জি২০ বৈঠকে অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি (ডান দিকে) এবং রিজার্ভ ব্যাঙ্ক গভর্নর রঘুরাম রাজন। শনিবার। ছবি: পিটিআই।
মুদ্রার দাম কমানোর লড়াইয়ে নামার ঘোরতর বিরোধিতা করল জি২০। শনিবার তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারায় জি২০ গোষ্ঠী তার দু’দিনের বৈঠক শেষে এক ঘোষণাপত্রে এই অঙ্গীকার করল।
উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলির জোট জি২০-র অর্থমন্ত্রী ও শীর্ষ ব্যাঙ্ক প্রধানরা এই বৈঠকে আলোচনার সময়েই চিনের তরফে তাদের মুদ্রা ইউয়ানের দাম কমানো নিয়ে উদ্বেগ জানান। ঘোষণাপত্রে অবশ্য চিনের নাম না-করে আন্তর্জাতিক মুদ্রার দাম স্থির করার ভার বাজারের হাতেই ছেড়ে দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করেন তাঁরা। এ নিয়ে অহেতুক প্রতিযোগিতা দুনিয়া জুড়ে আর্থিক সঙ্কট তৈরি করতে পারে বলেও তাঁরা হুঁশিয়ারি দেন। চিন তার রফতানির বাজার বাড়িয়ে নিজের ঢিমেতালে চলা অর্থনীতির চাকায় গতি ফেরাতে সম্প্রতি ইউয়ানের দাম ছাঁটাই করায় বিশ্ব জুড়ে ধস নামে শেয়ার বাজারে। এখানে তার প্রতিই ইঙ্গিত করেন জি২০-র সদস্যরা।
এর আগে বৈঠকে আইএমএফ প্রধান ক্রিস্টিন ল্যাগার্দের প্রশংসা কুড়িয়েছে ভারত। তিনি বলেন, উন্নয়নের পথে দ্রুত এগিয়ে চলা নামমাত্র যে-ক’টি দেশ রয়েছে, সেই তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে ভারত। পাশাপাশি, ভারতের অর্থনীতির ভিত যথেষ্ট শক্তিশালী বলে বৈঠকে দাবি করেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। চিনের তরফে ইউয়ানের দাম কমানো বা আমেরিকার সুদ বাড়ানোকে কেন্দ্র করে যে-সমস্যা তৈরি হয়েছে, তা স্থায়ী হবে না বলেই তিনি আশাবাদী। জেটলি বলেন, ‘‘এই সব সমস্যার মেঘ কেটে গেলেই আসল ছবিটা স্পষ্ট হবে।’’ এ বছর যথেষ্ট বেশি হারে আর্থিক বৃদ্ধি অর্জন করা ভারতের পক্ষে সম্ভব হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
একই সুরে ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর রঘুরাম রাজনও বলেন, মুদ্রার দামের খুব বেশি ওঠা-পড়ার সমস্যা বেশি দিন থাকবে না। তাই এ নিয়ে তেমন ভয়ের কিছু নেই। রাজন বলেন, ‘‘মুদ্রা বাজার অর্থনীতিকে মসৃণ ভাবে চালিয়ে নিয়ে যায় জ্বালানি তেলের মতো। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বৃদ্ধি কতটা হবে, তা নির্ভর করে সার্বিক আর্থিক নীতির উপর।’’ রাজন স্পষ্ট করে বলেন, এখানে মুদ্রা বাজারের সমস্যা নয়, সঙ্কট ঘোরালো করতে পারে চাহিদা তলানিতে নেমে আসার জেরে মানুষের কম খরচ করার প্রবণতা, উৎপাদনশীলতায় ঘাটতি ও লগ্নি কম হওয়া।
ইউয়ানের দাম কমা নিয়ে জেটলি অবশ্য আগেই উদ্বেগ জানান। তার জেরে শেয়ার ও বিদেশি মুদ্রার বাজারের বিপজ্জনক ওঠা-পড়া ঠেকাতে তিনি বিশ্ব জুড়ে একটি সুরক্ষা ব্যবস্থা তৈরির কথা বলেন। ঘোষণাপত্রে যার প্রতিফলন পড়ে। জি২০ সদস্যরা মুদ্রার দাম কমানোর দৌড়ে নামবেন না বলেই সংকল্প করেন।
ভারতকে শিরোপা দিয়ে আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডার (আইএমএফ)-এর কর্ণধার ক্রিস্টিন ল্যাগার্দে বলেন, ‘‘যদি নজরে পড়ার মতো আর্থিক বৃদ্ধি কোথাও থাকে, তা হলে তা ভারতে। উন্নয়নের বিচারে বিশ্ব অর্থনীতিতে অন্যতম উজ্জ্বল বিন্দু ভারত।’’ তাঁর মতে, উন্নত ও উন্নয়নশীল দুনিয়ার মধ্যে তুলনা করলে দেখা যাবে, ৃশিল্পোন্নত দুনিয়ায় সমস্যা লেগেই আছে। তিনি স্বীকার করেন, দ্রুত উপরের দিকে উঠে আসা রাষ্ট্রগুলির মধ্যে সমস্যায় পড়েছে চিন, যদিও তা খুব বড় আকার নেবে না বলেই ধারণা ল্যাগার্দেরও। তিনি বলেন, শেয়ার বাজারের প্রতিক্রিয়া দেখে চিনের সমস্যাকে যতটা ভয়াবহ মনে হচ্ছে, বাস্তবে তা হবে না।’’