চা পাতার দামে অনিয়মের অভিযোগ ছোট চাষিদের

আইন সংশোধন করে ক্ষুদ্র চা চাষিদের উৎপাদন করা চা পাতার দামে নজরদারির জন্য কমিটি গড়ার বিজ্ঞপ্তি বেরিয়েছে দেড় মাস আগে। নতুন আইনেই বলা হয়েছে, বটলিফ কারখানাগুলিকে ন্যূনতম ৭০% চা নিলামের মাধ্যমেই বিক্রি করতে হবে। কিন্তু এখনও সেই প্রক্রিয়ার কিছুই শুরু হয়নি বলে অভিযোগ তুলে কেন্দ্রীয় বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনকে চিঠি দিল ক্ষুদ্র চা চাষিদের সংগঠন সিস্টা (কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান স্মল টি গ্রোয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন)।

Advertisement

দেবপ্রিয় সেনগুপ্ত

কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ জুন ২০১৫ ০৩:৫৯
Share:

আইন সংশোধন করে ক্ষুদ্র চা চাষিদের উৎপাদন করা চা পাতার দামে নজরদারির জন্য কমিটি গড়ার বিজ্ঞপ্তি বেরিয়েছে দেড় মাস আগে। নতুন আইনেই বলা হয়েছে, বটলিফ কারখানাগুলিকে ন্যূনতম ৭০% চা নিলামের মাধ্যমেই বিক্রি করতে হবে। কিন্তু এখনও সেই প্রক্রিয়ার কিছুই শুরু হয়নি বলে অভিযোগ তুলে কেন্দ্রীয় বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনকে চিঠি দিল ক্ষুদ্র চা চাষিদের সংগঠন সিস্টা (কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান স্মল টি গ্রোয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন)।

Advertisement

প্রসঙ্গত, নব্বইয়ের দশকে আকর্ষণীয় দামের কারণে অনেক ছোট কৃষকই চা চাষ শুরু করেন। কিন্তু চা প্রক্রিয়া করার জন্য বড় বাগানের মতো নিজস্ব কারখানা না-থাকায় তাঁরা অনেক ক্ষেত্রেই পাতা জোগান দেন বটলিফ কারখানায়। যারা চা পাতা কিনে তা প্রক্রিয়া করে বিক্রি করে। পাশাপাশি, ক্ষুদ্র চা চাষিরা বড় চা বাগানের কারখানাতেও চা পাতা বিক্রি করেন। বড় বাগানগুলিকে নিয়ে তেমন অভিযোগ না উঠলেও দাম না-পাওয়ার জন্য বটলিফ কারখানাগুলির বিরুদ্ধেই বেশি অভিযোগ তোলেন ক্ষুদ্র চা চাষিদের একাংশ। যদিও বটলিফ কারখানাগুলির পাল্টা দাবি, দাম পুরোটাই নির্ভর করে পাতার গুণমানের উপর। যাঁরা ভাল চা পাতা দেন, তাঁরা ভাল দামই পান।

এই অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগের প্রেক্ষিতে ২০০৪-এ দাম নির্ধারণের জন্য একটি ফর্মুলা স্থির করেছিল টি বোর্ড। পাশাপাশি নিলামের মাধ্যমে চা বিক্রির উপর জোর দেওয়া হয়েছিল। কারণ নিলামে চায়ের যে-দাম উঠবে, তার ভিত্তিতেই ওই ফর্মুলা মেনে চা পাতার দামের ভাগ পাবেন ক্ষুদ্র চা চাষিরা। কিন্তু সেটি তেমন কার্য়কর হয়নি।

Advertisement

এপ্রিলে চা বিপণন আইন সংশোধন করে টি বোর্ড জানায়, ক্ষুদ্র চাষিদের প্রাপ্য দামের বিষয়টি নজরদারির জন্য জেলা স্তরে একটি কমিটি থাকবে। পাশাপাশি বটলিফ কারখানাগুলিকে ন্যূনতম ৭০% চা নিলামেই বিক্রি করতে হবে। তার কারণ, নিলাম কেন্দ্রের মাধ্যমে চা বিক্রি হলে কোন চায়ের দাম কতটা উঠল, তা স্পষ্ট হয়। খোলা বাজারে বিক্রি হলে দাম নিয়ে নির্দিষ্ট ধারণা করা যায় না।

শিলিগুড়ি চা নিলাম কেন্দ্রের সচিব পঙ্কজ কুমার দাস জানান, গত অর্থবর্ষে সেখানে বটলিফ কারখানাগুলির ২.৪ কোটি কেজি চা নিলামে বিক্রি হয়েছিল। আগের বছর তা ছিল ২.১ কোটি কেজি। চা শিল্প মহল সূত্রের খবর, উত্তরবঙ্গে যত চা প্রক্রিয়া করা হয়, তার ২৫-৩০% তৈরি হয় বটলিফ কারখানায়। শিলিগুড়ির পাশাপাশি কলকাতার চা নিলাম কেন্দ্রেও বটলিফ কারখানার অল্প কিছু চা নিলামে বিক্রি হয়। সব মিলিয়ে চা শিল্পের হিসেবেই, বটলিফ কারখানাগুলি যত চা তৈরি করে, তার ৩০ শতাংশের কিছু বেশি চা নিলাম কেন্দ্রে পৌঁছয়। বাকিটা খোলা বাজারেই বিক্রি হয়। সিস্টা-র প্রেসিডেন্ট বিজয়গোপাল চক্রবর্তীর অভিযোগ, এর ফলে চায়ের সঠিক দাম নির্ধারণ করা অসম্ভব। ফলে চা পাতার দামও ঠিকঠাক পান না ক্ষুদ্র চা চাষিরা। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে তাঁর দাবি, নতুন আইন কার্যকর হলে চা পাতার সঠিক দাম নির্ধারণ করা অনেক সহজ হবে। গোটা বিষয়টি স্বচ্ছ হবে। কিন্তু সরকারি বিজ্ঞপ্তি ওয়েবসাইটে ‘আপলোড’ করা ছাড়া টি বোর্ড সেটি কার্যকরের জন্য তৃণমূল স্তরে এখনও কোনও ব্যবস্থাই নেয়নি।

এ নিয়ে টি বোর্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। তবে একটি সূত্রের দাবি, কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। জেলাশাসক সংশ্লিষ্ট জেলার কমিটির প্রধান হবেন। এ ছাড়া টি বোর্ড, বড় বাগান, ক্ষুদ্র চাষি এবং বটলিফ কারখানা, সব পক্ষেরই প্রতিনিধি থাকবেন সেখানে। কমিটি গঠনের জন্য জেলাশাসকদের দফতরে বিষয়টি জানানো হচ্ছে। চলতি মরসুমেই গোটা প্রক্রিয়া চালু করার চেষ্টাও চলছে।

বটলিফ কারখানাগুলির সংগঠনের এক প্রাক্তন কর্তা জানান, আলোচনা হচ্ছে। কিন্তু এ জন্য যে-পরিকাঠামো দরকার তা কতটা রয়েছে, সে নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘আমরাও চাই চা ভাল দামে বিক্রি হোক। কিন্তু নিলামে চায়ের দাম ততটা উঠছে না। দাম না-পেলে গোটা শিল্পেই তার প্রভাব পড়বে।’’ তাঁরও দাবি, চা পাতার মান ভাল হলে এখনও তার দাম বেশি মেলে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন