এয়ার এশিয়া (ইন্ডিয়া)-র বিরুদ্ধে ফৌজদারি ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনল সিবিআই। ছবি: এএফপি।
এয়ার এশিয়া (ইন্ডিয়া)-র বিরুদ্ধে ফৌজদারি ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এনেছে সিবিআই। আন্তর্জাতিক উড়ান চালনোর অনুমোদন প্রক্রিয়া দ্রুততর করার জন্য, কোম্পানির তরফ থেকে ভারতীয় বিমান চালনা নীতি পরিবর্তন করার চেষ্টা করা হয়েছে বেআইনি ভাবে, অভিযোগ এমনই।
এয়ার এশিয়া যদিও সব অভিযোগ অস্বীকার করেছে, কিন্তু এই জল কম দূর গড়াবে বলে মনে হয় না। সরকারি তদন্তের মুখে পড়লে ব্যবসার ক্ষতি হয় সব থেকে বেশি। সরাসরি একটি বড় প্রভাব পড়তে পারে কোম্পানির দৈনন্দিন ক্রিয়াকলাপের উপর। সম্প্রসারণের পরিকল্পনা, কর্মীদের মানসিক অবস্থা এবং বাজার থেকে টাকা তোলার কাজে নানান নেতিবাচক প্রভাব আসতে পারে।
২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর, ঠিক পাঁচ বছরের মাথায় এয়ার এশিয়া (ইন্ডিয়া)-র কর্মকর্তাদের এখন বড় চ্যালেঞ্জ হবে ভারতে নিজেদের ব্যবসা ধরে রাখা। এয়ার এশিয়া (ইন্ডিয়া) নিজেদের ব্র্যান্ডকে ধীরে সুস্থে বড় করছিল ভারতে। ভারত পৃথিবীর অন্যতম বড় বাজার। টাটা গোষ্ঠীর সাথে হাত মিলিয়ে 'ভারতীয়' হয়ে উঠেছিল এয়ার এশিয়া (ইন্ডিয়া)। কিন্তু অসামরিক বিমান চলাচল পরিষেবার বাজার ধরা এমনিতেই বেশ কঠিন। যে কোনও রকমের ভুলভ্রান্তি বা গোলমালই বড় ক্ষতি ডেকে আনতে পারে।
আরও পড়ুন: পেট্রল-ডিজেলের পর এ বার দাম বাড়ল রান্নার গ্যাসের
প্রথমত, ইনডিগো একাই ৪০ শতাংশ মার্কেট শেয়ার নিয়ে বসে আছে। জেট এয়ারওয়েজ বেশ খানিকটা দূরে দ্বিতীয়। তাদের আছে ১৪.৭ শতাংশ মার্কেট শেয়ার। বিমান যাত্রার টিকিটের দাম নিয়ে বিশাল যুদ্ধ। এয়ার এশিয়া (ইন্ডিয়া) কিছু বছর আগে ২ শতাংশ মার্কেট শেয়ার থেকে নিজেকে ৫ শতাংশে তুলে নিয়ে গিয়েছিল। এ রকম এক সময়ে, সিবিআই-র আনা ফৌজদারি ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এয়ার এশিয়া (ইন্ডিয়া)-র সুনামে ধাক্কা দেবে সন্দেহ নেই।
কিছু দিন আগেই, সাইরাস মিস্ত্রি এয়ার এশিয়া (ইন্ডিয়া)-র কথা উল্লেখ করে ২২ কোটি টাকার সন্দেহজনক লেনদেনের কথা তুলেছিলেন। সেই অভিযোগের রেশ কাটতে না কাটতে, এখন সিবিআই-এর তোপ। লাইসেন্স বাতিল করার বিষয়ে অসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রক এখনই কিছু বলেনি, কিন্তু ভবিষ্যতে কিছু করবে না এ রকম আশ্বাসও দেয়নি।
দ্বিতিয়ত, এয়ার এশিয়া (ইন্ডিয়া) কয়েক মাস আগেই লাভ দেখায় ব্যবসায়। যাত্রী সংখ্যা বাড়ার ফলে, এয়ার এশিয়া (ইন্ডিয়া) ১৩ কোটি টাকা লাভ হয় ডিসেম্বর ২০১৭-তে শেষ হওয়া কোয়ার্টারে। এক বছর আগে একই কোয়ার্টারে হয়েছিল ১৫ কোটি টাকা ক্ষতি। এই বছর কোম্পানির পরিকল্পনা ছিল আন্তর্জাতিক অপারেশন শুরু করার। ভারতে প্রতি যাত্রী পিছু ৩৭০০ টাকা পেয়েছিল এয়ার এশিয়া এবং প্রায় ৮৫% সিট বিক্রি করতে পেরেছিল। সিবিআই-র অভিযোগের পর দেখতে হবে যাত্রীদের এই কোম্পানির প্রতি আকর্ষণ কমে কি না। আগে আশা করা হচ্ছিল যে ২০১৯ সালে এয়ার এশিয়া (ইন্ডিয়া) মোটা টাকা লাভ দেখবে, কিন্তু এখন এই ব্যাপারে প্রশ্নচিহ্ন থেকেই যাচ্ছে।
আরও পড়ুন: এয়ার এশিয়ার তদন্তে ইডি-ও
তৃতীয়ত, এয়ার এশিয়া (ইন্ডিয়া) ভারতে ব্যবসা বাড়ানোর কর্মসূচি এখন বিশ বাঁও জলে। সাতটি নতুন বিমান কেনার কথা ছিল। পরবর্তী পাঁচ বছরে প্ল্যান ছিল ৬০টি বিমানের নেটওয়ার্ক গড়ার। যেহেতু এক একটি বিমানের দাম প্রচুর, কিছু টাকা সংগ্রহ করে অর্ডার দেওয়া এবং তার পরে পুরো টাকা দেওয়ার প্রক্রিয়া বেশ গোলমেলে। সম্প্রতি, এয়ারলাইনের সিইও এবং এমডি অমর অব্রোল তাঁর অবস্থান থেকে পদত্যাগ করেছিলেন। এর আগের সিইও মিত্তু চান্ডিল্যও চলে যান। যদি কোনও কারণে বাকি এয়ারলাইন সংস্থারা টিকিটের দাম বা বিভিন্ন রুটে কঠিন লড়াই শুরু করে, এয়ার এশিয়া (ইন্ডিয়া)-র পক্ষে রুখে দাঁড়ানো একটু কঠিন হবে এই মুহূর্তে।
চতুর্থ গোলমাল হল ব্যবসার জন্যে টাকা জোগাড় করা। এয়ারলাইন ব্যবসার মোটা টাকার উপরে নির্ভরশীল। কারণ ফিক্সড খরচ হিসাবে তেলের টাকা (এভিএশন ফুয়েলের দাম অনেক), এবং কর্মচারীদের মাইনের জন্যে নিয়মিত ভাবে প্রচুর অর্থ প্রয়োজন। টনি ফার্নান্ডেজ ভেবেছিলেন এয়ার এশিয়া (ইন্ডিয়া)-র আইপিও করবেন, অর্থাৎ শেয়ার বাজারে ছেড়ে কিছু টাকা তুলবেন। এয়ার এশিয়ার ভারতে বিস্তার খুব আক্রমনাত্মকভাবে করা হয়, তাই খরচ হয় প্রচুর। সিবিআই-এর আনা ফৌজদারি ষড়যন্ত্রের অভিযোগের ফলে এয়ার এশিয়া গোষ্ঠীকে এয়ার এশিয়ার ভারতীয় ইউনিটে আরও টাকা ঢালতে হতে পারে।
শেষমেশ, এয়ার এশিয়া (ইন্ডিয়া)-র কর্মীদের জন্যে এখন একটা বড় পরীক্ষা। এখন মোটামুটি ১৬০০ জন কর্মী আছেন। কিংফিশার সঙ্কটের সময় আমরা দেখেছি কী ভাবে বেতন নিয়ে টানাপড়েন চলে বহুদিন। টনি ফার্নান্ডেজের তুলনা টানা হয় ভার্জিন এয়ারের কর্ণধার রিচার্ড ব্র্যানসন ও কিংফিশার এয়ারের প্রতিষ্ঠাতা বিজয় মাল্যের সঙ্গে। সিবিআই তদন্তের ফলে কর্মীদের মানসিক চাপ বাড়তে পারে। গত কয়েক বছরে আমরা দেখেছি এয়ারলাইন ব্যবসার জাঁতাকলে এয়ার মন্ত্র, এমডিএলআর এয়ারলাইন্স, স্টার অ্যাভিয়েশন, য্যাভ অ্যাভিয়েশন, জ্যাগসন এয়ারলাইন্স এবং কিং এয়ার মতন সংস্থাদের বেহাল হতে।