বিলের বালাই নেই, কুটির শিল্প হুকিংই

১০০ টাকার বিদ্যুৎ দিয়ে রাজ্যের কিছু জায়গায় মার যাওয়া টাকা বা ক্ষতির অঙ্ক কত, সেই পরিসংখ্যান রীতিমতো চমকে যাওয়ার মতো।

Advertisement

পিনাকী বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০১৮ ০৩:২৩
Share:

প্রতীকী ছবি।

শুধু কয়লার দামের বোঝা নয়। বিদ্যুৎ চুরির লোকসানের দায়ভারও বইতে হচ্ছে সাধারণ গ্রাহকদেরই। ফলে কার্যত ব্যবহারের থেকে বেশি বিদ্যুতের জন্য কড়ি গুনতে হচ্ছে তাঁদের। অন্তত এমনই মনে করছে একের পর এক হুকিং-সহ বিদ্যুৎ চুরির ঘটনায় জেরবার পশ্চিমবঙ্গ বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা।

Advertisement

১০০ টাকার বিদ্যুৎ দিয়ে রাজ্যের কিছু জায়গায় মার যাওয়া টাকা বা ক্ষতির অঙ্ক কত, সেই পরিসংখ্যান রীতিমতো চমকে যাওয়ার মতো। দক্ষিণ ২৪ পরগনার সরিষায় তা ৭৩ টাকা। বাসন্তীতে ৮২। উত্তর ২৪ পরগনার হাড়োয়ায় ৫১। বর্ধমানের ভাতারে ৭৮। অর্থাৎ, সরিষায় ১০০ টাকার বিদ্যুৎ দিয়ে বণ্টন সংস্থার ঘরে আসছে ২৭ টাকা। বাকি ৭৩ টাকা ক্ষতি। ভাতারে তা মাত্র ২২ টাকা।

এই তালিকা ক্রমশ দীর্ঘ হচ্ছে বলে দাবি বিদ্যুৎ কর্তাদের। তাঁদের অভিযোগ, হুকিং, ট্যাপিং, মিটারে কারচুপি তো রয়েইছে। বিল গেলে তা মেটানোরও প্রয়োজন মনে করছেন না এক শ্রেণির গ্রাহক। সম্প্রতি বণ্টন সংস্থার পক্ষ থেকে বিদ্যুৎ দফতরের কাছে এই সংক্রান্ত বিস্তারিত রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে।

Advertisement

একে কয়লায় সমস্যা। তার উপরে এই চুরির বোঝাও প্রতিদিন বেড়ে চলেছে বলে বণ্টন সংস্থার একাংশের বক্তব্য। সংশ্লিষ্ট সূত্রে খবর, সরকারি ভাবে বণ্টন সংস্থা তাদের বিদ্যুৎ চুরি, অনাদায়ী বিল-সহ অন্যান্য ক্ষতির গড় ২৩ শতাংশের কাছাকাছি বললেও, তা আসলে প্রায় ৩৭ শতাংশ।

পরিস্থিতি এমনই উদ্বেগের যে, বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় সম্প্রতি ১০০ জন বিধায়কের কাছে বিদ্যুৎ চুরির বিষয়গুলি জানিয়ে সহযোগিতা চেয়ে চিঠি লিখেছেন। শোভনদেববাবু বলেন, ‘‘যে সমস্ত এলাকায় চুরি সবচেয়ে বেশি, সেখানকার বিধায়কদেরই চিঠি লিখেছি। মানুষকে বোঝানো, সচেতন করার কাজে বিধায়কদের এগিয়ে আসার জন্য অনুরোধও করেছি।’’

রাজ্যের বিদ্যুৎ কর্তারাই জানাচ্ছেন, এক শ্রেণির মানুষের দেদার বিদ্যুৎ চুরির দায় গিয়ে চাপছে সাধারণ গ্রাহকদের বিলে। বিদ্যুৎ কর্মীরা হুকিং কাটতে গেলে, তাঁদের মারধর করা হচ্ছে। ভাঙচুর করা হচ্ছে অফিস।

বিদ্যুতের মাসুল নিয়ন্ত্রণের জন্য রাজ্য বছরে ৭০০ কোটি টাকা ভর্তুকি দিচ্ছে। ৩০০ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুৎ খরচ করলে, তাঁদের বর্ধিত হারে মাসুল নেওয়া হচ্ছে না। তার পরেও কয়েকশো কোটি টাকার বিদ্যুৎ দিনে-রাতে চুরি হয়ে যাচ্ছে। যা কোনও ভাবেই ঠেকানো যাচ্ছে না!

সম্প্রতি সরিষায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে এক জনের মৃত্যু ঘটে। হুকিংয়ের কারণেই ওই মৃত্যু বলে অভিযোগ। কিন্তু সরিষা গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্রে ভাঙচুর চালান স্থানীয় অনেকে। হাড়োয়ার কাছে গ্রাহক পরিষেবা এলাকাতেও বিল না মেটানোয় লাইন কাটতে গেলে বিদ্যুৎ কর্মীদের উপর চড়াও হন অনেকে। আর এ সবের জের বিলের অঙ্কে বইতে হচ্ছে সাধারণ গ্রহকদেরই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন