জলে ডুবে গান্দ্রাপাড়া চা বাগান।
কখনও অনাবৃষ্টি। কখনও অতিবৃষ্টি। খামখেয়ালি আবহাওয়ার ভ্রুকুটি ডুয়ার্সের চা শিল্পে।
এমনিতেই এ বছরের প্রথম পাঁচ মাসে প্রায় ১.৮ লক্ষ কেজি চা কম তৈরি হয়েছে। এ বার একটানা বৃষ্টিতে জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ারের বহু বাগানের বিস্তীর্ণ এলাকা জলের তলায়। এই হাল ডুয়ার্সের ৭০% বাগানেরই। ফলে চা উৎপাদন আরও মার খাওয়া ও বাগান পরিচালনায় নগদের জোগানে টান পড়ার আশঙ্কা করছে চা শিল্প।
ইন্ডিয়ান টি অ্যাসোসিয়েশনের (আই টি এ) হিসেবে, ২০১৫ সালের প্রথম পাঁচ মাসে ৬.৯১ কোটি কেজি চা হয়েছিল ডুয়ার্সে। এ বছর তা কমে হয়েছে ৬.৮৯ কোটি কেজি। এ বার গোড়ার দিকে খরার জেরে ডুয়ার্সে পোকামাকড়ের উপদ্রবে চা উৎপাদন মার খায়। পরে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও, এখন অবিরাম বৃষ্টি নতুন আশঙ্কা তৈরি করেছে। যেমন, ধূপগুড়ি ব্লকের বানারহাট টি এস্টেট। আইটিএ জানিয়েছে, ওই বাগানের ১০০ হেক্টর এলাকা জলের তলায়। প্রায় আট হাজার শ্রমিকের বসবাসের এলাকাও ভেসেছে। ওই ব্লকেরই তেলেপাড়া টি এস্টেটের ৪০% জলে ডুবে। লখিপাড়ার বাগানের কারখানায় জল ঢুকেছে। রবিবার থেকে কাজ বন্ধ চুনাভুট্টি বাগানে। ছবি একই আরও অনেক বাগানে। বিশেষত কালচিনি, কুমারগ্রাম, ধূপগুড়ি ও মাল ব্লকের অবস্থা খুব খারাপ।
জানুয়ারি-নভেম্বর চায়ের মরসুম হলেও মূলত এপ্রিল-জুলাইয়ের মাঝামাঝিই ভালো চা (ফার্স্ট ফ্লাশ ও সেকেন্ড ফ্লাশ) তৈরি হয়। বাজারে তার কদর বেশি। এই সময়ে উৎপাদন মার খেলে তার প্রভাব সুদূরপ্রসারী হয়, দাবি আইটিএ-র সেক্রেটারি জেনারেল অরিজিৎ রাহার। তিনি বলেন, ‘‘অনেক জায়গাতেই চা পাতা তোলা যাচ্ছে না। ফলে চা কম তৈরি হচ্ছে। নিলামে কম চা বিক্রি হওয়ায় বাগানগুলিতে নগদের জোগানে টান পড়ছে। অবস্থা স্বাভাবিক করতে বাড়তি খরচ করতে হবে কর্তৃপক্ষকে। তাই অবস্থার উন্নতি না হলে ক্ষতির মুখে পড়বে বাগানগুলি। মজুরি বা বোনাস দেওয়ায় সমস্যা হতে পারে।’’
আইটিএ-র ডুয়ার্স শাখার সচিব এস গুহঠাকুরতা বলেন, ‘‘সাত দিনের অবিরাম বৃষ্টিতে প্রচুর লোকসান হচ্ছে।’’ অরিজিৎবাবুর বক্তব্য, জল নামলে প্রকৃত অবস্থা বোঝা যাবে।
অঝোরে বৃষ্টির সঙ্গে দোসর আরও কিছু সমস্যাও। আইটিএ-র দাবি, কার্যত ‘ড্রেজিং’ না হওয়ায় সংলগ্ন এলাকার পলি জমে অধিকাংশ নদীতলের উচ্চতা বেড়েছে। নদীর জল বহনের ক্ষমতা কমায় বৃষ্টির জল উপচে ডুবিয়ে দিচ্ছে সংলগ্ন এলাকা। বাগানের নর্দমাগুলিও জল বের করে নদীতে ফেলতে পারছে না। আইটিএ-র অভিযোগ, ভূটানে বেআইনি ডলোমাইট খননের জেরে রেতী, পাগলা, ডিমা, রায়ডাক, সুকৃতী, জয়ন্তী, পানার মতো নদীর জলে তা মিশছে। নদীতল উপরে উঠছে। আইটিএ-র ডুয়ার্স শাখার চেয়ারম্যান এস কে ঘাইয়ের দাবি, টোটাপাড়া বাজারের দোকান নির্মাণের ফলে মূল নর্দমার মাধ্যমে জল বার করতে সমস্যা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে অবিলম্বে রাজ্যের দুর্যোগ মোকাবিলা দফতরের হস্তক্ষেপ দাবি করেছে আইটিএ। তবে এ ধরনের দুর্যোগ মোকাবিলায় দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা জরুরি বলে মত তাদের।