Gold

সংস্থার হিসেবে নজর, ভরসা সোনার সুরক্ষায়

অনিশ্চিত সময় বরাবর মাথা তোলে সোনার দাম। রিটার্ন দেয় ভাল।

Advertisement

অমিতাভ গুহ সরকার

শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০২০ ০৫:২৯
Share:

ইতিমধ্যেই ১০ গ্রাম পাকা সোনার দাম ৫০ হাজার টাকা ছাড়িয়েছে।

সংস্থার হিসেবের খাতা কতটা পোক্ত তা বুঝতে লগ্নিকারীরা অপেক্ষা করে থাকেন প্রতি তিন মাসে তাদের আর্থিক ফল কেমন হয়, তা জানার জন্য। তাই বুঝে সংস্থার শেয়ারে টাকা ঢালেন তাঁরা। তাদের ঋণপত্র কেনেন। সংস্থার ফল ভাল হলে বোঝা যায় পণ্য বা পরিষেবা বিক্রি হচ্ছে ভাল। ব্যবসা হচ্ছে ভাল। অর্থনীতি নিয়েও চিন্তার কিছু নেই। ফলাফল খারাপ হলে বুঝতে হবে উল্টোটা। গত (২০১৯-২০) অর্থবর্ষের শেষ তিন মাসের সব আর্থিক ফল এখনও প্রকাশিত হয়নি। তবে এরই মধ্যে কিছু সংস্থা ঘোষণা করতে শুরু করেছে চলতি অর্থবর্ষের প্রথম তিন মাসের (এপ্রিল-মে-জুন) হিসেব। সেই লাভ-ক্ষতি, আয়-ব্যয়ের হিসেব-নিকেশ ছোট মেয়াদে শেয়ার বাজারের গতি-প্রকৃতি নির্ধারণ করতে পারে। যদিও করোনার কামড়ে বহু সংস্থার চাহিদা, উৎপাদন, বিক্রি এবং লাভ ভাল রকম সঙ্কুচতি হলেও, তা যেন নজর এড়িয়ে যাচ্ছে শেয়ার বাজারের। এই পরিস্থিতিতেও সূচক বেশ তেজি। বাজারকে ভাল রকম শক্তি জোগাচ্ছে রিলায়্যান্স ইন্ডাস্ট্রিজ়-সহ কয়েকটি সংস্থা।

Advertisement

এই মেয়াদের প্রথম দু’মাস (এপ্রিল এবং মে) যেহেতু পুরোপুরি লকডাউনের কবলে ছিল, সেই কারণে বেশির ভাগ সংস্থার আর্থিক ফল যে বেশ খারাপ হবে, তা ধরেই নেওয়া যায়। শেয়ার বাজারও এটা মাথায় রেখেছে। তবে কোন সংস্থার ফল ঠিক কী রকম হয়, তা বিচার করে তার প্রতিফলন পড়বে তাদের শেয়ারে। এর মধ্যেও যারা লাভের হিসেব দেবে, তাদের উপরে ভরসা বাড়বে। আর ফল খারাপ হলে দেখা হবে বাকিদের থেকে কতটা কম খারাপ। যাতে বোঝা যায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পছন্দের সংস্থার ছন্দে ফেরাও কতটা সহজ হবে। দেশের বিনিয়োগের দুনিয়ায় এখন চলছে সেটা জানারই অপেক্ষা। এই কারণে এক মাস একটু চঞ্চল থাকতে পারে সেনসেক্স ও নিফ্‌টি। বাজারের নজর থাকবে ভবিষ্যৎ সম্পর্কে কোন সংস্থার কী বক্তব্য থাকে, সে দিকেও।

অনিশ্চিত সময় বরাবর মাথা তোলে সোনার দাম। রিটার্ন দেয় ভাল। কারণ, অনিশ্চিত বাজারে সোনায় লগ্নি সুরক্ষিত থাকবে এবং তাতে আগামী দিনে লাভও হতে পারে এই ভেবে তা কিনতে থাকেন অনেকে। ফলে চাহিদা বাড়ে। এ বারেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। যে কারণে ইতিমধ্যেই ১০ গ্রাম পাকা সোনার দাম ৫০ হাজার টাকা ছাড়িয়েছে। অনিশ্চয়তা বহাল থাকায় দাম আরও বাড়তে পারে। যে কারণে সম্প্রতি সরকারি গোল্ড বন্ডের বিক্রি অনেকটা বিক্রি বেড়েছে। যাঁরা কিনেছে, তাঁরা এখনই লাভের মুখ দেখছেন। এ ছাড়া লগ্নি করার কথা ভাবা যেতে পারে গোল্ড ইটিএফেও।

Advertisement

সোনা বন্ডে লগ্নি

• চলতি অর্থবর্ষে সরকারি সোনা বন্ডের প্রথম তিনটি সিরিজ় (১,২,৩) বাজারে এসেছিল এপ্রিল, মে, জুনে। প্রতি গ্রাম বিক্রি হয়েছে যথাক্রমে ৪৬৩৯, ৪৫৯০ ও ৪৬৭৭ টাকায়।
• এপ্রিল, মে ও জুনে ইসু হওয়া মোট ইউনিট বিক্রির পরিমাণ ছিল ১৭,৭২,৮৭৪ গ্রাম, ২৫,৪৪,২৯৪ গ্রাম এবং ২৩,৮৮,৩২৮ গ্রাম। (এক ইউনিট= এক গ্রাম)
• ওই তিন মাসে গোল্ড বন্ড বিক্রি করে সংগৃহীত হয়েছে ৩১০৮ কোটি টাকা।
• সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, অনিশ্চিত বাজারে সোনায় লগ্নি সুরক্ষিত থাকবে এবং তার দাম বাড়ায় লাভও হতে পারে, এই ভেবেই এতটা লগ্নি হয়েছে সোনা বন্ডে। করোনার কামড়ের মধ্যেই।
• চতুর্থ দফায় সোনা বন্ড ইসু হয়েছে ৬ থেকে ১০ জুলাই। এই দফায় দাম ছিল ৪৮৫২ টাকা। অনলাইনে কিনলে গ্রাম প্রতি ৫০ টাকা কম দাম দিতে হয়েছে।
• চতুর্থ দফায় এই গোল্ড বন্ড বিক্রি করে কত টাকা তুলেছে সরকার, তার হিসেব এখনও পাওয়া যায়নি।
• পঞ্চম ও ষষ্ঠ দফায় বাজারে সোনা বন্ড বিক্রির তারিখ যথাক্রমে ৩ থেকে ৭ অগস্ট এবং ৩১ অগস্ট থেকে ৪ সেপ্টেম্বর।

মোদী সরকার অর্থনীতি ফের মাথা তুলছে বলে দাবি করলেও, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক মনে করে মাঝারি মেয়াদে অস্থিরতা যাওয়ার নয়। চাহিদা যেমন পুরো ফেরেনি, তেমনই করোনার আবহে বিঘ্ন ঘটছে উৎপাদনে। ব্যাঙ্কের অনুৎপাদক সম্পদ আরও বাড়বে বলেও আশঙ্কা আরবিআইয়ের। বিপর্যয় কত দিন চলবে, তা জানে না কেউ। তবে এটা নিশ্চিত যে, অনিশ্চয়তা তত দিন পর্যন্ত জারি থাকবে, যত দিন না কোনও অব্যর্থ প্রতিষেধক পাওয়া যাচ্ছে।

অর্থনীতির দিক থেকে ভাল খবরের মধ্যে যা আছে, তা হল—

• রেকর্ড বিদেশি মুদ্রার ভান্ডার। ৩ জুলাই শেষ হওয়া সপ্তাহে এই ভান্ডার বেড়ে হয়েছে ৫১,৩২৫ কোটি ডলার, যা সর্বকালীন রেকর্ড।

• চিন থেকে কিছু সংস্থা লগ্নি সরাতে চাইছে ভারতে। এ দেশে আরও লগ্নির পরিকল্পনা করেছে আইফোন উৎপাদনকারী সংস্থা ফক্সকন।

বড় সংস্থাগুলির মধ্যে গত সপ্তাহে প্রথম ফলাফল প্রকাশ করেছে তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা টিসিএস। এপ্রিল-জুন, এই তিন মাসে সংস্থার আয় সামান্য বাড়লেও, নিট মুনাফা ১৩.৮% কমে নেমেছে ৭০০৮ কোটি টাকায়। সংস্থার আশা, দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক থেকে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হতে শুরু করবে। উৎপাদন ও বিক্রি দুই-ই কমেছে টাটা স্টিলের। সামগ্রিক উৎপাদন এবং বিক্রি কমেছে যাথক্রমে ২৮.৪৯% ও ২২.৮%। অনুমান, করোনার কারণে তুলনায় কম লোকসান দেখবে যারা, তার মধ্যে থাকবে ওষুধ প্রস্তুতকারী, তথ্যপ্রযুক্তি ও ভোগ্যপণ্য সংস্থা।

(মতামত ব্যক্তিগত)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন