গুজরাতে ঢালাও করছাড় শেয়ার, পণ্য বাজারে

ব্যবসা হারানো নিয়ে শঙ্কা মুম্বই এক্সচেঞ্জে

গুজরাতে আন্তর্জাতিক ফিনান্সিয়াল হাব-এর জন্য এক গুচ্ছ কর ছাড়ের কথা বাজেটে ঘোষণা করেছেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। আর এতেই সিঁদুরে মেঘ দেখছে দেশের প্রধান শেয়ার এবং কমোডিটি এক্সচেঞ্জগুলির সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন মহল। তাদের আশঙ্কা, প্রস্তাবগুলি মুম্বইয়ের শেয়ার বাজার এবং পণ্য এক্সচেঞ্জকে অস্তিত্বের সঙ্কটে ফেলতে পারে।

Advertisement

প্রজ্ঞানন্দ চৌধুরী

কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০১৬ ০৩:৫২
Share:

গুজরাতে আন্তর্জাতিক ফিনান্সিয়াল হাব-এর জন্য এক গুচ্ছ কর ছাড়ের কথা বাজেটে ঘোষণা করেছেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। আর এতেই সিঁদুরে মেঘ দেখছে দেশের প্রধান শেয়ার এবং কমোডিটি এক্সচেঞ্জগুলির সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন মহল। তাদের আশঙ্কা, প্রস্তাবগুলি মুম্বইয়ের শেয়ার বাজার এবং পণ্য এক্সচেঞ্জকে অস্তিত্বের সঙ্কটে ফেলতে পারে।

Advertisement

প্রস্তাব অনুযায়ী শেয়ার ও পণ্য বাজারে চালু থাকা বেশ কিছু কর ওই আর্থিক অঞ্চলে (যা গিফ্‌ট সিটি নামে পরিচিত) প্রযোজ্য হবে না। সেখানে স্টক এক্সচেঞ্জকে ডিভিডেন্ড বণ্টন করের আওতা থেকে বাদ রাখা হয়েছে। পাশাপাশি ন্যূনতম বিকল্প করের (মিনিমাম অলটারনেট ট্যাক্স বা ম্যাট) হার অর্ধেক করা হয়েছে। ফলে তা দাঁড়িয়েছে ৯%।

শুধু তাই নয়, সেখানকার শেয়ার বাজারে বিদেশি মুদ্রায় লেনদেনে সিকিউরিটিজ ট্রানজাকশন ট্যাক্স (এসটিটি) কার্যকর হবে না। একই ভাবে পণ্য লেনদেন কর বা কমোডিটি ট্রানজাকশন ট্যাক্সও (সিটিটি) দিতে হবে না। শুধু বিদেশি মুদ্রায় লেনদেনেই এই সুযোগ ঘোষণা করা হলেও মুম্বই শেয়ার বাজার মহলের আশঙ্কা, ওই সব করছাড়ের সুযোগ পাওয়ার জন্য বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলি তো বটেই, এমনকী বেশ কিছু ভারতীয় আর্থিক সংস্থা এবং বড় মাপের শেয়ার লেনদেন সংস্থাও গুজরাতে প্রস্তাবিত ওই এক্সচেঞ্জে বিদেশি মুদ্রায় লেনদেনেই আগ্রহী হবে। যার ফলে বাজার হারাতে পারে মুম্বইয়ের শেয়ার বাজার এবং কমোডিটি এক্সচেঞ্জ।

Advertisement

এ দিকে বাজেটের উপর ভর করে শেয়ার বাজারের ঘুরে দাঁড়ানোর আশায় জল ঢেলে দিয়েছেন জেটলি। হতাশ বাজারে দিনের শেষে সেনসেক্স পড়েছে ১৫২.৩০ পয়েন্ট। বাজার বন্ধের সময়ে সূচক এসে দাঁড়ায় ২৩,০০২ অঙ্কে।

সারা দিনই ধন্দে ছিল বাজার। বাজেট পেশ করার সময়েই শেয়ার পড়তে শুরু করে। অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তৃতা শেষ করার অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে দর হুড়মুড় করে পড়ে যায় প্রায় ৬৬০ পয়েন্ট। তবে বেলার দিকে বাজেটে বাজারের অনুকূলে কিছু বিষয় খুঁজে পাওয়ার পর সূচক সামান্য ঘুরে দাঁড়ায়।

বাজেটে দেশের উৎপাদন শিল্পকে উৎসাহ দেওয়ার মতো রসদ নেই বলে অবশ্য মন্তব্য করেছেন সিআইআই ন্যাশনাল কাউন্সিলের সদস্য দীপঙ্কর চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘হালে উৎপাদন খরচ দ্রুত বেড়ে গিয়েছে। আশা ছিল, তা কমানোর ব্যবস্থা বাজেটে থাকবে। কিন্তু হতাশ হয়েছি। আর্থিক সংস্কার কতটা হবে, তা নিয়েই এই বাজেট প্রশ্নচিহ্ন এঁকে দিয়েছে।’’ তবে ৩.৫ শতাংশে রাজকোষ ঘাটতিকে ধরে রাখার ঘোষণা ভারতের বাজারে বিদেশি লগ্নিকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে সহায়ক হবে বলে মনে করেন প্রবীণ বাজার বিশেষজ্ঞ অজিত দে।

ব্যাঙ্কগুলির অনুৎপাদক সম্পদ কমানোর পথের সন্ধান দিতেও জেটলি ব্যর্থ হয়েছেন বলেও মনে করছেন বন্ধন ব্যাঙ্কের এমডি চন্দ্রশেখর ঘোষ। তিনি বলেন, ‘‘অনুৎপাদক সম্পদ ৪ লক্ষ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এই সমস্যা মোকাবিলায় ২৫ হাজার কোটি টাকা যথেষ্ট নয়।’’

তবে গ্রামীণ ক্ষেত্র, সড়ক-সহ পরিকাঠামো উন্নয়নে যে-সব পদক্ষেপ জেটলি ঘোষণা করেছেন, তা বাজারকে চাঙ্গা হতে সাহায্য করবে বলে মনে করেন ক্যালকাটা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রাক্তন ডিরেক্টর এস কে কৌশিক।

বাজেটে রফতানি বাড়াতে যে-সব ব্যবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে, তার জেরে এ দিন ডলারে টাকার দাম বেড়েছে ২০ পয়সা। ফলে প্রতি ডলারের দাম দাঁড়ায় ৬৮.৪২ টাকা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন