বেসরকারি লগ্নি কার্যত নেই, কবুল জেটলির

এসবিআই রিসার্চ-ও তাদের রিপোর্টে বলেছে, অর্থনীতির ঝিমিয়ে পড়াটা নিছক যে অঙ্কের হিসেবে ধরা পড়েছে, তা নয়। তার প্রকৃত লক্ষণ এখন স্পষ্ট। বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ বিষয়টিকে শুধু অঙ্কের হিসেব বলার পরেই এই রিপোর্ট দিল তারা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৩:১০
Share:

অরুণ জেটলি। ফাইল চিত্র।

আর্থিক বৃদ্ধি যেটুকু যা হচ্ছে, তা যে সরকারি ব্যয় ও বিদেশি লগ্নির দাক্ষিণ্যেই হচ্ছে, তা বুধবার কার্যত মেনে নিলেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। পাশাপাশি, ভারতীয় স্টেট ব্যাঙ্কের গবেষণা শাখা এসবিআই রিসার্চের হুঁশিয়ারি, ২০১৬-র সেপ্টেম্বর থেকেই ঝিমিয়ে যাওয়ার লক্ষণ শুরু হয়েছে অর্থনীতিতে। আর, তা যে সাময়িক নয়, দীর্ঘ মেয়াদি, সেই লক্ষণই স্পষ্ট।

Advertisement

নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রীর গদিতে বসার পরে তিন বছর কেটে গেলেও শিল্পমহল যে লগ্নিতে উৎসাহ দেখাচ্ছে না, এ দিন তা মেনে নিয়ে অর্থমন্ত্রীর মন্তব্য, ‘‘বেসরকারি লগ্নি নেই বললেই চলে।’’ উল্লেখ্য, চলতি অর্থ বছরের প্রথম তিন মাসে বৃদ্ধির হার ৫.৭ শতাংশে নেমে আসার পরেই মোদী সরকারের অন্দরমহলে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। তার জেরেই জেটলির এই মন্তব্য বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরাও।

স্বাভাবিক ভাবেই অর্থনীতির স্বাস্থ্য ফেরানোর দাওয়াই নিয়ে ভাবনা-চিন্তা করতে হচ্ছে মোদী সরকারকে। আজ এ প্রসঙ্গে জেটলির দাবি, ‘‘অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার জন্য আর কী কী ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে, তা সরকার খতিয়ে দেখছে। অর্থনীতির এগোনোর মাপকাঠিগুলি আমরা পর্যালোচনা করছি। যে-সব অতিরিক্ত পদক্ষেপ প্রয়োজন, তা করা হবে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আমরা প্রয়োজন মতো ব্যবস্থা নিয়েছি। আর্থিক সংস্কারও চলছে, তাতে কোনও ছেদ পড়েনি।’’

Advertisement

বিশেষজ্ঞদের ধারণা, অর্থনীতির এই টালমাটাল অবস্থার কারণেই ঘরে-বাইরে চাপ সত্ত্বেও পেট্রোল-ডিজেলের উৎপাদন শুল্ক কমাতে নারাজ মোদী সরকার। কারণ কর কমালে সরকারের আয় কমবে। সরকারি খরচে কাটছাঁট করতে হবে। কিন্তু আর্থিক বৃদ্ধিকে টেনে তুলতে সরকারি খরচই এখন একমাত্র ভরসা। জেটলি স্বীকার করেন, ‘‘সরকার পরিকাঠামোয় ব্যয় বাড়িয়েছে। যেটুকু আর্থিক বৃদ্ধি হচ্ছে, তা সরকারি খরচ ও বিদেশি লগ্নি বাবদই হচ্ছে। বেসরকারি লগ্নি তো নেই বললেই চলে।’’

এসবিআই রিসার্চ-ও তাদের রিপোর্টে বলেছে, অর্থনীতির ঝিমিয়ে পড়াটা নিছক যে অঙ্কের হিসেবে ধরা পড়েছে, তা নয়। তার প্রকৃত লক্ষণ এখন স্পষ্ট। বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ বিষয়টিকে শুধু অঙ্কের হিসেব বলার পরেই এই রিপোর্ট দিল তারা। এসবিআই রিসার্চ বলেছে, সরকারি খরচ আরও বাড়ানো ও রাজকোষ ঘাটতিতে রাশ টানা ছাড়া এই মুহূর্তে অর্থনীতির ধস আটকানোর পথ খোলা নেই। ঋণের অঙ্কে তাদের মতে অদল-বদল না-করাই ভাল। এই ধস সাময়িক বা স্বল্প মেয়াদি নয় বলে মন্তব্য করে রিপোর্ট জানিয়েছে, চলতি অর্থবর্ষের প্রথম ত্রৈমাসিক পর্যন্ত তা গড়িয়েছে, যেটা উদ্বেগের। উল্লেখ্য, এই নিয়ে পরপর ছ’টি ত্রৈমাসিকে বৃদ্ধি কমায় তা নেমে এসেছে
৫.৭ শতাংশে।

এ দিকে, অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে রফতানি বাড়ানোয় কেন্দ্র জোর দিচ্ছে বলে মন্তব্য করেন শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী সুরেশ প্রভু। রফতানিকারীদের সমস্যা সমাধানে অর্থ মন্ত্রক ব্যবস্থা নিচ্ছে বলেও এ দিন আশ্বাস দেন তিনি। যেমন, কার্ষকরী মূলধন জোগানোর ব্যবস্থা করা, আগে মেটানো কর ফেরতের ব্যবস্থা করা ও রফতানি বাড়াতে আরও বেশি উৎসাহ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। রফতানি শিল্পে আরও কর্মসংস্থানের পথ তৈরি করতে নীতি আয়োগের সঙ্গেও কথাবার্তা চালানো হচ্ছে।

অশনি সঙ্কেত

• আর্থিক বৃদ্ধি ৫.৭ শতাংশে, যা তিন বছরে সবচেয়ে কম

• এই নামমাত্র বৃদ্ধিও সরকারি ব্যয় ও বিদেশি লগ্নির দৌলতে, মানলেন জেটলি

• অর্থনীতিকে টেনে তুলতে নতুন ওষুধের কথা ভাবছে কেন্দ্র

• সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে

• ২০১৬-র সেপ্টেম্বর থেকেই অর্থনীতি চলছে ঢিমেতালে, ইঙ্গিত স্টেট ব্যাঙ্কের গবেষণা শাখার রিপোর্টেও

• পরিস্থিতি সাময়িক বা স্বল্প মেয়াদি নয়। কারণ তা নতুন আর্থিক বছরের প্রথম ত্রৈমাসিক অবধি গড়িয়েছে, হুঁশিয়ারি রিপোর্টে

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন