেন চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। দু’দেশের মধ্যে ২৬ দফা চুক্তি এবং সমঝোতাপত্র সই হল। যৌথ বিবৃতি দিলেন দুই রাষ্ট্রপ্রধান। আগামী বছর অর্থাত্ ২০১৭ সালকে দুই দেশের বন্ধুত্ববর্ষ বলে ঘোষণা করলেন চিনা প্রেসিডেন্ট। শেখ হাসিনার মতে, নতুন অধ্যায়ের সূচনা হল চিনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কে।
শি জিনপিং ও শেখ হাসিনা দুজনেই বলেন, দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে আরও নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া হবে। সামাজিক-অর্থনৈতিক-সহ সব খাতেই চিন ও বাংলাদেশ পরস্পরের সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে বলেও আশা প্রকাশ করেছেন দুই নেতা।
ঢাকায় দুই রাষ্ট্রনেতার উপস্থিতিতেই দু’দেশের মধ্যে ২৬টি চুক্তি ও সমঝোতাপত্র সই হয়। এর মধ্যে ছ’টি চুক্তি। বাকি ২০টি সমঝোতাপত্র। এ ছাড়াও ছ’টি প্রকল্পের উদ্বোধন করা হয় বলে জানিয়েছে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন বিটিভি।
এর মধ্যে চট্টগ্রামের কর্ণফুলি নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণ, সড়ক পরিকাঠোমো, পায়রায় ১৩২০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ-সহ অন্যান্য প্রকল্প রয়েছে। দুপুর ৩টে নাগাদ শি জিনপিং-কে নিজের কার্যলয়ে স্বাগত জানান বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী। বৈঠক করেন দুই নেতা। বৈঠক শেষে যৌথ বিবৃতি দেন তাঁরা। যৌথ ঘোষণায় চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ফলপ্রসূ বৈঠক হয়েছে। চিন ও বাংলাদেশের মধ্যেকার সম্পর্ক এখন নতুন যুগের সূচনা করেছে। ২০১৭ সাল হবে চিন-বাংলাদেশ বন্ধুত্বের বছর। বাংলাদেশ ও চিন ভাল প্রতিবেশী ও বন্ধু। ইতিহাসের নতুর মাত্রায় দুই দেশের সম্পর্ক জনগণের উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে। সড়ক পরিকাঠামো উন্নয়নে সহযোগিতা করবে চিন। সমুদ্রসীমা রক্ষাতেও চিন যৌথভাবে কাজ করতে চায়।
এর পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, চিনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সফল বৈঠক হয়েছে। আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দুই দেশের সম্পর্ক আরও উন্নত হল। দুই দেশের মধ্যেকার বিভিন্ন চুক্তি ও সমঝোতার মধ্য দিয়ে সম্পর্ক আরও প্রগাঢ় ও শক্তিশালী হল। বাংলাদেশকে দারিদ্রমুক্ত করতে চিন সহযোগিতা করবে। আজ শুক্রবার স্থানীয় সময় বেলা সাড়ে এগারোটা নাগাদ চিনা প্রেসিডেন্টের বিমান পৌঁছয় ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। বিমানবন্দরে শি জিনপিংকে রেড কার্পেট সংবর্ধনা জানানো হয়।
আরও পড়ুন...
মুখোমুখি হাসিনা-জিনপিং, চিনের থেকে বড় সহযোগিতার আশায় ঢাকা
হাসিনার সঙ্গে বৈঠকের পর, হোটেল লা মেরিডিয়ানে চিনা প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন স্পিকার শিরিন শারমিন চৌধুরী। সাক্ষাত্ করেন বিএনপি চেয়ারপার্সন ও বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া-ও।
শি জিনপিং সন্ধে সাড়ে ৬টায় বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। বৈঠক শেষে রাষ্ট্রপতির দেওয়া নৈশভোজে যোগ দেবেন। সফরের দ্বিতীয় দিন শনিবার সকালে চিনা প্রেসিডেন্ট রাজধানীর উপকণ্ঠ সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে বীর শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন। এর পর সকাল ১০টায় ভারতের গোয়ার উদ্দেশে ঢাকা ছাড়বেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিমানবন্দরে তাঁকে বিদায় জানাবেন। গোয়ায় ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নেবেন শি জিনপিং।
বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) জানিয়েছে, শি জিনপিংয়ের সফরসঙ্গীদের মধ্যে রয়েছেন চিনের কমিউনিস্ট পার্টির পলিটব্যুরো সদস্য ওয়াং হুনিং, সিসিসিপিসির সদস্য সচিব লি জান শু, স্টেট কাউন্সিলর ইয়াং জিয়েছি, বিদেশমন্ত্রী ওয়াং জি, জাতীয় উন্নয়ন ও সংস্কার কমিশনমন্ত্রী জু শাওসি, অর্থমন্ত্রী লো জিয়েই, বাণিজ্যমন্ত্রী হু চেং, চিনের পিপলস ব্যাঙ্কের গভর্নর ঝো জিয়াওচুয়ান, আর্থিক ও অর্থনীতিবিষয়ক কার্যালয়ের পরিচালক লিউ হে, সিসিসিপিসির জেনারেল কার্যালয়ের নির্বাহী উপপ্রধান ডিং জুজিয়াং, বাংলাদেশে নিযুক্ত চিনের রাষ্ট্রদূত মা মিগকিয়াং, সিসিসিপিসির জেনারেল কার্যালয়ের উপপ্রধান ওয়াং শাওজুন এবং সহকারী বিদেশমন্ত্রী কং জুয়ানইউ।