লোকসভা ভোটের বাদ্যি বাজা শুরু হয়ে গিয়েছে বলে কথা। ভোটারদের মন জয়ে দরাজ হাতে খরচ করা যাবে, এমনটাই আশা করছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা বিজেপি নেতারা। কিন্তু সেপ্টেম্বর ত্রৈমাসিকে বৃদ্ধি ৭.১ শতাংশে নেমে আসায় চিন্তায় পড়েছে অরুণ জেটলির অর্থ মন্ত্রক। বলা ভাল, মোদী সরকারই।
ভোটারদের মন জয়ের লক্ষ্যে বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পে ছড়ানোর টাকা কোথা থেকে আসবে? ভোটের আগের বছরে বৃদ্ধি যদি অন্তত ৭.৫% না থাকে, তা হলে কড়া প্রশ্নের মুখে পড়তে হবে মোদী সরকারকে। এ দিকে রাজকোষ ঘাটতিতেও লাগাম পরিয়ে রাখতে হবে। অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি কোনও বারই রাজকোষ ঘাটতির লক্ষ্য ছুঁতে পারেননি। কার্যত প্রতিবারই বাজেটে ঘাটতির লক্ষ্যমাত্রা পিছিয়ে দিয়েছেন পরের বাজেটের জন্য। এ বারও আর্থিক বছরের প্রথম সাত মাসেই ঘাটতি সারা বছরের ঘাটতির লক্ষ্যমাত্রাকে ছাপিয়ে গিয়েছে। এ বার বৃদ্ধির হার কমায় রাজস্ব আয়ও কমার আশঙ্কা।
ঘাটতির কথা মাথায় রাখতে গেলে পরিকাঠামোয় খরচ কমাতে হবে। তাতে বৃদ্ধি আরও কমতে পারে। আবার পরিকাঠামোয় টাকা না ঢাললে, ধাক্কা খেতে পারে বৃদ্ধি। ফলে অরুণ জেটলির বাজেটের অঙ্কই এখন গুলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা।
সেপ্টেম্বর ত্রৈমাসিকে বৃদ্ধি কমার পরেই আর্থিক বিষয়ক সচিব সুভাষচন্দ্র গর্গ বলে ফেলেছিলেন, ব্যাপারটা হতাশাজনক। অর্থ মন্ত্রকের কর্তারাও মানছেন, কৃষি থেকে শিল্প, নির্মাণ থেকে পরিষেবা— কোনও ক্ষেত্রেই অর্থনীতির ছবি আশাব্যঞ্জক নয়।
এ নিয়ে সরকারকে বিঁধেছেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধী। কটাক্ষ করতে ছাড়েননি প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমও। কৃষকরা বারবার মোদী সরকারের বিরুদ্ধে রাজপথে নামছেন। বৃদ্ধির হিসেবও বলছে, কৃষি ক্ষেত্রে বৃদ্ধির হার বাড়লেও চাষিদের আয় কমেছে। আবার তেমন আশার আলো নেই কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রেও।
আশার কথা শোনাচ্ছেন না অর্থনীতিবিদরাও। তাঁদের মতে, আগামী ছ’মাসেও বৃদ্ধি নিয়ে খুব আশাবাদী না হওয়াই ভাল। মোদী সরকারের দাবি ছিল, বৃদ্ধি ৭.৪ শতাংশের বেশি হবে। কিন্তু জুলাই-সেপ্টেম্বরের বৃদ্ধি সে আশায় জল ঢেলেছে।
চলতি অর্থবর্ষের প্রথম তিন মাসে বৃদ্ধি ছিল ৮.২%। চিদম্বরমের মতে, ‘‘তা হয়েছিল গত বছরের এপ্রিল-জুনে বৃদ্ধির হার কম থাকায়। ...প্রত্যাশা মতোই পরের তিন মাসে বৃদ্ধি ১ শতাংশ বিন্দু কমেছে। পরের ছ’মাসেও বৃদ্ধি এমনই থাকবে।’’
আইসিআইসিআই সিকিউরিটিজের মুখ্য অর্থনীতিবিদ এ প্রসন্নের মতে, ‘‘একমাত্র আশার আলো অশোধিত তেলের দাম কমা। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সুদ নীতিও অপরিবর্তিত। ফলে বাজারে কেনাকাটা, পরিকাঠামোয় বিনিয়োগ বাড়তে পারে। তা সত্ত্বেও সারা বছরে বৃদ্ধি বড়জোর ৭.৩% ছোঁবে বলেই আমাদের ধারণা।’’