কর্মী প্রভিডেন্ট ফান্ড (ইপিএফ)-এর সুদ কমিয়ে আনার পরে এ বার নিয়োগকারীর দেয় টাকার অঙ্কও কমাতে উদ্যোগী কেন্দ্রীয় সরকার।
এই সংক্রান্ত প্রস্তাব তারা কর্মী প্রভিডেন্ট ফান্ড সংগঠনের অছি পরিষদের কাছে পাঠিয়েছে। পরিষদের আগামী বৈঠকেই বিষয়টি উঠবে।
ইপিএফে কিছু ক্ষেত্র ছাড়া বর্তমানে কর্মীদের বেতন (মূল বেতন এবং মহার্ঘ ভাতা)-এর ১২% করে পিএফ তহবিলে জমা দিতে হয় নিয়োগকারীকে। কেন্দ্রীয় সরকারের প্রস্তাব, ১২% থেকে কমিয়ে তা ১০% করা হোক। প্রস্তাব কার্যকর হলে অবসরের সময়ে কর্মীরা পিএফ খাতে এখন যে-পরিমাণ টাকা পান, তার থেকে কম পাবেন।
নিয়োগকারীর অবদান কমানোর যুক্তি কী?
প্রথমত, ইপিএফ সংগঠন সূত্র থেকে জানা গিয়েছে, কিছু বেসরকারি সংস্থা, ন্যাশনাল পেনশন সিস্টেম (এনপিএস) ও কর্মীদের অন্য কিছু সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পে নিয়োগকারীকে যে-পরিমাণ টাকা দিতে হয়, তার সঙ্গে সামঞ্জস্য আনার জন্যই পিএফে নিয়োগকারীর জমা কমাতে চায় কেন্দ্র।
দ্বিতীয়ত, সম্প্রতি বেশ কিছু কেন্দ্রীয় সরকারি প্রকল্পের (অঙ্গনওয়াড়ি, মিড-ডে মিল ইত্যাদি) কর্মীদের পিএফের আওতায় আনতে উদ্যোগী হয়েছে কেন্দ্র। ওই সব ক্ষেত্রে হয় কেন্দ্রীয় বা রাজ্য সরকারকেই নিয়োগকারী হিসেবে পিএফ খাতে টাকা জমা করতে হবে। এর জন্য সরকারের উপর যে-আর্থিক দায় বর্তাবে, তার বোঝা লাঘব করাও নতুন ওই প্রস্তাবের অন্যতম কারণ বলে পিএফ সূত্রের খবর।
প্রসঙ্গত, বর্তমানে কর্মীদের সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প হিসাবে পরিচিত ন্যাশনাল পেনশন সিস্টেম (এনপিএস) প্রকল্পে সরকারি কর্মীদের পেনশন তহবিলে নিয়োগকারী হিসাবে সরকার বেতনের ১০% করেই জমা দেয়। কর্মীদের বেতন থেকেও কাটা হয় ১০% টাকা। এ ছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা এবং ২০০৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর বা তার আগে নিযুক্ত যে-সব কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মী পেনশনের আওতায় নেই, তাঁদের পিএফ খাতেও নিয়োগকারী হিসেবে কেন্দ্রীয় সরকার বেতনের ১০% টাকাই জমা দেয়। বেসরকারি কিছু শিল্প ক্ষেত্রেও নিয়োগকারীরা পিএফ খাতে ১০% টাকাই জমা দেন। যেমন, পাট, বিড়ি, ইট-ভাটা, গুয়ারগাম, কয়ার বা নারকোলের ছোবড়া শিল্প।
এ ছাড়াও যে-কোনও রুগ্ণ শিল্প, যে-সব সংস্থার লোকসানের পরিমাণ তার নিট সম্পদের সমান বা তার থেকে বেশি এবং যেখানে কর্মী সংখ্যা ২০ জনের কম, সেখানেও নিয়োগকারী কর্মীদের পিএফ খাতে ১০% টাকাই জমা দিয়ে থাকেন। নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের উপর পিএফ খাতে আর্থিক বোঝা কমানোও নতুন ওই প্রস্তাব দেওয়ার অন্যতম কারণ বলে পিএফ সূত্র থেকে জানা গিয়েছে।
বর্তমানে কর্মীদের বিভিন্ন কল্যাণমূলক প্রকল্পে নিয়োগকারীকে প্রতিটি কর্মীর বেতনের ১৭.৯০% টাকা জমা দিতে হয়। এর মধ্যে পিএফ ছাড়াও রয়েছে পিএফের পেনশন, পিএফের বিমা বা এমপ্লয়িজ ডিপজিট লিঙ্কড ইনশিওরেন্স এবং ইএসআই।
অছি পরিষদের আগামী বৈঠকে প্রস্তাবটি পেশ করা হলে কর্মী ইউনিয়নের প্রতিনিধিরা এর তীব্র বিরোধিতা করবেন। এ কথা জানান অছি পরিষদে ইউনিয়নের প্রতিনিধি এআইইউটিইউসি-র শঙ্কর সাহা এবং আইএনটিইউসি-র রমেন পান্ডে। শঙ্করবাবু বলেন, ‘‘পিএফের লক্ষ্য কর্মীদের সামাজিক সুরক্ষা দেওয়া। নিয়োগকারীর দেয় টাকার পরিমাণ কমিয়ে দেওয়া হলে সেই সুরক্ষার দিকটিই দুর্বল হবে। কারণ, অবসরের পরে তাঁরা হাতে এখনকার থেকে কম টাকা পাবেন। অছি পরিষদে আমরা এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করব।’’ রমেনবাবুর মতে, ‘‘এই প্রস্তাব শ্রমিকের স্বার্থ ক্ষুণ্ণ করে মালিকের স্বার্থরক্ষারই সরকারি উদ্যোগ।’’
তবে স্বাভাবিক ভাবেই নিয়োগকারীদের প্রতিনিধিরা এই প্রস্তাব সমর্থন করবেন বলে সংশ্লিষ্ট মহলের ধারণা। এ ব্যাপারে অছি পরিষদে নিয়োগকারীদের অন্যতম প্রতিনিধি জে পি চৌধুরী বলেন, ‘‘নতুন কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকারের ওই প্রস্তাব বিশেষ ভাবে সুবিধাজনক হবে। তা ছাড়া বর্তমানে সংগঠিত ক্ষেত্রে কর্মীদের বেতনের প্রায় ১৮% টাকা তাদের বিভিন্ন কল্যাণমূলক প্রকল্পে নিয়োগকারীকে জমা দিতে হয়। এটাও অনেক ক্ষেত্রেই নিয়োগকারীর উপর বাড়তি বোঝার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।’’
তবে কর্মী প্রতিনিধিরা বিরোধিতা করলেও তা ধোপে টেকার সম্ভানা খুবই কম। কারণ, অছি পরিষদে নিয়োগকারী এবং সরকারি প্রতিনিধি একজোট হয়ে এই প্রস্তাবের সমর্থনে ভোট দিলে কর্মী প্রতিনিধিরা সংখ্যালঘু হয়ে পড়ার সম্ভাবনাই বেশি।
এক নজরে প্রভিডেন্ট ফান্ড
এমপ্লয়িজ প্রভিডেন্ট ফান্ড বা কর্মচারী ভবিষ্যনিধি প্রকল্প (ইপিএফ)
• আওতায় কারা: ইপিএফ আইনের আওতায় থাকা সিংহভাগ বেসরকারি এবং রাষ্ট্রায়ত্ত
সংস্থার কর্মী।
• নিয়োগকারীর দেয় হার: ১২%
কনট্রিবিউটরি প্রভিডেন্ট ফান্ড (সিপিএফ)
• আওতায় কারা: পেনশনের আওতায় না-থাকা ২০০৩ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে যোগ দেওয়া কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীরা
নিয়োগকারীর দেয় হার: ১০%
ন্যাশনাল পেনশন সিস্টেম (এনপিএস)
• আওতায় কারা: যে-সব কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মী ২০০৪ সালের ১ জানুয়ারি বা তার পরে চাকরিতে যোগ দিয়েছেন।
• নিয়োগকারীর দেয় হার: ১০%
অন্যান্য
• পাট, বিড়ি, ইট-ভাটা, গুয়ারগাম, কয়ার শিল্প
• যে-সব সংস্থায় কর্মী সংখ্যা ২০ বা তার কম
• যে-সব সংস্থায় লোকসানের পরিমাণ তার নিট সম্পদের সমান বা তার বেশি
• রুগ্ণ শিল্প
• নিয়োগকারীর দেয় হার: ১০%