আধার নম্বর তৈরিতে গতি আনতে উদ্যোগী কেন্দ্র

রান্নার গ্যাসে ভর্তুকি সমেত যাবতীয় সরকারি সুবিধা পেতে আধার নম্বর বাধ্যতামূলক করার উদ্যোগ ঘিরে সম্প্রতি উত্তাল হয়েছে রাজ্যসভা।

Advertisement

দেবপ্রিয় সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ৩১ জুলাই ২০১৬ ০৩:০৬
Share:

রান্নার গ্যাসে ভর্তুকি সমেত যাবতীয় সরকারি সুবিধা পেতে আধার নম্বর বাধ্যতামূলক করার উদ্যোগ ঘিরে সম্প্রতি উত্তাল হয়েছে রাজ্যসভা। বিরোধীরা একজোটে তীব্র সমালোচনায় বিঁধেছে কেন্দ্রকে। আপত্তির অন্যতম কারণ, এখনও অনেকেই তা হাতে পাননি। উল্টো দিকে, আধারকে নাগরিক পরিচয় হিসেবে বিপুল গুরুত্ব দেওয়া সত্ত্বেও তা তৈরি নিয়ে তুমুল টালবাহানায় বীতশ্রদ্ধ সাধারণ মানুষও। অনেকের অভিযোগ, নম্বর পাওয়া দূর অস্ত্, ছবি তোলারই সুযোগ মেলেনি। এই পরিস্থিতিতে অস্বস্তি কাটানোর মরিয়া চেষ্টায় এ বার ফের নড়েচড়ে বসেছে কেন্দ্র। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় আধার কার্ড তৈরিতে গতি আনতে আরও বেশি ছবি তোলার ক্যাম্প চালু চালু করছে তারা।

Advertisement

জনগণনা দফতরের পাশাপাশি বছর চারেক পরে আবার এই কাজের বাড়তি দায়িত্ব পেয়েছেন আধার কর্তৃপক্ষ (ইউআইডিএআই)। সব ঠিকঠাক চললে ক্যাম্পগুলি চালু হয়ে যাবে অগস্টের মধ্যেই। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, জনগণনা দফতর ও ইউআইডিএআই, দু’পক্ষই ক্যাম্প চালাবে। তবে কোন এলাকা কার হাতে থাকবে, তা চূড়ান্ত হয়নি।

এখন রাজ্যে আধারের জন্য ছবি তোলা, চোখের মণি ও আঙুলের ছাপ-সহ দরকারি তথ্যগুলি সংগ্রহ করতে ক্যাম্প করে জনগণনা দফতর। তাদের তালিকায় যাঁদের নাম থাকে, তাঁদের বাড়িতে গিয়ে দফতরের প্রতিনিধি ক্যাম্পের কথা জানান। অনেকের অভিযোগ, তাঁরা এই বার্তা পাননি। তবে দফতরের দাবি, কিছু ক্যাম্পে নাগরিকরা সরাসরিও যেতে পারেন।

Advertisement

ইউআইডিএআইয়ের ক্যাম্পে ছবি তুলতে যাওয়ার জন্য অবশ্য আগাম বার্তা পাওয়ার দরকার পড়বে না, দাবি সংস্থাটির এক কর্তার। সে ক্ষেত্রে স্বীকৃত পরিচয়পত্র ও ঠিকানার প্রমাণ নিয়ে নাগরিকরা নিজেরাই সেখানে চলে যেতে পারবেন। এমনকী তাদের ক্যাম্পে আধার তথ্য বদল বা সংশোধনও করা যাবে। সংস্থাটির রাঁচির আ়ঞ্চলিক দফতর জানিয়েছে, প্রতিটি ব্লকে স্থায়ী ক্যাম্প ছাড়াও ৩৪০টি অস্থায়ী ক্যাম্প ঘুরে ঘুরে ছবি তুলবে। প্রতিটি পঞ্চায়েতেও যাবে তারা।

উল্লেখ্য, ২০১১ থেকে ২০১২ সালের মার্চ পর্যন্ত ইউআইডিএআই এ রাজ্যে ২০.৫ লক্ষ নাগরিকের ছবি তোলা ও তথ্য সংগ্রহের কাজ করেছিল। তারপর দায়িত্ব পায় জনগণনা দফতর। তারা প্রায় ৯১ শতাংশের তথ্য নিয়ে আধার নম্বর তৈরির জন্য ইউআইডিএআই-কে পাঠিয়েছে। এখন কলকাতা ও হাওড়া পুরসভার বরো অফিস, অন্য পুরসভা ও জেলাগুলির বিভিন্ন এলাকায় ক্যাম্প চালাচ্ছে তারা। এখনও পর্যন্ত রাজ্যের ৮২% মানুষের ওই নম্বর তৈরি হয়েছে জানিয়ে আধার কর্তৃপক্ষের দাবি, যাঁরা বাকি তাঁদের বেশির ভাগই ১৮ বছরের কম বয়সী।

এরই মধ্যে সম্প্রতি পেট্রোলিয়াম মন্ত্রক জানিয়েছিল, রান্নার গ্যাসের সংস্থায় আধার নম্বর নথিভুক্ত না থাকলে ১ জুলাই থেকে আর ভর্তুকি পাবেন না গ্রাহক। তবে যাঁরা এখনও তা করাননি ৩০ সেপ্টেম্বের পর্যন্ত সময় পাবেন তাঁরা। মাঝের তিন মাসে যতটা ভর্তুকি প্রাপ্য হবে, তা-ও পেয়ে যাবেন। কিন্তু ৩০ সেপ্টেম্বরের পরে ওই নম্বর দিলে ওই তিন মাসের প্রাপ্য মিলবে না। যদিও পরবর্তীকালে আধার নম্বর নথিভুক্ত করালে, সেই সময় থেকে ফের ভর্তুকি পাওয়ার যোগ্য হবেন তিনি।

এতেই মাথায় হাত বহু গ্রাহকের। অবস্থা দেখে কিছু গ্যাসের ডিলার উদ্যোগী হয়ে নিজেদের দোকানে ছবি তোলার ক্যাম্প চালু করেছেন। এ রকমই এক ডিলার তথা অল ইন্ডিয়া এলপিজি ডিস্ট্রিবিউটর ফেডারেশনের অতিরিক্ত সাধারণ সম্পাদক বিজনবিহারী বিশ্বাস বলেন, ‘‘গ্রাহকেরা এ নিয়ে জানতে চাইছেন। সরকার স্বীকৃত সংস্থাকে ক্যাম্পের জন্য জায়গা দিয়েছি। রোজ গড়ে ২০০-২৫০ জনের ছবি তোলা ও তথ্য সংগ্রহ হচ্ছে।’’

দিন তিনেক আগে রাজ্যসভায় বিক্ষোভ-প্রতিবাদের মুখে দাঁড়িয়ে কেন্দ্রের তরফে যদিও আশ্বাস ছিল, আধার কার্ড এখনও বাধ্যমূলক নয়। তবে তা যদি জরুরি হয়, সেটা বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানানোর প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়। ফলে রান্নার গ্যাসের জন্য আধারের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে এখনও ধন্দে সাধারণ মানুষ।

এত দিন দু’ভাবে ভর্তুকি মিলত। আধার নম্বর দিয়ে ও তা বাদে শুধু ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের তথ্যের ভিত্তিতে। ইন্ডিয়ান অয়েল সূত্রে খবর, ইন্ডেন, ভারত গ্যাস ও এইচপি গ্যাস, তিন সংস্থা মিলিয়ে এ রাজ্যে রান্নার গ্যাসের মোট গ্রাহক ১ কোটি ১৪ লক্ষ ২১ হাজার। এর ৫৫% আধার নম্বর নথিভুক্ত করেছেন। ৫% আধার নম্বর বা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট, কোনও তথ্যই দেননি। আর বাকি ৪০% গ্রাহক শুধু ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে এত দিন ভর্তুকির টাকা পাচ্ছিলেন। তেল সংস্থা ও ডিলারদের একাংশের দাবি, অনেকের আধার নম্বর থাকলেও তা হয়তো জমা দেননি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন