মাস পয়লা। স্টেট ব্যাঙ্কের গড়িয়া শাখায় মঙ্গলবার তাই ৭৭ বছরের বৃদ্ধা মায়ের পেনশন তুলতে গিয়েছিলেন চয়ন ভট্টাচার্য। সঙ্গে ছিল, মায়ের সই করা চেক। কিন্তু শাখা থেকে বলা হল, ‘‘চেক তো চলবে না। আজ ডিজিটাল ডে!’’ অর্থাৎ, এটিএম ছাড়া টাকা তোলার জো নেই!
কিন্তু এমন নোটিস ঝোলাল কে? ঘটা করে এমন দিন পালনের ঘোষণাই বা হল কবে? খোঁজ করতে গিয়ে বোঝা গেল, এ যেন সেই ধরে আনতে বললে বেঁধে আনার ঘটনা। দেশকে দ্রুত ‘ডিজিটাল’ করতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেই সূত্রে গ্রাহকদের মধ্যে সে বিষয়ে সচেতনতা তৈরির কথা শাখাগুলিকে বলেছে দেশের বৃহত্তম ব্যাঙ্ক। তা শুনে আরও এক ধাপ এগিয়ে আবার ব্যাঙ্কে ‘ডিজিটাল ডে’র নোটিসই ঝুলিয়ে দিয়েছে ওই শাখা। সমস্ত গ্রাহকের কার্ড আছে কি না কিংবা থাকলেও তাঁরা তা ব্যবহারে সড়গড় কি না, সে বিষয়টি কি তবে মাথাতেই আসেনি?
ওই শাখার ম্যানেজার রাজু নায়েকের দাবি, ‘‘ডিজিটাল ডে পালন করা হয়েছে ঠিকই। কিন্তু আমরা কাউকে ফেরাইনি। তবে তার মধ্যে কিছুটা ভুল বোঝাবুঝি হয়ে থাকতে পারে।’’ ব্যাঙ্কের আর এক ম্যানেজারও মানছেন, ‘‘ডিজিটাল ডে পালনের নোটিস দেওয়া হয়েছিল। সেই অনুসারেই কিছু গ্রাহককে হয়তো অমন বলা হয়েছে।’’ অথচ স্টেট ব্যাঙ্কের জনসংযোগ বিভাগের কর্তা বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটাল ইন্ডিয়ার কর্মসূচি মেনে গ্রাহকদের সচেতন করার কথা শাখাগুলিকে বলা হয়েছে। কিন্তু তা বলে ‘ডিজিটাল ডে’ পালনের সিদ্ধান্ত কর্তৃপক্ষ নেননি। বলা হয়নি তার জন্য চেকে টাকা তোলা আটকানোর কথাও।’’
ব্যাঙ্ক বলেনি। সরকার বলেনি। অথচ ডিজিটাল ডে-র নোটিস দিয়ে হঠাৎ এক দিনের জন্য চেক-নগদের লেনদেন করতে চাইছে না একটি শাখা। চয়নবাবুর অভিযোগ, ‘‘মায়ের এটিএম কার্ড নেই। ভোগান্তি হয়েছে। শেষে চেকে টাকা পেয়েছি কার্ডের জন্য আবেদনপত্রে বাড়ি গিয়ে মাকে সই করিয়ে এনে!’’ এ দিন ওই শাখায় আসা আর এক গ্রাহক বলছেন, ‘‘চয়নবাবু তো তবু কলকাতা পুরসভার কাউন্সিলর। অনেকে তাঁকে চেনেন। আমাদের অবস্থা ভাবুন।’’
ব্যাঙ্কিং বিশেষজ্ঞদের অনেকে বলছেন, এটি একেবারেই একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। কিন্তু পরিকাঠামো ও গ্রাহক সচেতনতা তৈরির আগে জোর করে ডিজিটাল লেনদেন চাপাতে গেলে কী হয়, তার জ্বলন্ত উদাহরণ। তাঁদের মতে, নোট বাতিলের সময়ে কেন্দ্র ডিজিটাল লেনদেনে জোর দেওয়ার কথা বলেছে। কিন্তু তার জন্য উপযুক্ত পরিকাঠামো জরুরি। দরকার তার সঙ্গে গ্রাহকদের ধাতস্থ হতে সময় দেওয়া। সবার যে কার্ড থাকবে বা সবাই যে নেট লেনদেনে স্বচ্ছন্দ হবেন, এ কথা কে বলল? প্রাক্তন ব্যাঙ্ক-কর্তা ও বিশেষজ্ঞ ভাস্কর সেনের কথায়, ‘‘ট্র্যাডিশনাল লেনদেন তো তুলে দেওয়া হয়নি। তাই এমন হঠকারী সিদ্ধান্তে গ্রাহকরা বিপদে পড়তে পারেন। বিশেষত বয়স্করা। গ্রাহকদের সঙ্গে ব্যাঙ্কের সম্পর্করক্ষার ক্ষেত্রে এটি দুর্ভাগ্যজনক নজির।’’