ব্যাঙ্কে গচ্ছিত রেখে লকার ভাড়া মিটিয়ে যাওয়া বা বাড়িতে ফেলে রাখা নয়। এ বার লগ্নির হাতিয়ার হিসেবে সোনার উজ্জ্বলতা বাড়াতে চায় কেন্দ্র। সেই কারণেই ব্যাঙ্কের আয় বাড়াতে ও আমদানিতে রাশ টানতে কেন্দ্রের হাতিয়ার এ বার সোনা।
এক দিকে বাড়িতে, বিভিন্ন মন্দিরে পড়ে থাকা সোনা ব্যাঙ্কে জমা রেখে সাধারণ গ্রাহকের আয়ের পথ বাতলানো, অন্য দিকে এই ধাতুর প্রতি ভারতীয়দের চিরাচরিত টানকে কাজে লাগিয়ে স্বর্ণ বন্ড ছাড়ার প্রস্তাবে বুধবার সায় দিল কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। সঙ্গে থাকছে করছাড়ের সুবিধা। দু’টি প্রকল্পেই কেন্দ্র সুদ স্থির করবে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সঙ্গে পরামর্শ করে। তবে লগ্নির সময়ে সোনার মূল্য অনুসারেই ঠিক হবে সুদ, যা বেঁধে দেওয়া হতে পারে, বা পরিবর্তনশীলও হতে পারে। তবে সুদ আকর্ষণীয় না-হলে প্রকল্প জনপ্রিয় হবে না বলেই আশঙ্কা ব্যাঙ্কিং শিল্পের। শীঘ্রই এই দু’ধরনের প্রকল্প চালু হবে বলে এ দিন জানান কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। এ বারের বাজেটে দেওয়া প্রতিশ্রুতি মেনেই প্রকল্পগুলি ঘোষণা করে জেটলি বলেন, ‘‘সোনার উপর নির্ভর করে সঞ্চয় প্রকল্প আনলে তা অনেক বেশি নিরাপদ ও স্থিতিশীল হবে।’’
এই মুহূর্তে বাড়িতে-লকারে বা মন্দিরে পড়ে থাকা সোনার পরিমাণ সরকারি হিসেবে ২০ হাজার টন। প্রতি বছরে ভারতীয়দের সোনার চাহিদা ১ হাজার টন। গয়না গড়ানো, পুজো উপলক্ষে দান বা নিরাপদ লগ্নির মাধ্যম হিসেবে সোনার কদর বরাবরই। এই হলুদ ধাতুটি ব্যাঙ্কে জমা রাখার জন্য অনুমোদিত গোল্ড মানিটাইজেশন স্কিমের বৈশিষ্ট্য হল:
• গয়না, বার, যে কোনও আকারেই সোনা জমা দেওয়া যাবে
• ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান জমা রাখতে পারবে কমপক্ষে ৩০ গ্রাম
• মেয়াদ স্বল্প মেয়াদে ১-৩ বছর, মাঝারিতে ৫-৭, দীর্ঘ মেয়াদে ১২-১৫ বছর
• ভাঙানোর সময়ে সোনার মূল্য অনুসারে টাকা বা সোনা ফেরত দেবে ব্যাঙ্ক
• ব্যাঙ্ক গচ্ছিত সোনা গয়না ব্যবসায়ীদের বিক্রি করে আয় বাড়াবে
• সোনা কী ভাবে হাতে এসেছে, সেই তথ্য গ্রাহককে দিতে হবে।
সোনাকে যাঁরা লগ্নির গন্তব্য করতে চান, তাঁদের জন্য আনা হবে বন্ড। প্রকল্পের ধরন সঙ্গে দেওয়া হল:
১) ভারতীয় নাগরিক বা সংস্থাই তা কিনতে পারবে
২) ৫, ১০, ৫০ ও ১০০ গ্রাম সোনার জন্য তা ইস্যু হবে
৩) মেয়াদ ৫ থেকে ৭ বছর
৪) বছরে ৫০০ গ্রামের বেশি কেনা যাবে না
৫) এক্সচেঞ্জে লেনদেন হবে এই বন্ড
৬) ডিম্যাট বা কাগজে তা রাখা যাবে
৭) থাকবে সরকারি গ্যারান্টি
৮) মূলধনী লাভকর মকুবের প্রস্তাব।
জমা সোনা দিয়ে গয়না ব্যবসায়ীদের চাহিদা কিছুটা মেটানো গেলে আমদানি নির্ভরতা কমবে বলেই কেন্দ্রের আশা। ফলে চলতি খাতে বিদেশি মুদ্রার লেনদেন ঘাটতিও নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের স্বর্ণভাণ্ডার বাড়াতেও তা সাহায্য করবে, য়ার জেরে সরকারের ঋণ নেওয়ার খরচ কমবে।