Union Budget 2020

চাঙ্গা চাহিদাই চাকরির চাবি, বাজেটে সরকারি খরচ বাড়ানোর পরামর্শ

কাজের বাজারে জিয়নকাঠি ছোঁয়াতে এই বাজেটে চাহিদা চাঙ্গা করাই পাখির চোখ হওয়া উচিত বলে মনে করছেন তাঁরা।

Advertisement

ইন্দ্রজিৎ অধিকারী

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০২০ ০৪:৫৫
Share:

প্রতীকী ছবি।

এমন হাতে টাকা যাক, যেখান থেকে তা খরচ হবে দ্রুত। আর এমন খাতে বরাদ্দ বাড়ুক, যার দৌলতে গতি বাড়বে চাহিদার চাকায়। দেশে কাজের বাজারের বিবর্ণ ছবিতে রং ফেরাতে বাজেটে এই জোড়া দাওয়াই সবার আগে জরুরি বলে মত অনেক বিশেষজ্ঞের। তার জন্য আপত্তি নেই আপাতত ঘাটতির লক্ষ্যমাত্রা কিছুটা শিথিল করাতেও।

Advertisement

অর্থনীতিবিদদের বড় অংশের মত, বেকারত্বে বাঁধ দিতে আগে চাহিদাকে চাঙ্গা করা জরুরি। কারণ, বিক্রিবাটা বাড়লে তবেই নতুন কর্মী নেবে বিভিন্ন সংস্থা। বেতন বাড়বে পুরনো কর্মীদের। আবার এঁদের হাতে টাকা গেলে, তার একাংশ ফের বিভিন্ন পণ্য-পরিষেবার চাহিদার মূল্য হিসেবে ফিরবে বাজারে। সচল হবে বসে যাওয়া বৃদ্ধির চাকা। তাই কাজের বাজারে জিয়নকাঠি ছোঁয়াতে এই বাজেটে চাহিদা চাঙ্গা করাই পাখির চোখ হওয়া উচিত বলে মনে করছেন তাঁরা।

কিন্তু ঝিমিয়ে পড়া চাহিদা মাথা তুলবে কোন মন্ত্রে?

Advertisement

জেএনইউয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক জয়তী ঘোষ বলেন, ‘‘নোটবন্দি ও তড়িঘড়ি জিএসটি চালুর ধাক্কায় অর্থনীতি ধরাশায়ী। প্রথমে ওই আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কৃষি ও অসংগঠিত ক্ষেত্র। সেই সূত্রে বাজারে চাহিদায় ভাটায় পরে তার ছোঁয়াচ লেগেছে সংগঠিত ক্ষেত্রেও। এমন বিধ্বস্ত অর্থনীতিতে কাজের সুযোগ তৈরি হবে কোথা থেকে? তাই আগে চাহিদা বাড়ানো জরুরি।’’

কিন্তু মানুষের আয়ে টান পড়লে চাহিদা আসবে কোথা থেকে? বিশেষত কাজের বাজার যেখানে শুকিয়ে কাঠ। ব্যাঙ্ক ও ব্যাঙ্ক নয় এমন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে (এনবিএফসি) সঙ্কটের জেরে ভাটা ঋণ ও নগদের জোগানে।

দিল্লি স্কুল অব ইকনমিক্সের অর্থনীতির অধ্যাপক আদিত্য ভট্টাচার্যের মতে, ‘‘বাজেটে এমন লোকের হাতে টাকা দেওয়া জরুরি, যাঁরা তার বেশির ভাগটাই খরচ করবেন জিনিস কিনতে। অর্থাৎ, ওই টাকা চাহিদা হয়ে বাজারে ফিরবে দ্রুত। অর্থনীতির নিয়মে নতুন চাহিদা জন্মাবে ওই বীজ থেকে।’’ অর্থাৎ, দেখা যাবে বাজেটে বরাদ্দ এক টাকাই হয়তো আখেরে জন্ম দিল ৫ টাকার চাহিদার। অর্থনীতির ভাষায় যার নাম ‘মাল্টিপ্লায়ার এফেক্ট’। এই সূত্রে ভরসা রেখেই গ্রামীণ কর্মসংস্থান নিশ্চয়তা প্রকল্পে (এমজিএনআরইজিএ) বরাদ্দ বাড়ানোর সওয়াল করছেন আদিত্য। কেন্দ্রকে সময়ে কিস্তির টাকা পাঠাতে বলছেন পিএম-কিসান প্রকল্পে। শহরে যেহেতু বেকারত্বের হার বেশি, তাই সেখানেও কর্মসংস্থান নিশ্চয়তা প্রকল্প চালুর পক্ষে সওয়াল করছেন জয়তী।

জেএনইউয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক অনমিত্র রায় চৌধুরীর কথায়, ‘‘অর্থনীতি চাঙ্গা করতে প্রায় দেড় লক্ষ কোটি টাকা কর্পোরেট কর কমিয়েছে কেন্দ্র। হাওয়ায় ভাসছে আয়করে বাড়তি সুবিধা দেওয়ার কথা। কিন্তু এতে চাহিদা চাঙ্গা হবে কি? কারণ, যাঁরা ছাড় পেলেন, তাঁদের কেনাকাটা কিছুটা হয়তো বাড়বে। কিন্তু বাড়তির বেশির ভাগ অংশই যাবে সঞ্চয়ে। তার বদলে দরিদ্র, নিম্নবিত্ত বাড়তি দু’পয়সা পেলে, তার বেশির ভাগটাই খরচ করবেন তাঁরা।’’

ওই ধরনের প্রকল্পে বরাদ্দ বৃদ্ধি ছাড়াও পরিকাঠামো, স্বাস্থ্য, শিক্ষার মতো ক্ষেত্রে বিপুল সরকারি লগ্নি চাইছেন বিশেষজ্ঞরা। যুক্তি, তাতে বহু মানুষ কাজ পাবেন। চাহিদাও তৈরি হবে বিভিন্ন শিল্পে। যেমন, কেন্দ্র রাস্তা-সেতু-বন্দর-বিমানবন্দর তৈরিতে হাত দিলে, বরাত বাড়বে ইস্পাত, সিমেন্ট ইত্যাদিরও। ফলে কর্মী লাগবে।

কিন্তু রাজকোষ ঘাটতি?

দিল্লি স্কুল অব ইকনমিক্সের অর্থনীতির অধ্যাপক দিব্যেন্দু মাইতির মতে, কাহিল অর্থনীতিতে টাকা ঢালতে ভরসা পাচ্ছেন না অধিকাংশ বেসরকারি লগ্নিকারী। তাই সরকারি লগ্নি বাড়াতেই হবে। দীর্ঘ মেয়াদে ঘাটতি অবশ্যই মাত্রাছাড়া হওয়া উচিত নয়। কিন্তু অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে এখন ওই লক্ষ্য শিথিলের পক্ষে তিনি।

প্রতিদিন কাজের বাজারে নতুন যত জন পা রাখেন, তার চেয়ে কর্মীর চাহিদা কম হলেই বাড়ে বেকারত্ব। অনমিত্রের দাবি, নতুন পা রাখাদের সংখ্যা দেশে এমনিতেই বেশি। অথচ হালে সরাসরি কমেছে কর্মীর চাহিদা। ফলে সমস্যা এত গুরুতর। তাঁরও দাওয়াই, এখন ঘাটতির লক্ষ্যে সামান্য ঢিল দিয়েও সরকারি ব্যয় বাড়ুক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন