নজর শেষ চেষ্টার বৈঠকে

সুতোয় ঝুলছে গ্রিসের ভবিষ্যৎ। সঙ্গে ইউরোপেরও। ভারতীয় সময় অনুযায়ী মঙ্গলবার রাত সাড়ে দশটারও পরে শুরু হল ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) জরুরি বৈঠক। আলোচনার টেবিলে উপস্থিত গ্রিসের প্রধানমন্ত্রী অ্যালেক্সিস সিপ্রাস, জার্মান চান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেল, ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ-সহ ইইউ-র সদস্য দেশগুলির মাথারা।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

ব্রাসেলস ও আথেন্স শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০১৫ ০২:৪৭
Share:

আথেন্সে ব্যাঙ্কের বন্ধ দরজাতেও পেনশনের আশায় হত্যে। ছবি: এএফপি।

সুতোয় ঝুলছে গ্রিসের ভবিষ্যৎ। সঙ্গে ইউরোপেরও।

Advertisement

ভারতীয় সময় অনুযায়ী মঙ্গলবার রাত সাড়ে দশটারও পরে শুরু হল ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) জরুরি বৈঠক। আলোচনার টেবিলে উপস্থিত গ্রিসের প্রধানমন্ত্রী অ্যালেক্সিস সিপ্রাস, জার্মান চান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেল, ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ-সহ ইইউ-র সদস্য দেশগুলির মাথারা। রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষা বিশ্বজুড়ে। সেই সঙ্গে নতুন আতঙ্ক। লিথুয়ানিয়ার প্রোসিডেন্ট জানান, সিপ্রাস হাসিমুখে ঢুকেছেন ঠিকই। কিন্তু তাঁর হাতে দেশকে বাঁচানোর লিখিত পরিকল্পনাই নেই। আগামীকাল তা পেশ করার কথা বলছে গ্রিস।

ফলে ঘুরপাক খাচ্ছে প্রশ্ন। সঙ্কটমুক্তির জন্য নতুন করে ঋণ পেতে আদৌ কি বাকি ১৮ দেশের (বিশেষত জার্মানি) কাছে গ্রহণযোগ্য সংস্কার কর্মসূচি পেশ করতে পারবে গ্রিস? না কি ছেড়ে দিতে বাধ্য হবে ইউরো মুদ্রার ব্যবহার? ভাঙন ধরবে ইইউ-তে? উত্তর খুঁজতে ব্রাসেলসে চোখ সারা পৃথিবীর।

Advertisement

এই টেনশনের কারণেই মঙ্গলবার বিশ্বজুড়ে অস্থির থেকেছে শেয়ার আর বন্ডের বাজার। দ্রুত ওঠা-নামা করেছে বিভিন্ন মুদ্রার বিনিময়মূল্য। চিন্তার পারদ চড়েছে এ খবর জানার পরে যে, এ দিন ইউরোপীয় দেশগুলির অর্থমন্ত্রীদের বৈঠকে সে ভাবে নতুন কোনও প্রস্তাব পেশ করেননি গ্রিক অর্থমন্ত্রী ইউক্লিড সাকালোটস। যদিও গ্রিসের দাবি, নতুন প্রস্তাবই জানিয়েছে তারা।


বৈঠকে যোগ দিতে ব্রাসেলসে গ্রিক প্রধানমন্ত্রী সিপ্রাস। ছবি: রয়টার্স।

দেউলিয়া ঘোষণার মুখে দাঁড়িয়ে গ্রিস। সরকারের ভাঁড়ারে টাকা নেই। নোটের অভাবে এটিএম থেকে ইচ্ছেমতো টাকা তোলার জো নেই। ব্যাঙ্ক বন্ধ জেনেও তার সামনে হত্যে দিয়ে রয়েছেন পেনশন প্রাপকরা। হাতে যা ইউরো আছে, তা দিয়ে চলবে বড়জোর দিনকয়েক। ফলে আশঙ্কা, এ দিন রাতে শুরু হওয়া আলোচনা ভেস্তে গেলে, ইউরো ছেড়ে নিজেদের মুদ্রা দ্রাকমা ছাপাতেই হবে গ্রিসকে। ভেঙে যাবে ইইউ। টোল খাবে ইউরো। তাই তা রুখতে এই আলোচনাকেই শেষ সুযোগ বলে মনে করছেন অনেকে।

ঠারেঠোরে গ্রিসের পাশে থাকার কথা জানিয়েছে স্পেন। পুরোপুরি সরে যায়নি আমেরিকা, ফ্রান্স, ইতালিও। সিপ্রাসকে অভিনন্দন জানান কিউবার ফিদেল কাস্ত্রোও। কিন্তু সমস্যা হল, সব থেকে বেশি ধার যে দেশের কাছে, এখনও পর্যন্ত পুরোপুরি বেঁকে রয়েছে তারাই। অ্যাঞ্জেলা মার্কেলের জার্মানি। অনেকেই বলছেন, গ্রিসকে ইউরো অঞ্চল থেকে বার করে দেওয়ার দেওয়ার জন্য দেশের মধ্যে প্রবল চাপ রয়েছে মার্কেলের উপর। জার্মান সংবাদপত্র লিখেছে ‘আজ সেই লৌহমানবীকে দেখতে চাই।’ খোদ ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট জ্যঁ ক্লদ জুঙ্কার জানিয়েছেন, ইইউ-তেই অনেকে চান গ্রিস বিদায় নিক। নাম না-করলেও তীর জার্মান অর্থমন্ত্রী উলফগ্যাং স্কাইউব্ল-র দিকে। মার্কেলও একবগ্গা, ‘‘আগে খরচ ছাঁটাই, কর বাড়ানোর মতো সংস্কারের প্রতিশ্রুতি। তারপরে আলোচনা।’’

এই পরিস্থিতিতে সুতোয় ঝুলছে গ্রিস-সহ ইউরোপের নিয়তি। এমনিতে গ্রিসে জনসংখ্যা মোটে ১.১ কোটি। ইউরোপীয় অর্থনীতিতে অবদান ২%। কিন্তু অনেকেই মনে করছেন, গ্রিস ইইউ থেকে বেরিয়ে গেলে, তা হবে ভাঙনের শুরু। পরে ব্রিটেন, স্পেনের মতো দেশও অন্য কারণে ওই একই পথ ধরলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। অস্থিরতা তৈরি হবে বিশ্ব অর্থনীতিতে।

এমন দমবন্ধ টেনশনের আবহেও সিপ্রাসের হাসিমুখের ছবিই এখনও পর্যন্ত বেশিরভাগ সময় দেখেছে বিশ্ব। কিন্তু বৈঠক শেষেও তা বজায় থাকবে তো? অপেক্ষা উত্তরের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন