কিছু দিন আগে টানা দু’দিনে সেনসেক্স নেমেছিল প্রায় ৭০০ পয়েন্ট। পরের ক’দিনে পিছলে যায় আরও কিছুটা। কিন্তু সেই সংশোধন পর্ব দ্রুত কাটিয়ে গত সপ্তাহের শেষ দু’দিনে ফের সূচকটি উঠেছে ৬৫১ পয়েন্ট। আবার ঢুকে পড়েছে ৩৩ হাজারের ঘরে। অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে সংশোধন কখনওই খুব একটা গভীর হতে পারছে না। গত দু’তিন মাসে বাজার থেকে মোটা টাকা টেনে নিয়েছে কিছু মাঝারি থেকে বড় মাপের নতুন ইস্যু। এসেছে প্রতিকূল কিছু খবর। কিন্তু তা সত্ত্বেও তেমন দমছে না সূচক। সাময়িক পতন হলেও, পরক্ষণেই তা পুষিয়ে দিচ্ছে। যার বড় কারণ, বাজারে নাগাড়ে আসতে থাকা লগ্নির ঢল। যা এসেছে দেশি-বিদেশি সংস্থার হাত ধরে।
শেয়ার বাজারে এই লগ্নির ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা মিউচুয়াল ফান্ডের। নভেম্বরে এতে পুঁজি় এসেছে ১.২৬ লক্ষ কোটি টাকা। ফলে এই শিল্পে মোট সম্পদ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২১.৭৯ লক্ষ কোটিতে। ওই মাসে ইকুইটি ও ব্যালান্সড ফান্ডে লগ্নি হয়েছে প্রায় ২৮,০০০ কোটি। বছরের প্রথম আট মাসে এই ধরনের ফান্ডে লগ্নি এসেছে ১,৭৩,১৯৫ কোটি। যার অনেকখানি ঢুকেছে ইকুইটির বাজারে। এ ছাড়া, বাজারে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ লগ্নি আসছে প্রভিডেন্ট ফান্ড এবং এনপিএস প্রকল্প থেকেও। ফলে দেশের ভেতর থেকেই লগ্নি এতটা বাড়ায়, বাজার এখন আর আগের মতো বিদেশি আর্থিক সংস্থাগুলির লগ্নির উপর তেমন নির্ভরশীল নয়।
এই দফায় সুদ কমায়নি রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। মূল্যবৃদ্ধি ফের মাথায় তোলায় এ রকম যে হতে পারে, তা প্রত্যাশিতই ছিল। তাই ঋণনীতি ঘোষণার দিন বাজার কিছু মুষড়ে পড়লেও, পরের দিনই মেঘ কেটে যায়। ইঙ্গিত, সুদ একই থাকতে পারে ফেব্রুয়ারিতেও। আর ঋণে সুদ না-কমলে, তা আপাতত কমবে না জমাতেও। এতে ঋণপত্র বা বন্ড-নির্ভর ফান্ডগুলি অবশ্য কিছুটা দুর্বল হয়েছে। ন্যাভ আগের গতিতে বাড়ছে না। ফলে বন্ড ফান্ডে রাখার আকর্ষণ সাময়িক কমতে পারে।
তবে ইকুইটির বাজার চাঙ্গা থাকায়, নাগাড়ে লগ্নি ঢুকছে পুরোপুরি বা আংশিক শেয়ার নির্ভর ফান্ডে। ইকুইটি একটু বেশি উপরের দিকে থাকায় এবং বন্ড তত ভাল না করায়, এখন ডায়নামিক ইকুইটি, ইকুইটি অ্যাডভান্টেজ অথবা অ্যাসেট অ্যালোকেশন ফান্ডের মতো তহবিলে লগ্নি করাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
খতিয়ান
মাস লগ্নি
• জানুয়ারি ৫,২৩৪
• ফেব্রুয়ারি ৬৪৬
• মার্চ ২,০০৭
• এপ্রিল ১১,২৪৪
• মে ১০,২০৬
• জুন ৮,৭৭৬
• জুলাই ১১,৮০০
• অগস্ট ১৭,৫০১
• সেপ্টেম্বর ১৭,৪৫৭
• অক্টোবর ৯,৯৬৯
• নভেম্বর ৩,৮২৫*
*১০ নভেম্বর পর্যন্ত
** শেয়ার বাজারে ফান্ড সংস্থার লগ্নি কোটি টাকায়
বড় মেয়াদে ভারতীয় অর্থনীতির উপর বিদেশি লগ্নিকারীদের আস্থাও অটুট। নোটবন্দি এবং জিএসটি নিয়ে দেশের মধ্যে দ্বিমত থাকলেও, দু’টিই তাদের মনে ধরেছে। ফলে লগ্নি জারি রেখেছে তারাও। নভেম্বরে দেশের বাজারে তারা ঢেলেছে ১৬,৫০০ কোটি টাকা। এর আগে মার্চে নতুন লগ্নি ছিল ৩৩,৮০০ কোটি। অর্থাৎ ভেতরে এবং বাইরে বাজারের সমর্থন এখন মজবুত। তাই রফতানি ধাক্কা খাওয়া ও আমদানি বাড়ালেও ডলারের তুলনায় শক্তিশালী হচ্ছে টাকার দাম।
হালে ব্যাঙ্কগুলি ফের ঋণ দেওয়ার পরিমাণ বাড়াতে শুরু করেছে। অর্থনীতির পক্ষে এটি ভাল লক্ষণ। কারণ, ঋণ বাড়লে শিল্প চাঙ্গা হচ্ছে বলেই ধরা হয়ে থাকে। আশা করা যায়, কেন্দ্রের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ব্যাঙ্ক -গুলিকে মূলধন জোগানো হলে শিল্পে ঋণ দেওয়ার অঙ্ক আরও বাড়বে।
তবে মাঝে-মধ্যে শেয়ারের দামে সংশোধন হবেই। যা বাজারের পক্ষে মঙ্গলজনক। এই সপ্তাহে মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক ফেডারেল রিজার্ভের ঋণনীতি বৈঠক হওয়ার কথা। ফেড রিজার্ভ সুদ বাড়ালে কিন্তু তার সাময়িক প্রভাব পড়তে পারে সূচকের উপরে। ডিসেম্বরের দ্বিতীয়ার্ধও বাজারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। গুজরাতের গদিতে কোন দল কতটা শক্তি নিয়ে বসে, তা জানা যাবে ওই সময়। যার বড়সড় প্রভাব থাকবে বাজারে। ফল বিজেপির পক্ষে গেলে সূচক আরও পেশি ফোলাবে। উল্টোটা হলে কিন্তু পিছলে যাওয়ার আশঙ্কা থাকছেই।