রাজকোষ ঘাটতি বেলাগাম হওয়ার ভয়, কত নামবে বৃদ্ধির হার, প্রশ্ন সেটাই

মোদী সরকার এপ্রিল-মে মাসের লোকসভা ভোটে জিতে ফের ক্ষমতায় এসেছিল। কিন্তু এপ্রিল থেকে জুনেই বৃদ্ধি ৫ শতাংশে নামে। সোমবার সরকারি পরিসংখ্যান বলেছে, সেপ্টেম্বরে শিল্পোৎপাদনও আট বছরে সব থেকে কমে এসেছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০১৯ ০২:৪৬
Share:

প্রতীকী ছবি।

শিল্পোৎপাদন আট বছরের তলানিতে নেমে যাওয়ার পরে এ বার অর্থ মন্ত্রকের কর্তারাও একটা বিষয়ে মোটামুটি নিশ্চিত। সেটা হল, চলতি অর্থবর্ষের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর, এই তিন মাসে বৃদ্ধির হার ৫ শতাংশের নীচে নামছে। তার ধাক্কায় বাজেটের হিসেব-নিকেশ গোলমাল হয়ে যেতে পারে। কমতে পারে রাজস্ব আয়ও। ফলে রাজকোষ ঘাটতি লাগামছাড়া হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

Advertisement

মোদী সরকার এপ্রিল-মে মাসের লোকসভা ভোটে জিতে ফের ক্ষমতায় এসেছিল। কিন্তু এপ্রিল থেকে জুনেই বৃদ্ধি ৫ শতাংশে নামে। সোমবার সরকারি পরিসংখ্যান বলেছে, সেপ্টেম্বরে শিল্পোৎপাদনও আট বছরে সব থেকে কমে এসেছে। এর পরে আজ স্টেট ব্যাঙ্ক তাদের রিসার্চ পেপারে জানিয়েছে, জুলাই-সেপ্টেম্বরে বৃদ্ধি নামতে পারে প্রথম ত্রৈমাসিকেরও নীচে, ৪.২ শতাংশে। গোটা বছরের বৃদ্ধি নিয়ে স্টেট ব্যাঙ্কের পূর্বাভাস, তা পিছলে যেতে পারে ৫ শতাংশে। অথচ এর আগে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের মতো স্টেট ব্যাঙ্কেরও ইঙ্গিত ছিল, চলতি অর্থবর্ষে বৃদ্ধি ৬.১ শতাংশেই আটকে থাকবে।

অর্থ মন্ত্রকের এক সূত্র বলছেন, ‘‘শুধু দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে বৃদ্ধির হার ৫ শতাংশে নেমে যাওয়ার বিষয়ে নয়, গোটা অর্থবর্ষের জন্যও তা ৬% থেকে খুব বেশি কিছু আশা করছে না সরকার।’’ মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা কৃষ্ণমূর্তি সুব্রহ্মমণ্যনেরও মত, ২০১৯-২০ সালে ওই হার ৬ থেকে ৬.৫ শতাংশের মধ্যেই থাকবে।

Advertisement

জুলাই-সেপ্টেম্বরে বৃদ্ধি সত্যিই ৫ শতাংশের নীচে নামলে ২০১২-১৩ অর্থবর্ষের জানুয়ারি-মার্চের পরে এই প্রথম তা এতখানি কমবে। এমনিতেই এপ্রিল-জুনের বৃদ্ধি ৫ শতাংশে নামার পরে তা হয়েছিল ছ’বছরে সবচেয়ে কম। অর্থাৎ ২০১৩ সালে পরে এমন ঘটনা আরও কখনও ঘটেনি।

কিন্তু সরকারের কাছে তার থেকেও চিন্তার কারণ হল, বাজেটের হিসেবনিকেশ। ডিসেম্বর থেকেই বাজেটের প্রস্তুতি পুরোদমে শুরু হবে। কিন্তু চলতি বছরের বাজেটের অঙ্ক কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। রাজস্ব দফতরের কর্তারা মনে করছেন, আয় লক্ষ্যচ্যুত হওয়া এখন অবশ্যম্ভাবী। বাজেটে অর্থমন্ত্রী লক্ষ্য নিয়েছিলেন প্রত্যক্ষ কর আদায় গত বছরের তুলনায় ১৫.৪% বাড়ানোর। সেই তুলনায় অক্টোবর পর্যন্ত কর্পোরেট কর বাবদ আয় বৃদ্ধি মাত্র ০.৫৬%।

বিরোধীদের অভিযোগ, অর্থনীতির এই দুরবস্থার পিছনে রয়েছে নোট বাতিলের মতো ভুল নীতি। গত সপ্তাহেও অর্থ মন্ত্রকের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সাংসদরা আর্থিক পরিস্থিতি নিয়ে মন্ত্রকের সচিবদের চেপে ধরেছিলেন। সঙ্কটের জন্য নোটবন্দি দায়ী কি না, তা নিয়েও প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় সচিবদের।

ঝিমুনি কাটিয়ে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে কর্পোরেট করের হার কমাতে হয়েছে অর্থ মন্ত্রককে। ফলে প্রায় ৮০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব লোকসান হবে। সব মিলিয়ে আয়কর ও কর্পোরেট কর বাবদ আয় বাজেটের লক্ষ্য ১৩.৩৫ লক্ষ কোটির তুলনায় অন্তত ১.২০ লক্ষ কোটি টাকা কম হতে পারে বলে নর্থ ব্লক সূত্রের দাবি। সে ক্ষেত্রে রাজকোষ ঘাটতি কী ভাবে সামাল দেওয়া যাবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। নির্মলার লক্ষ্য, ঘাটতিকে ৩.৩ শতাংশে বেঁধে রাখা। কিন্তু মূল্যায়ন সংস্থা মুডি’জ়ের মতে ঘাটতি ৩.৭ শতাংশ ছুঁয়ে ফেলতে পারে।

বৃদ্ধি যে ভাবে কমছে, তাতে অর্থনীতিতে গতি আনতে সরকারি খরচ বাড়ানো দরকার। অথচ রাজস্ব আয় কমতে থাকলে সরকারি খরচেও রাশ টানতে হতে পারে, আশঙ্কা অর্থ মন্ত্রকের। তার উপরে বেসরকারি লগ্নিতে ভাটা। বাজারে কেনাকাটাও হচ্ছে না। তার প্রমাণ হল শিল্পের জন্য ব্যাঙ্কের ঋণ এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বরে কমে গিয়েছে ৮৮%। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক টানা পাঁচ বার সুদ কমানো সত্ত্বেও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন