টেলিনরকে কিনছে এয়ারটেল

প্রতিযোগিতার জল বাড়ছিল আগে থেকেই। রিলায়্যান্স জিও আসরে নামার পরে এখন ঢেউয়ের যা ধাক্কা, তাতে কঠিন ছোট মাছের পক্ষে সাঁতরে টিকে থাকা। এই পরিস্থিতিতে এয়ারটেলের কাছে নিজেদের ভারতীয় ব্যবসা বিক্রি করে আপাতত এ দেশ ছাড়ার কথা ঘোষণা করল টেলিনর।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৩:০১
Share:

প্রতিযোগিতার জল বাড়ছিল আগে থেকেই। রিলায়্যান্স জিও আসরে নামার পরে এখন ঢেউয়ের যা ধাক্কা, তাতে কঠিন ছোট মাছের পক্ষে সাঁতরে টিকে থাকা। এই পরিস্থিতিতে এয়ারটেলের কাছে নিজেদের ভারতীয় ব্যবসা বিক্রি করে আপাতত এ দেশ ছাড়ার কথা ঘোষণা করল টেলিনর।

Advertisement

এ দেশের টেলি পরিষেবা বাজারে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে টিকে থাকতে এয়ারসেল ও এমটিএস-কে কেনার ভাবনার কথা জানিয়েছে অনিল অম্বানীর রিলায়্যান্স কমিউনিকেশন্স (আর-কম)। স্পেকট্রাম ভাগাভাগি করছে জিও-র সঙ্গে। গাঁটছড়া বাঁধার জন্য গত এক মাস কথা চলছে ভোডাফোন ইন্ডিয়া ও আইডিয়ার। আর এ সবের মধ্যেই বৃহস্পতিবার টেলিনরের ব্যবসা কেনার কথা জানিয়ে দিল দেশের বৃহত্তম টেলি পরিষেবা সংস্থা এয়ারটেল।

নরওয়ের সংস্থা টেলিনর জানিয়েছে, এ জন্য ভারতী গোষ্ঠী (এয়ারটেল যার সংস্থা) কোনও নগদ অর্থ দেবে না। বরং তার বদলে দায় নেবে টেলিনরের বকেয়া স্পেকট্রাম-লাইসেন্স ফি এবং টাওয়ার ব্যবহারের খরচের। আর এয়ারটেল জানিয়েছে, চুক্তি অনুযায়ী ভারতে টেলিনরের সম্পত্তি, পরিকাঠামো ও গ্রাহক— সবই চলে আসবে তাদের হাতে।

Advertisement

কেন দুই সংস্থার এই সিদ্ধান্ত, তা এ দিন স্পষ্ট তাদের বক্তব্যেই। টেলিনরের শীর্ষ কর্তা সিগভে ব্রেক্কে বলেন, খুব ভেবেচিন্তেই ব্যবসা বেচে ভারত ছাড়ার এই সিদ্ধান্ত। কারণ, এ দেশে ব্যবসা টিকিয়ে রাখার জন্য আগামী দিনে যে-বিপুল লগ্নি জরুরি, তা কতটা লাভজনক হত, সে বিষয়ে সন্দিহান তাঁরা। আর এয়ারটেলের শীর্ষ কর্তা গোপাল ভিত্তল বলেন, ‘‘ডিজিটাল পরিষেবার লক্ষ্যপূরণ এবং কম দামে টেলিকম পরিষেবা দেওয়াই এই চুক্তির লক্ষ্য।’’

প্রতিযোগিতা আগে থেকে বাড়তে শুরু করলেও মুকেশ অম্বানীর সংস্থা জিও পা রাখার পরে আক্ষরিক অর্থেই আমূল বদলে যাচ্ছে টেলি পরিষেবা বাজারের ছবি। এক দিকে, দেশের মধ্যে মোবাইলে কথা বলতে (ভয়েস কল) কখনও টাকা লাগবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে জিও। অন্য দিকে, ৪জি ইন্টারনেট পরিষেবা (ডেটা) দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে জলের দরে। ৩১ মার্চ পর্যন্ত তো আবার তা মিলছে নিখরচায়। তার উপর দেশের প্রত্যন্ত প্রান্তেও ব্রডব্যান্ড সংযোগ পৌঁছে দিতে তার মাসুল কমানোর উপর জোর দিচ্ছে টেলিকম নিয়ন্ত্রক ট্রাই। সম্প্রতি একই কথা বলেছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এই অবস্থায় ছোট সংস্থাগুলির পক্ষে যেমন ব্যবসায় টিকে থাকাই শক্ত হচ্ছে, তেমনই লাভজনক ভাবে তা চালানোর জন্য গ্রাহক সংখ্যা বাড়াতে বড় সংস্থাগুলি মরিয়া। যাতে ব্যবসার অঙ্ক বাড়িয়ে মোটা মুনাফার মুখ দেখা সম্ভব হয়।

তা ছাড়া, টেলি পরিষেবা সংস্থাগুলি বিলক্ষণ বুঝেছে যে, আগামী দিনে যাবতীয় যুদ্ধ হবে নেট পরিষেবাকে ঘিরে। বিশেষত জিও আসার পরে তা দিনের আলোর মতো স্পষ্ট। মুকেশ অম্বানীর সংস্থাটি শুধু যে প্রতিদ্বন্দ্বীদের তুলনায় কম মাসুলে নেট পরিষেবার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে তা-ই নয়, মোবাইলে তারা দ্রুত গতির ৪জি ডেটা পৌঁছে দেওয়ার কথা বলছে ব্রডব্যান্ডের থেকেও কম খরচে। এই পরিস্থিতিতে তাই স্বাভাবিক ভাবেই নিজেদের টাওয়ারের সংখ্যা ও অপটিকাল ফাইবার কেব্‌ল বাড়াতে চাইছে সংস্থাগুলি। অথচ সংশ্লিষ্ট সূত্রে খবর, জিও-র টাওয়ার বসাতে এখন সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলি আটকে। তাই দ্রুত তা বাড়াতে চাইলে অন্য সংস্থার কাছ থেকে সরাসরি তা হাতে নেওয়া ছাড়া উপায় নেই। সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, এয়ারটেলের টেলিনরকে কেনার সিদ্ধান্তও মূলত এই দুই কারণেই।

ভোডাফোন-আইডিয়া জোট হলে, তাদের সম্মিলিত গ্রাহক সংখ্যা হওয়ার কথা ৩৭.৫ কোটি। দেশে সব থেকে বেশি। সে ক্ষেত্রে তারা পিছনে ফেলে দেবে এখন শীর্ষে থাকা এয়ারটেলকে (২৬.৯ কোটি)। কিন্তু দেশের সাত সার্কেলে টেলিনরের ব্যবসা কিনে নিলে, মোট ৩১.৪ কোটি গ্রাহক সংখ্যা নিয়ে অন্তত ভোডাফোন-আইডিয়ার ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলতে পারবে তারা। একই সঙ্গে, তাদের হাতে আসবে টেলিনরের ১৮০০ মেগাহার্ৎজ ব্যান্ডের ৪৩.৪ মেগাহার্ৎজ স্পেকট্রাম। সঙ্গে নরওয়ের সংস্থাটির সব টাওয়ারও। যা ব্যবহার করে ৪জি পরিষেবা দিতে সুবিধা হবে তাদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন