নরম ভিতে লম্বা লাফ, সমস্ত পূর্বাভাসকে ছাপিয়ে বৃদ্ধি ৮.২%

একের পর এক অস্বস্তির খবরের মধ্যে অবশেষে বড়াই করে কিছু বলার মতো রসদ পেল মোদী সরকার।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৩:৫৯
Share:

অলঙ্করণ: শৌভিক দেবনাথ।

একের পর এক অস্বস্তির খবরের মধ্যে অবশেষে বড়াই করে কিছু বলার মতো রসদ পেল মোদী সরকার।

Advertisement

এপ্রিল-জুন ত্রৈমাসিকে বৃদ্ধি পৌঁছল ৮ শতাংশের উপরে। প্রায় সমস্ত পূর্বাভাসকে ছাপিয়ে। চিনকে টপকেও। ফলে বিশ্বে দ্রুততম বৃদ্ধির দেশ হিসেবে তুলে ধরার দাবি আরও জোরের সঙ্গে করতে পারবে মোদী সরকার। সম্প্রতি এই বৃদ্ধির হিসেবেই ইউপিএ সরকারের কাছে গোহারা হওয়ার ক্ষতে যা সামান্য মলমের কাজ করতে পারে বলে অনেকের ধারণা।

যদিও অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এ বার বৃদ্ধির এই রমরমা আসলে গত বছরের ‘আলগা ভিতের’ কারণে। গত বার এই তিন মাসে বৃদ্ধি ছিল মাত্র ৫.৬%। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই তার তুলনায় ঝকঝকে দেখাচ্ছে এই এপ্রিল-জুনের বৃদ্ধিকে।

Advertisement


গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

২০১৭ সালের জুলাইয়ে জিএসটি চালু হয়। তার আগে মজুত পণ্য খালি করতে অনেক কারখানায় উৎপাদন কার্যত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। ফলে ২০১৭ সালের এপ্রিল-জুনে কল-কারখানায় উৎপাদন বৃদ্ধি তো দূর অস্ত্‌, বরং ১.৮% কমেছিল। ভিত্তি এত কম বলে এ বার কারখানায় উৎপাদন বৃদ্ধির হার ১৩.৫% ছুঁয়েছে। মূলত তাতে ভর করেই সামগ্রিক বৃদ্ধির হার ৮% ছাপিয়ে গিয়েছে।

অর্থনীতিবিদ অজিত রাণাডের মতে, ‘‘অর্থবর্ষের বাকি ন’মাসে এই সুবিধা মিলবে না। ফলে এ রকম বৃদ্ধি ধরে রাখা কঠিন হবে।’’ ইয়েস ব্যাঙ্কের মুখ্য অর্থনীতিবিদ শুভদা রাও মনে করেন, ‘‘আগামী মাসগুলিতে বৃদ্ধি কিছুটা কমতে পারে। অশোধিত তেলের চড়া দাম, বিশ্ব বাজারের অস্থিরতা তাতে ধাক্কা দিতে পারে।’’

বলার মতো

• এপ্রিল-জুন ত্রৈমাসিকে ৮% ছাপিয়ে গেল বৃদ্ধি। দু’বছরেরও বেশি সময়ের মধ্যে সবচেয়ে বেশি।

• এই ৩ মাসে চিনে বৃদ্ধি ৬.৭%। ফলে পোক্ত দ্রুততম বৃদ্ধির তকমা।

• দেশে কল-কারখানায় বৃদ্ধির হার ১৩.৫%। জুলাইয়ে পরিকাঠামোয় বৃদ্ধিও ৬.৬%।

• ওই মাসে রাজকোষ ঘাটতি দাঁড়িয়েছে বাজেট লক্ষ্যমাত্রার ৮৬.৫%। গত বার ছিল ৯২.৪%। উন্নতি রাজস্ব আদায় বাড়ায়।

টেকসই?

• জিএসটি চালুর জেরে গত বছর এপ্রিল-জুনে বৃদ্ধির হার নেমেছিল ৫.৬ শতাংশে। তার সাপেক্ষে সংখ্যা স্বাভাবিক ভাবেই উজ্জ্বল। প্রশ্ন, দীর্ঘ মেয়াদে চড়ার বৃদ্ধির হার ধরে রাখা যাবে তো?

আরও পড়ুন: যথেচ্ছ ঋণে বৃদ্ধিই বন্ধ্যা, জোর নজরে

প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমের কথায়, ‘‘ভাল খবর। কিন্তু গত বছরের এপ্রিল-জুনে বৃদ্ধি দু’বছরে সর্বনিম্ন ছিল। সেই তুলনায় এ বার বৃদ্ধি এত বেশি দেখাচ্ছে। পরের মাসগুলিতে কিন্তু তা কমবে। ফলে পুরো বছরের বৃদ্ধি তেমন মুখ না তোলার সম্ভাবনা।’’

উল্টো দিকে, বিজেপি সভাপতি অমিত শাহর দাবি, ‘‘এই বৃদ্ধি প্রধানমন্ত্রীর সংস্কারের প্রতিফলন।’’ অর্থসচিব হাসমুখ আঢিয়ার মতে, এটি কাঠামোগত সংস্কারের ফল। নতুন পুঁজি তৈরিতে বৃদ্ধির কথা বলেছেন অর্থ বিষয়ক সচিব সুভাষচন্দ্র গর্গও। চাপের মুখে এই ‘কৃতিত্ব’ হাতছাড়া করতে নারাজ তাঁরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন