অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইয়ে ক্রমশ ফিকে হচ্ছে ‘অনলাইন’ ও ‘অফলাইন’ বাজারের বিভেদ।
পরস্পরের বিরুদ্ধে অস্ত্রে শান দেওয়া নয়। ক্রেতা টানার লড়াইয়ে এখন বরং একে অপরের অস্ত্রই ব্যবহার করছে নেট-বাজার ও চিরাচরিত ইঁট-কাঠ-পাথরের দোকানপাট। এক দিকে যে-অস্ত্র দিয়ে বাজিমাত করছে নেটবাজার, অন্য দিকে সেই মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন বা অ্যাপ দিয়েই জমি উদ্ধার করতে নেমেছে ছোট-বড় দোকান। নিজের ব্যবসার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ অনলাইন সংস্থা কিনে নিচ্ছে বড় রিটেল গোষ্ঠীও। আবার ক্রেতাদের কাছে নিজেদের আরও বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে অনলাইন সংস্থা খুলে ফেলছে ইঁট-কাঠ-পাথরের দোকান।
কয়েক বছর ধরেই রিটেল বা খুচরো বাজারের ক্রেতা ভিড় জমাচ্ছে নেট-বাজারে। যানজট-ভিড় ঠেলে দোকানে দোকানে না-ঘুরে ল্যাপটপ বা মোবাইলের পর্দায় জিনিসের দাম যাচাই করেই কেনাকাটা সারছেন অনেকে। বিশেষত নয়া প্রজন্ম এই ‘হাই-টেক’ বাজারে স্বচ্ছন্দ। তথ্য পরিসংখ্যানও তাই বলছে। বিশেষজ্ঞ সংস্থা ফরেস্টারের সমীক্ষা অনুযায়ী, ২০১২ সালের তুলনায় ২০১৬ সালে ৪৫০ শতাংশ বিক্রি বাড়িয়েছে নেট-বাজার।
আর এই তথ্য পরিসংখ্যান মাথায় রেখে নতুন কৌশল তৈরি করছে কিশোর বিয়ানির ফিউচার গোষ্ঠী, টাটা গোষ্ঠীর ইনফিনিটি রিটেল থেকে শুরু করে রহেজা গোষ্ঠীর শপার্স স্টপ। কখনও প্রযুক্তির হাত ধরে, কখনও অনলাইন সংস্থা অধিগ্রহণ করে নেট-বাজারে নিজেদের জমি শক্ত করছে রিটেল বা খুচরো ব্যবসা। প্রতিযোগিতার বাজারে এগিয়ে থাকতে সংস্থার বাণিজ্যিক মানচিত্রে জায়গা করে নিচ্ছে দুই বাজারই।
এই কৌশল স্পষ্ট ফুটে উঠেছে ফিউচার গোষ্ঠীর সাম্প্রতিক অধিগ্রহণে। এপ্রিল মাসেই গৃহসজ্জার অনলাইন সংস্থা ফ্যাবফার্নিশকে ২০ কোটি টাকায় কিনে নিয়েছে ফিউচার গোষ্ঠী। পরের মাসেই কর্ণধার কিশোর বিয়ানি জানান, নিজেদের গৃহসজ্জার ব্র্যান্ড ‘হোমটাউন’-এর সঙ্গে সদ্য কেনা অনলাইন সংস্থাকে মিশিয়ে দেবেন। ক্রেতার সংখ্যা এক লাফে বাড়িয়ে নিয়ে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকাই লক্ষ্য বলে জানান তিনি। এবং এই মিলিত সংস্থা যে আন্তর্জাতিক স্তরের প্রতিযোগী আইকিয়ার মতো ব্র্যান্ডের সঙ্গেও পাল্লা দিতে পারবে, তা ঠারেঠোরে বুঝিয়ে দিয়েছেন বিয়ানি।
একই ভাবে অনলাইন প্রযুক্তিতে টাকা ঢেলে বাজার ধরে রাখতে চায় শপার্স স্টপ। সংস্থার কর্তৃপক্ষের দাবি, আগামী তিন বছরে অনলাইন প্রযুক্তির জন্য ৬০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে সংস্থা। বর্তমানে মোট ব্যবসার মাত্র এক শতাংশ অনলাইন বাজার থেকে আসে। কিন্তু আগামী তিন বছরের মধ্যে এই অঙ্ক ১৫ শতাংশে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা রেখেছে সংস্থা।
তবে সব দোকানের পক্ষে প্রযুক্তি খাতে মোটা অঙ্কের পুঁজি ঢালা সহজ নয়। সে ক্ষেত্রে রয়েছে অ্যাপ ব্যবহার করার সুযোগ। নেট-বাজারে যে-ক্রেতা ঘোরাফেরা করছেন, সেই ক্রেতাকেই নিশানায় রাখছে অ্যাপি, কুপন দুনিয়া ও গ্রুপ অন ডট কমের মতো অ্যাপ। যে অ্যাপের দৌলতে ক্রেতার হাতে পৌঁছে যাবে নির্দিষ্ট জিনিস। একই সঙ্গে দোকানিও পেয়ে যাবেন তাঁর হারানো ক্রেতা। আর অ্যাপ নির্মাতা সংস্থা পাবে দোকানির থেকে ‘কমিশন’। অ্যাপির নির্মাতা সংস্থা অ্যাপি মোবিকিউটির কার্তিক সাঙ্গভির দাবি, অনলাইন বাজারের ক্রেতাকে অফলাইন বাজারের ইঁট-কাঠের দোকানে টেনে আনাই এই অ্যাপের বিশেষত্ব।
অফলাইন দুনিয়ার এই ছবির পাশাপাশি ফুটে উঠছে অনলাইন বাজারের অন্য এক চিত্র। লেন্সকার্ট, জিভামে, ফার্স্টক্রাই-এর মতো অনলাইন সংস্থা তৈরি করছে ইঁট-কাঠ-পাথরের বিপণি। জিভামের প্রতিষ্ঠাতা রিচা করের দাবি, ক্রেতাদের মধ্যে বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়াতে অফলাইন বিপণির জুড়ি নেই। আর সেই লক্ষ্যেই আগামী তিন বছরে ১০০টি বিপণি খোলার পরিকল্পনা করেছেন তিনি। একই পথে হাঁটছে চশমার দোকান লেন্সকার্ট ও বাচ্চাদের জিনিসের অনলাইন বিক্রেতা ফার্স্টক্রাই। ভাবমূর্তি তৈরি করতে অফলাইন বিপণি জরুরি বলে মনে করছে ওই দুই সংস্থার কর্তৃপক্ষই।