মসৃণ জিএসটির পথে বাধা ঘন-ঘন করের হার বদল। বিপত্তি বাঁধছে নিয়ম-কানুন লাগাতার পাল্টাতে থাকার জেরেও। কারণ, বারবার ওই বদলের সঙ্গে তাল মেলানো কঠিন হচ্ছে জিএসটি নেটওয়ার্কের (জিএসটিএন) পক্ষে। যা নতুন কর-ব্যবস্থার মেরুদণ্ড। তাই হয়রান ব্যবসায়ীরা। ঘুম ছুটছে নেটওয়ার্ক সামলানো লোকেদেরও। তড়িঘড়ি জিএসটি চালুর মাসুল গোনা নিয়ে এ ভাবেই কেন্দ্রের দিকে ফের তোপ দাগলেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র।
শনিবার দিল্লির প্রগতি ময়দানে আন্তর্জাতিক শিল্প-বাণিজ্য মেলায় অমিতবাবুর অভিযোগ, তাড়াহুড়োয় জিএসটি চালু করার জন্যই এখন এত ঘন ঘন করের হার বদলাতে হচ্ছে। ঘাম ছুটছে আমজনতা, ব্যবসায়ী এমনকী জিএসটিএন সামাল দেওয়া লোকেদেরও। তাঁর দাবি, এর খেসারতে কর সংগ্রহ কমেছে কেন্দ্র-রাজ্য উভয়েরই।
নতুন এই পরোক্ষ কর চালুর পর থেকেই লাগাতার তাতে বদল আনার কথা ঘোষণা করে চলেছে পরিষদ। কখনও রিটার্ন দাখিলের নিয়ম বদলের কথা বলা হয়েছে, তো কখনও এক লপ্তে করের হার পাল্টেছে বহু পণ্যের। যেমন, গুয়াহাটিতে পরিষদের বৈঠকের পরেই ২৮% কর চাপা পণ্যের সংখ্যা ২২৮ থেকে নেমে ছে ৫০টিতে। বদলেছে অন্যান্য হারও।
অমিতবাবুর কথায়, ‘‘ঘন ঘন করের হার বদলানোয় জিএসটি নেটওয়ার্ক নিয়ে যাঁরা কাজ করছেন তাঁরাও সমস্যায় পড়ছেন।’’
জিএসটিএন নিয়ে ব্যবসায়ীদের ক্ষোভের মুখে অন্যতম নির্মাতা ইনফোসিস-ও এর আগে বলেছিল, এই প্রকল্পে জিএসটি সুবিধা প্রদানকারী সংস্থা, আধার, কেন্দ্রীয় পরোক্ষ কর পর্ষদ, রাজ্যগুলির নানা রকম তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবস্থা ইত্যাদি অঙ্গাঙ্গী ভাবে যুক্ত। একে জটিল প্রকল্প এবং বহু পক্ষ জড়িত, তাতে আবার ঘন-ঘন নিয়ম বদল— সব মিলিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সহজ নয়। অর্থাৎ, পোর্টালে সমস্যার জন্য হঠাৎ-হঠাৎ পরিষদের নীতি বদলকেই কার্যত দায়ী করেছিল তারা।
অর্থমন্ত্রীর আরও অভিযোগ, কিছু পণ্যের দাম কমাতে ভীষণ ভাবে ‘লবি’ করা হচ্ছে। তাঁর মতে, ‘‘পণ্যে কর কমানো সমর্থন করি। কিন্তু তার পিছনে নির্দিষ্ট নীতি থাকা প্রয়োজন। ইচ্ছে মতো করা অনুচিত।’’
রাতারাতি এ ভাবে কর পাল্টানোয় ব্যবসায়ীদেরও সমস্যায় পড়তে হচ্ছে বলে তাঁর অভিযোগ। অনেকেরই প্রশ্ন, বেশি কর গুনে কেনা পণ্যের বেলায় সে ক্ষেত্রে কী হবে? কেন্দ্রীয় অর্থসচিব হাসমুখ আঢিয়া অবশ্য সম্প্রতি বলেছেন, ‘‘পুরনো করের হারে কেনা হয়েছে বলে দাম না-কমানোর যুক্তি দিয়ে কেউ ছাড় পাবেন না। কারণ, যে -সব পণ্যের দাম কমেছে, সেগুলির বাড়তি কর ফেরত দেওয়া হবে।’’ ‘ন্যাশনাল অ্যান্টি প্রফেটিং অথরিটি’ গড়ার কারণও মূলত সেটিই।
এ ছাড়া অমিতবাবুর অভিযোগ, জিএসটিতে রাজস্ব আদায় বৃদ্ধির যে আশা করা হয়েছিল, তা মেটেনি। তাঁর দাবি, অগস্ট-সেপ্টেম্বরে কেন্দ্রের কোষাগারে প্রায় ৬৫ হাজার কোটি টাকা কম ঢুকেছে। রাজ্যগুলির ক্ষেত্রে তা প্রায় ৩০ হাজার কোটি। তাঁর মতে, এটিরও অন্যতম কারণ জিএসটিএনে সমস্যা। সেখানে রিফান্ডের সমস্যাও যথেষ্ট বলে তাঁর দাবি।