সামাজিক সুরক্ষা বিল পেশ, খুলতে পারে পিএফে কম কাটানোর পথ

গোড়া থেকেই সরকারের দাবি, পুরনো আইন বদলে এই বিধি তৈরির মূল লক্ষ্য, সমস্ত কর্মীকে সামাজিক সুরক্ষার আওতায় আনা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৩:৪৮
Share:

প্রতীকী ছবি।

প্রস্তাবিত সামাজিক সুরক্ষা বিলে কর্মী প্রভিডেন্ট ফান্ডের (ইপিএফ) জন্য কর্মীদের ফি মাসে এখনকার তুলনায় কম টাকা কাটানোর রাস্তা খুলে দেওয়ার ইঙ্গিত দিল কেন্দ্র। গত ৪ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা কর্মীদের এই সামাজিক সুরক্ষা বিলে সিলমোহর দেওয়ার পরে বুধবার লোকসভায় তা পেশ করেন শ্রমমন্ত্রী সন্তোষ গাঙ্গোয়ার। অনেক ইউনিয়ন নেতার আশঙ্কা, এতে টাকা কাটার পরে হাতে থাকা বেতনের অঙ্ক প্রাথমিক ভাবে বেশি দেখাবে ঠিকই। কিন্তু তেমনই কম টাকা জমা পড়বে ইপিএফে। টান পড়তে পারে অবসরের তহবিলে। যদিও শেষমেশ কর্মীদের টাকা কাটানোর অনুপাত কমছে কি না, কিংবা কমলেও কতটা, সেই বিষয়গুলি খানিকটা স্পষ্ট হবে সংসদে বিল নিয়ে আলোচনার পরেই।

Advertisement

কর্মী সংগঠনগুলির অভিযোগ, এতে পিএফ খাতে কম টাকা গুনতে হওয়ায় মালিকপক্ষের সুবিধা হবে। সুদ গোনার খরচ কমবে কেন্দ্রের। কিন্তু তেমনই ঢিলে হবে ইপিএফের সুরক্ষা-কবচ। শুধু তা নয়, সংসদকে এড়িয়ে শুধুমাত্র প্রশাসনিক নির্দেশিকার মাধ্যমে টাকা কাটানোর অনুপাত বদলানোর রাস্তা বিলে যে ভাবে খোলা রাখা হয়েছে, তারও বিরোধী তারা।

গোড়া থেকেই সরকারের দাবি, পুরনো আইন বদলে এই বিধি তৈরির মূল লক্ষ্য, সমস্ত কর্মীকে সামাজিক সুরক্ষার আওতায় আনা। বিশেষত অসংগঠিত ক্ষেত্রের সকলকে পুরোদস্তুর কর্মীর স্বীকৃতি দিয়ে পিএফ, ইএসআই, বিমা-সহ নানা সুবিধা দেওয়া এর মাধ্যমে সম্ভব হবে বলে কেন্দ্রের দাবি। প্রশ্ন উঠছিল, এর জন্য টাকা আসবে কোথা থেকে? বিলে প্রস্তাব, সামাজিক দায়বদ্ধতা খাতে কর্পোরেট সংস্থাগুলিকে এখন যে টাকা দিতে হয়, তা দিয়ে বিশেষ তহবিল তৈরি করা হবে। যা খরচ করা হবে মূলত অসংগঠিত ক্ষেত্রের কর্মীদের সামাজিক সুরক্ষা দিতে।

Advertisement

বিলে ইঙ্গিত

• এখন কর্মীদের মূল বেতনের ১২% কাটা হয় ইপিএফ খাতে। সাধারণত সম পরিমাণ টাকা দেয় মালিকপক্ষ। কিন্তু বিলে ইঙ্গিত, আগামী দিনে কর্মীদের সামনে মাসে বেতনের ১০% কাটানোর বিকল্প খোলা হতে পারে।

• সে ক্ষেত্রে কর্মী চাইলে ১০ শতাংশের বেশি টাকা কাটাতে পারবেন। কিন্তু মালিকপক্ষ দিতে বাধ্য থাকবেন ১০% পর্যন্তই।

• সংসদকে এড়িয়ে শুধু প্রশাসনিক নির্দেশিকার মাধ্যমে টাকা কাটানোর অনুপাত আগামী দিনে বদলাতে পারবে সরকার।

এখনও অস্পষ্ট

• সকলের জন্যই ইপিএফে টাকা কাটা ১২% থেকে কমে ১০% হবে? নাকি খোলা থাকবে দুই বিকল্প?

• সমস্ত কর্মীর জন্য এই বদলের পরিকল্পনা? না কি নির্দিষ্ট কিছু শিল্পের জন্য?

• কাটানো টাকার অনুপাত কমবে কি না, তা কিছুটা স্পষ্ট হবে বিল নিয়ে আলোচনার সময়ে।

বিল আনার আগে বিভিন্ন খসড়ায় যে ভাবে ইপিএফ, ইএসআইয়ের মতো প্রতিষ্ঠানগুলিকে কর্পোরেট ধাঁচে ঢেলে সাজানোর কথা বলা হয়েছিল, তারও বিরোধিতা করছিল কর্মী সংগঠনগুলি। এ দিন পেশ করা বিলে আপাতত ওই সমস্ত প্রতিষ্ঠানের স্বাতন্ত্রে হাত না-দেওয়ারই ইঙ্গিত মিলেছে। তবে যে ভাবে ইপিএফের টাকা শেয়ার বাজারে খাটানো হচ্ছে বা বলা হচ্ছে স্টার্ট-আপ সংস্থায় ঢালার কথা, তাতে তীব্র আপত্তি অধিকাংশ কর্মী সংগঠনেরই।

আজ বিল পেশের পরে আরএসপি সাংসদ এন কে প্রেমচন্দ্রন বলেন, এখন কর্মীরা যে সব সুবিধা ও সুরক্ষা পান, তারও অনেকগুলি ‘কাড়ার’ বন্দোবস্ত করা হয়েছে এই বিলে। যা আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার নীতির পরিপন্থী। তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়ের অভিযোগ, এই বিলে জটিলতা বাড়বে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement