মঙ্গলবার প্রদীপ জ্বেলে একসঙ্গে ৭টি কেন্দ্রে বৈদ্যুতিন চা নিলাম ব্যবস্থার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করছেন রীতা তেওটিয়া। উপস্থিত সন্তোষ ষড়ঙ্গী, আর আর রশ্মি ও তপন চৌধুরী (বাঁ দিক থেকে)।— নিজস্ব চিত্র
আইনি জটিলতার কারণে কেন্দ্রের বেশ কিছু প্রকল্পের সুবিধা নিতে পারছেন না চা বাগান শ্রমিকরা। অথচ উত্তরবঙ্গের বেশ কিছু বাগানের পরিস্থিতি এমনই যে, সামাজিক ভাবে সেগুলি পাওয়ার দাবি করতে পারেন তাঁরাও। এই যুক্তিতেই বাগান শ্রমিকদের স্বার্থরক্ষায় কেন্দ্রের কাছে কিছু আইন শিথিলের আর্জি পেশ করল রাজ্য।
বস্তুত, ডানকান গোষ্ঠীর কয়েকটি বাগান-সহ উত্তরবঙ্গে বেশ কিছু চা বাগান গত কয়েক মাস ধরেই সঙ্কটে। বাগান কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসন না- মানলেও, অনাহারে বহু শ্রমিকের মৃত্যুর অভিযোগও উঠেছে। এই অবস্থায় রাজ্যে চা শিল্পের পরিস্থিতি পর্যালোচনা ও দেশের সবক’টি নিলাম কেন্দ্রে একসঙ্গে বৈদ্যুতিন নিলাম ব্যবস্থার উদ্বোধন করতে দু’দিনের সফরে কলকাতায় এসেছিলেন কেন্দ্রীয় বাণিজ্য সচিব রীতা তেওটিয়া ও বাণিজ্য মন্ত্রকের অতিরিক্ত সচিব আর আর রশ্মি। মঙ্গলবার নবান্নয় রাজ্যের মুখ্যসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায় ও পদস্থ আমলাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন তাঁরা। টি বোর্ডের চেয়ারম্যান সন্তোষ ষড়ঙ্গী, রাজ্যের শিল্প সচিব কৃষ্ণ গুপ্ত ও শ্রম সচিব অনুপ অগ্রবাল প্রমুখও উপস্থিত ছিলেন। সেখানেই শ্রমিকদের জন্য ওই আর্জি জানানো হয়।
রাজ্যের এক কর্তার দাবি, চা শ্রমিকদের জন্য তাঁদের যেমন কিছু প্রকল্প আছে, তেমন কয়েকটি প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ রয়েছে কেন্দ্র ও রাজ্য, উভয়েরই। তবে তাঁর অভিযোগ, ইন্দিরা আবাস যোজনার মতো বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সুবিধা শুধু দারিদ্রসীমার নীচে বসবাসকারীরাই পান। তাই এ ক্ষেত্রে আইন শিথিল করে বাগান শ্রমিকদেরও সেই সুবিধা দেওয়ার জন্য কেন্দ্রের কাছে আর্জি জানানো হয়েছে।
তেওটিয়া অবশ্য রাজ্যে চা শিল্পের সার্বিক পরিস্থিতি খুব উদ্বেগজনক নয় বলেই দাবি করেন এ দিন। বলেন, ‘‘কিছু বাগানের অবস্থা খারাপ হলেও কয়েকটির ভাল।’’ তিনি জানান, কেন্দ্রের বিভিন্ন প্রকল্প বাগানগুলিতে চালু করার কথা জানিয়েছে রাজ্য।
টি বোর্ড সূত্রে খবর, রাজ্যের ভোট পর্ব পুরো মিটলে উত্তরবঙ্গের রুগ্ণ ও সঙ্কটজনক বাগানগুলির জন্য পুনরুজ্জীবন প্রকল্পের প্রস্তাব কেন্দ্রকে পাঠানো হবে। তারপর সার্বিক ভাবে একটি পুনরুজ্জীবন প্রকল্প চূড়ান্ত হবে। চা শ্রমিক আইন যথাযথ রূপায়ণের জন্য দ্রুত শূন্যপদে নিয়োগের নির্দেশও শ্রম দফতরকে দিয়েছেন মুখ্যসচিব।
অন্য দিকে, রাজ্যে প্রস্তাবিত টি পার্কের বিষয়েও কথা হয় বৈঠকে। শিলিগুড়ির টি পার্কটি আইনি জটিলতার মুখে। সেই সঙ্কট কাটাতে কেন্দ্র-রাজ্য উদ্যোগী হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। ফলতায় আর একটি টি পার্ক গড়ার প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে। সেখানে রাজ্য শিল্প পরিকাঠামো উন্নয়ন নিগমের জমি দেওয়ার কথা জানিয়েছে রাজ্য। এক কর্তার কথায়, ‘‘দাম পেলে ওই জমি টি পার্কের জন্য দিতেই পারি।’’
এ দিকে, দেশের ৭টি চা নিলাম কেন্দ্রেই এ দিন একসঙ্গে বৈদ্যুতিন নিলাম ব্যবস্থার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন বাণিজ্য সচিব, যা চালু হবে জুনের তৃতীয় সপ্তাহে। সেই সময়েই প্রথম বৈদ্যুতিন নিলাম হবে দার্জিলিং চায়েরও। নতুন ব্যবস্থায় অবশ্য কর-সহ কিছু সমস্যা আছে বলে অভিযোগ শিল্পের। তবে ষড়ঙ্গীর আশ্বাস, সে সবের সমাধান হবে সব পক্ষকে নিয়েই। তাঁদের দাবি, নতুন ব্যবস্থা চা বিক্রিতে আরও স্বচ্ছতা আনবে। বাড়াবে বাজারের পরিধি। এ দিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ক্যালকাটা টি ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান তপন চৌধুরীও।