অনিশ্চয়তায় আগুন সোনা

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লগ্নির জায়গা হিসেবে সোনা বরাবরই বেশ নিরাপদ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০২:১৭
Share:

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লগ্নির জায়গা হিসেবে সোনা বরাবরই বেশ নিরাপদ।

বছরের প্রথম দু’মাসও শেষ হয়নি এখনও। তার মধ্যেই পাকা (২৪ ক্যারাট) সোনার দাম প্রতি ১০ গ্রামে বেড়ে গিয়েছে প্রায় ২,০০০ টাকা। মঙ্গলবার জিএসটি সমেত ওই দর পৌঁছেছে ৩৫,১২৮ টাকায়। যা আদপে সর্বকালীন রেকর্ড বলে দাবি করছে সংশ্লিষ্ট মহল। বিশেষজ্ঞদের মতে, এর মূল কারণ দেশে-বিদেশে বিভিন্ন ক্ষেত্রে আর্থ-রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, ডলারের চড়া দর এবং মার্কিন শীর্ষ ব্যাঙ্ক ফেডারেল রিজার্ভের এখনই আর সুদ না বাড়ানোর আশ্বাস।

Advertisement

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লগ্নির জায়গা হিসেবে সোনা বরাবরই বেশ নিরাপদ। অন্তত দীর্ঘ মেয়াদে বিনিয়োগকারীদের সাধারণত তা হতাশ করে না। তার উপরে অর্থনীতি, রাজনীতি এবং শেয়ার-বন্ড-মুদ্রার বাজারে অনিশ্চয়তা দানা বাঁধলে, লগ্নির নিরাপদ গন্তব্য হিসেবে সোনার কদর আরও বাড়ে। এই মুহূর্তে ঠিক সেটাই ঘটছে বলে তাঁদের দাবি।

ওয়েস্ট বেঙ্গল বুলিয়ন মার্চেন্টস অ্যান্ড জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক দীনেশ কুমার খাবরা বলেন, ‘‘সুদ বেশি থাকলে সাধারণত বন্ড ও স্থায়ী আমানতে লগ্নির ঝোঁক বাড়ে। কিন্তু মার্কিন শীর্ষ ব্যাঙ্ক ফেডারেল রিজার্ভ জানিয়েছে, আপাতত সুদ বাড়ানোর ইচ্ছে তাদের নেই। ভারতেও রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ২৫ বেসিস পয়েন্ট সুদ কমিয়েছে। ফলে বন্ড ও অন্য ঋণপত্রের বদলে লগ্নি বাড়ছে সোনায়।’’

Advertisement

আমেরিকা-চিনের বাণিজ্য যুদ্ধও সোনায় লগ্নি বৃদ্ধিতে উৎসাহ জুগিয়েছে। অল ইন্ডিয়া বুলিয়ন ফেডারেশনের সহ সভাপতি হর্ষদ আজমেরা বলেন, আমেরিকা-চিনের শুল্ক যুদ্ধ মেটাতে দু’দেশের মধ্যে যে বৈঠক হওয়ার কথা ছিল, তা নিয়েও অনিশ্চয়তা রয়েছে। এর জেরে আন্তর্জাতিক আর্থিক বাজার এখন টালমাটাল। ফলে লগ্নিকারীরা সোনাকেই বিনিয়োগের নিরাপদ জায়গা হিসাবে বেছে নিচ্ছেন।

বৃদ্ধির কারণ

• মার্কিন-চিন বাণিজ্য যুদ্ধের জেরে বিশ্ব জুড়ে শেয়ার বাজার টালমাটাল। অস্থির ডলারও। ফলে লগ্নির নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে কদর বাড়ছে সোনার।
• ভারতেও ভোট এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে অনিশ্চয়তা বাড়ছে শেয়ার বাজারে। সোনার দিকে ঝুঁকছেন অনেক লগ্নিকারী।
• মাঝের রেকর্ড উচ্চতা থেকে কিছুটা নামলেও, এখনও যথেষ্ট চড়া টাকার সাপেক্ষে ডলারের দর। তাই খরচ বেড়েছে সোনা আমদানির।
• আপাতত সুদ বাড়ানোর সম্ভাবনা নেই বলে ডিসেম্বরেই জানিয়েছে মার্কিন শীর্ষ ব্যাঙ্ক ফেডারেল রিজার্ভ। ফলে ঋণপত্রে লগ্নির আকর্ষণ কমছে মার্কিন মুলুকে। চাহিদা বাড়ছে সোনার।
• ভারতেও হালে সুদ কমিয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। আগামী দিনে তা আরও কিছুটা কমার সম্ভাবনা।

ডলারের সাপেক্ষে টাকার দামও সম্প্রতি বেশ কিছুটা পড়ে গিয়েছে। তাই সোনা কিনতে ডলারের সংস্থান করতে গিয়ে ভারতীয় আমদানিকারীদের আগের থেকে বেশি টাকা গুনতে হচ্ছে। তা সোনার দাম বৃদ্ধিতে ইন্ধন জোগাচ্ছে। স্বর্ণ শিল্প বাঁচাও কমিটির কার্যকরী সভাপতি বাবলু দে বলেন, ‘‘এই মুহূর্তে বিশ্ব বাজারে প্রতি আউন্স সোনার দাম ১,৩৩০ ডলার। পরিস্থিতি যে দিকে এগোচ্ছে, তাতে খুব শীঘ্রই তা ১,৪৫০ ডলারের কাছাকাছি চলে যাবে বলে আশঙ্কা।’’

ভারতে লোকসভা ভোটের পরে কেন্দ্রে স্থায়ী সরকার গঠনের প্রশ্নকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও রয়েছে চরম অনিশ্চয়তা। প্রায় নাগাড়ে পড়ছে শেয়ার বাজার। তাই আগামী দিনে সোনায় লগ্নি আরও বাড়বে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ফলে তার দৌলতে দাম আরও উপরের দিকে যেতে পারে বলেই তাঁদের ধারণা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন