শাস্তি ও পুরস্কার বাড়াবে খরচ, নারাজ গাড়ি শিল্প 

দেশের রাস্তায় কবে থেকে শুধুই বৈদ্যুতিক গাড়ি চলবে, তা নিয়ে বিতর্ক বেধেছে। দূষণ ও আমদানি নির্ভর জ্বালানির খরচ কমাতে কেন্দ্রের একাধিক মন্ত্রী ও নীতি আয়োগ ২০৩০ সালের লক্ষ্যমাত্রার কথা বললেও তা বাস্তবোচিত নয় বলে দাবি গাড়ি শিল্পের।

Advertisement

দেবপ্রিয় সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৫:২৩
Share:

গাড়ি থেকে দূষণ ছড়ালে জরিমানা (ফি)। আর তা না হলে মিলবে ছাড় (রিবেট)। দূষণ হ্রাসের উপযুক্ত গাড়ি তৈরিতে সংস্থাগুলিকে উৎসাহিত দিতে ফি আর রিবেটের ওই দ্বৈত কৌশল— ‘ফিবেট’ নীতি তৈরির প্রস্তাব দিয়েছিল নীতি আয়োগ। সাধারণ ভাবে তাতে আপত্তি না থাকলেও গাড়ি শিল্পের দাবি, এমনিতেই এখন সর্বোচ্চ হারে জিসএটি চাপে গাড়ির উপর। তা সরলীকরণের আগে ফিবেটের মতো পদক্ষেপ করলে হিতে বিপরীত হবে।

Advertisement

দেশের রাস্তায় কবে থেকে শুধুই বৈদ্যুতিক গাড়ি চলবে, তা নিয়ে বিতর্ক বেধেছে। দূষণ ও আমদানি নির্ভর জ্বালানির খরচ কমাতে কেন্দ্রের একাধিক মন্ত্রী ও নীতি আয়োগ ২০৩০ সালের লক্ষ্যমাত্রার কথা বললেও তা বাস্তবোচিত নয় বলে দাবি গাড়ি শিল্পের। এর মধ্যে আমেরিকার রকি মাউন্টেন ইনস্টিটিউটের সঙ্গে যৌথ ভাবে ফিবেট সংক্রান্ত রিপোর্ট তৈরি করেছে নীতি আয়োগ। অস্ট্রিয়া, ডেনমার্ক, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, অন্টারিও (কানাডা), সিঙ্গাপুরের মতো দেশের ফিবেট নীতির কথা উঠে এসেছে সেখানে।

কিন্তু এই নীতির সহায়ক পরিবেশ ভারতে এখনও তৈরি হয়নি বলে দাবি গাড়ি শিল্পের সংগঠন সিয়ামের। তাদের বক্তব্য, দূষণ কমানোর যুক্তিতে ফিবেটে দূষণকারী গাড়ির উপর বাড়তি কর বসানোর কথা বলা হচ্ছে। অথচ এখন গাড়ির উপরেই জিএসটির হার সবচেয়ে বেশি, ২৮%। এর উপর ২২% পর্যন্ত সেস চাপে। আর রাজ্যের কর নিয়ে সব মিলিয়ে কখনও কখনও তা ৭০ শতাংশে পৌঁছে যায়। বড় ডিজেল গাড়ির ক্ষেত্রে জরিমানা স্বরূপ দিতে হয় আরও কর। কার্যত বাড়তি ফি এখনই দিতে হয় গাড়ি শিল্পকে, যা ফিবেটেরই নামান্তর। তা হলে নতুন ভাবে আরও কর চাপানোর অর্থ কী, প্রশ্ন সিয়ামের।

Advertisement

পাশাপাশি ওই রিপোর্টে যে সব দেশের ফিবেট নীতির কথা বলা হয়েছে, সেখানে করের হার অনেক কম। ফলে সেখানে অল্প কর চাপালেও তা বাজারের চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বলে দাবি সিয়ামের। তাই ভারতেও আগে গাড়ির কর কমানোর দাবি করেছে তারা।

গাড়ি শিল্পের সংগঠনটির মতে, বৈদ্যুতিক গাড়ির উপর কর যেমন অনেক কম, ১২%, তেমনই গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ আমদানিতেও ছাড় মেলে। ফেম প্রকল্পে ছাড় মেলে গাড়ির দামেও। ফলে প্রথাগত জ্বালানির গাড়ির উপর করের বোঝা না বাড়িয়েও বৈদ্যুতিক গাড়ির চাহিদা বাড়ানোর নানা ব্যবস্থা এখনই রয়েছে। বরং তাদের দাবি, এখন পরিবেশ দূষণের যুক্তিতে যে বাড়তি আয় সরকার করে, তার সবটাই নতুন ধরনের উন্নত গাড়িকে ছাড় দিতে ব্যবহার করা হোক। তা হলে ক্রেতার পক্ষে সেই গাড়ি কেনা যেমন সহজ হবে, তেমনই সেই গাড়ির চাহিদা বাড়লে প্রযুক্তি উন্নয়নও সহজতর হবে।

বৈদ্যুতিক গাড়ির প্রয়োজনীয়তা মানলেও গোড়া থেকেই সে জন্য দীর্ঘ মেয়াদি নীতি ও উপযুক্ত পরিবেশ আগে গড়ার উপর জোর দিয়েছে গাড়ি শিল্প। ফিবেটের প্রসঙ্গেও তাদের বক্তব্য, নীতি আয়োগের রিপোর্টে উল্লিখিত ওই সব দেশে বৈদ্যুতিক গাড়ির দীর্ঘ মেয়াদি নীতি রয়েছে। ভারতেও কর কাঠামোর সরলীকরণের পাশাপাশি স্পষ্ট নীতি ও সেই ধরনের সহায়ক পরিবেশ তৈরির আগে শুধু ফিবেটের উপর জোর দিলে ঘোড়ার আগে গাড়ি জুড়ে দেওয়ার সামিল হবে বলে দাবি সিয়ামের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন