দুবাইয়ের সংস্থার চোখ দুই বন্দরে

শুক্রবার নয়াদিল্লিতে রাজ্যের শিল্প ও অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রের সঙ্গে বৈঠকে বসেন সংযুক্ত আরব আমিরশাহির রাষ্ট্রদূত আহমেদ আলবান্না। রাজ্যে ওই দু’টি গভীর সমুদ্র বন্দর গড়ার পরিকল্পনা ওই আলোচনায় আমির-শাহির রাষ্ট্রদূতের সামনে তুলে ধরেন অমিতবাবু।

Advertisement

প্রেমাংশু চৌধুরী

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০১:৩৬
Share:

মুখোমুখি: অমিত মিত্র ও আলবান্না। শুক্রবার নয়াদিল্লিতে। —নিজস্ব চিত্র।

পশ্চিমবঙ্গে কুলপি ও তাজপুর বন্দর নিয়ে উৎসাহ দেখাল দুবাইয়ের সংস্থা ডিপি ওয়ার্ল্ড। শুক্রবার নয়াদিল্লিতে রাজ্যের শিল্প ও অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রের সঙ্গে বৈঠকে বসেন সংযুক্ত আরব আমিরশাহির রাষ্ট্রদূত আহমেদ আলবান্না। রাজ্যে ওই দু’টি গভীর সমুদ্র বন্দর গড়ার পরিকল্পনা ওই আলোচনায় আমির-শাহির রাষ্ট্রদূতের সামনে তুলে ধরেন অমিতবাবু। ডিপি ওয়ার্ল্ডের লগ্নি সম্ভাবনা নিয়ে কথাও হয় সেই সূত্রে।

Advertisement

সরকারি সূত্রের খবর, দুবাই পোর্ট অথরিটি এবং দুবাই পোর্ট ইন্টারন্যাশনাল মিলে তৈরি ডিপি ওয়ার্ল্ড এর আগে বিনিয়োগ করেছে আমেরিকা, ব্রিটেনের মতো বহু দেশে। সংস্থার ওয়েবসাইটে দাবি, ছ’টি মহাদেশের ১০৩টি দেশে প্রায় ৩৭ হাজার কর্মী ছড়িয়ে রয়েছে তাদের। রয়েছে ৭৭টি জল ও স্থল বন্দরের টার্মিনাল। এ দিন রাজ্যের দুই প্রস্তাবিত বন্দর প্রকল্পেও প্রাথমিক ভাবে আগ্রহ দেখিয়েছে তারা।

দূতাবাসের তরফে জানানো হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গে পর্যটন নিয়েও উৎসাহী আরব আমিরশাহি। ওই ক্ষেত্রে বাণিজ্যিক যোগাযোগ বাড়াতে মার্চে ‘আরব ট্যুরিজম মার্কেট’-এ পশ্চিমবঙ্গের প্রতিনিধিদের আহ্বান জানিয়েছেন আলবান্না। উল্টো দিকে রাজ্য চায়, আমিরশাহির ‘আবুধাবি ফান্ড ফর ডেভেলপমেন্ট’ থেকেও বিনিয়োগ আসুক পশ্চিমবঙ্গে।

Advertisement

জানুয়ারিতে রাজ্যের শিল্প সম্মেলন ‘বেঙ্গল গ্লোবাল বিজনেস সামিট’-এর প্রস্তুতির জন্য এ দিন দিল্লিতে ৩১টি দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন অমিতবাবু। সঙ্গে ছিলেন শিল্পসচিব থেকে শুরু করে শিল্প দফতর, শিল্পোন্নয়ন নিগমের শীর্ষ কর্তারা। আরব আমিরশাহি ছাড়াও বুলগেরিয়া, ইজরায়েল, ইন্দোনেশিয়া, নেদারল্যান্ডস, হাঙ্গেরি, সৌদি আরব— মোট সাতটি দেশের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আলাদা-আলাদা ভাবে বৈঠক করেন তিনি।

অমিতবাবুর দাবি, ‘‘এমন সাড়া আশাতীত। ২০টি দেশের রাষ্ট্রদূত এসেছিলেন। বাকি দেশগুলির দূতাবাসের শীর্ষ প্রতিনিধিরা যোগ দিয়েছেন। প্রত্যেকটি দেশই গ্লোবাল বিজনেস সামিটে তাদের শিল্প-বাণিজ্য প্রতিনিধি দল নিয়ে যোগ দেবে।’’

সম্প্রতি রিজার্ভ ব্যাঙ্কের রিপোর্টে উঠে এসেছে যে, লগ্নি টানার দৌড়ে সেই পিছনের সারিতেই রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। ২৯টি রাজ্যের মধ্যে ১৪ নম্বরে। তাই আগামী বছরের গোড়ায় ওই আন্তর্জাতিক শিল্প সম্মেলনকে সামনে রেখে নতুন করে লগ্নি টানতে ঝাঁপাচ্ছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। অমিতবাবুর দাবি, ‘‘বন্দর, কৃষি বিপণন থেকে শুরু করে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ— প্রায় সব ক্ষেত্রেই লগ্নিতে উৎসাহ দেখা যাচ্ছে।’’

শিল্পমহল অবশ্য মনে করে, রাজ্যে লগ্নিতে এখনও বড় বাধা জমির সমস্যা ও জমির ঊর্ধ্বসীমা সংক্রান্ত আইন। তা হলে লগ্নি আসবে কী ভাবে? অমিতবাবুর যুক্তি, ‘‘তার প্রধান কারণ রাজ্যে স্থায়ী ও প্রগতিশীল সরকার। তা ছাড়া, দেশে বৃদ্ধির হার যখন কমছে, রাজ্যে তখন তা ঊর্ধ্বমুখী।’’

রাজ্যের সঙ্গে রাষ্ট্রদূতদের পৃথক বৈঠকে এ দিন বুলগেরিয়া উৎসাহ দেখিয়েছে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে। ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রদূত জানিয়েছেন, তাঁরা জাহাজ পরিষেবা, পাম তেল, কয়লা, খনি ক্ষেত্রে লগ্নির সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে আগ্রহী। তেমনই নেদারল্যান্ডস খাদ্য-গুদাম, হিমঘর, বৈদ্যুতিন যন্ত্রপাতি, পশুপালনে লগ্নির সম্ভাবনা খতিয়ে দেখবে বলে জানিয়েছে।

ইজরায়েলের জন্য রাজ্যের প্রস্তাব, কৃষি, জল, ডিজিটাল প্রযুক্তি ক্ষেত্রে হাত মিলিয়ে সেন্টার অব এক্সেলেন্স তৈরি। হাঙ্গেরি আবার উৎপাদন শিল্পের পাশাপাশি পরিবেশ ও আবহাওয়া ব্যবস্থাপনায় উৎসাহী। রাজ্য চায়, এই শেষের দু’টি ক্ষেত্রে রাজ্যের সঙ্গে হাঙ্গেরির প্রতিষ্ঠানের যৌথ উদ্যোগ গড়ে উঠুক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন