গণভোটের রায়

ইউরোপের ত্রাণে ‘না’ গ্রিসের

ঋণদাতাদের শর্ত মেনে হাত পেতে ত্রাণ নিতে নারাজ গ্রিস। রবিবারের গণভোটে সেই প্রস্তাবে ‘না’ করে নিজের চেষ্টায় ঘুরে দাঁড়ানোর শপথ নিল গ্রিস।খরচ কমিয়ে, কর বাড়িয়ে ইউরোপ -আইএমএফের ত্রাণের অর্থ নেওয়া, না কি আলাদা ভাবে ঋণদাতাদের সঙ্গে রফা— এই প্রশ্নেই রবিবার ঐতিহাসিক গণভোটে সামিল হয় গ্রিস। আর তাতেই ভারতীয় সময় বেশি রাত পর্যন্ত হিসেবে সংখ্যাগরিষ্ঠের রায় গিয়েছে ‘না’ ভোটের দিকেই।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৬ জুলাই ২০১৫ ০২:৫৩
Share:

শর্ত মানব না। আথেন্সের রাস্তায় বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস। ছবি: এএফপি।

ঋণদাতাদের শর্ত মেনে হাত পেতে ত্রাণ নিতে নারাজ গ্রিস। রবিবারের গণভোটে সেই প্রস্তাবে ‘না’ করে নিজের চেষ্টায় ঘুরে দাঁড়ানোর শপথ নিল গ্রিস।

Advertisement

খরচ কমিয়ে, কর বাড়িয়ে ইউরোপ -আইএমএফের ত্রাণের অর্থ নেওয়া, না কি আলাদা ভাবে ঋণদাতাদের সঙ্গে রফা— এই প্রশ্নেই রবিবার ঐতিহাসিক গণভোটে সামিল হয় গ্রিস। আর তাতেই ভারতীয় সময় বেশি রাত পর্যন্ত হিসেবে সংখ্যাগরিষ্ঠের রায় গিয়েছে ‘না’ ভোটের দিকেই। ফলে প্রধানমন্ত্রী অ্যালেক্সিস সিপ্রাসের ‘না’ ভোট দেওয়ার আর্জিতেই মানুষ সাড়া দিয়েছেন বলে গ্রিস সরকারের দাবি। ত্রাণ প্রকল্প মেনে নিয়ে ‘হ্যাঁ’ ভোট দেওয়ার শিবির দৌড়ে পিছিয়ে ছিল প্রথম থেকেই।

গ্রিস সরকারের দাবি, এই ‘না’ ভোট গণতন্ত্রের জয়। এর জেরে তাদের ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বার করে দিতে পারবে না জোটের বাদবাকি ১৮টি সদস্য দেশ। তা করতে গেলে বাধা হবে আইনই। গ্রিক অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘‘অভিন্ন ইউরো মুদ্রার ১৯ দেশের এই জোট থেকে কাউকে আলাদা করা আইনবিরুদ্ধ।’’ যদিও ঋণদাতাদের অনেকেই বলেছেন, এর পরে আর ইউরো ব্যবহার করে জোটে থাকতে পারবে না গ্রিস। অনিশ্চয়তা গ্রাস করবে প্রায় দেউলিয়া গ্রিসের অর্থনীতিকে।

Advertisement

সরকারি সূত্রের খবর, এ দিন বিপুল সাড়া মিলেছে ভোটে। ফলে ৪০ শতাংশের কম ভোট পড়লে রায় গ্রহণযোগ্য না-হওয়ার আশঙ্কা ছিল না। আনুষ্ঠানিক ভাবে বুথ ফেরত সমীক্ষা হয়নি। তবে গ্রিসের সময় সন্ধে ৭টায় ভোট শেষ হওয়ার পরেই সে দেশের প্রধান ছ’টি টেলিভিশন চ্যানেলের সমীক্ষাতেই ত্রাণ প্রকল্প মেনে নেওয়ার বিপক্ষে গ্রিক জনগণ রায় দিচ্ছেন বলে ইঙ্গিত মিলেছিল। সংশ্লিষ্ট সূত্রে ইঙ্গিত, কম বয়স্ক থেকে শুরু করে পেনশনপ্রাপক এবং একেবারেই নিম্নবিত্তরা ‘না’ ভোটকেই বেছে নিয়েছেন। মধ্যবয়স্ক ও মধ্যবিত্তরা এবং বামপন্থী সরকারের কট্টর বিরোধীরা ত্রাণের পক্ষেই ‘হ্যাঁ’ ভোট দিয়েছেন।

গত পাঁচ বছর ধরে চলতে থাকা মন্দার জেরে আর্থিক সঙ্কটে নাজেহাল ১৯টি দেশের জোট ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্যতম সদস্য গ্রিস। বাদবাকি ইউরোপ, ইউরোপীয় শীর্ষ ব্যাঙ্ক এবং আইএমএফের কাছ থেকে ত্রাণ প্রকল্প খাতে ঋণ নিয়ে খুঁড়িয়ে চলা অর্থনীতি। বেকারত্বে জেরবার সাধারণ মানুষ। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রে টান। খরচ কাটছাঁট করতে গিয়ে প্রশাসন চালাতে হিমশিম সরকার। এই পরিপ্রেক্ষিতে ঋণদাতাদের কড়া শর্ত মানলে তবেই মিলত পরবর্তী দফার ত্রাণ। সরকারি খরচ আরও কমানো ও কর বাড়ানোর শর্তে ওই ঋণ পাওয়া নিয়েই উভয়সঙ্কটে ছিল গ্রিস।

চরম ব্যয়সঙ্কোচের পথ থেকে সরে আসার প্রতিশ্রুতি দিয়েই জানুয়ারিতে ক্ষমতায় আসেন বামপন্থী নেতা ৪০ বছর বয়স্ক সিপ্রাস। অপমানজনক জীবনযাত্রা থেকে বেরিয়ে এসে সম্মানের সঙ্গে বাঁচতেই গ্রিকদের ‘না’ ভোট দেওয়া উচিত বলে আর্জি জানিয়েছিলেন তিনি।

‘না’ শিবিরই জয়ী হওয়ায় গ্রিস সরকার আইএমএফ ও অন্যান্য ঋণদাতার সঙ্গে আলাদা ভাবে রফায় আসতে তৎপর হবে বলে জানিয়েছে। অর্থমন্ত্রী ইয়ানিস ভারুফাকিস দাবি করেছেন, খুব তাড়াতাড়ি তা সম্ভব হবে। প্রধানমন্ত্রী সিপ্রাসও মনে করছেন, এর পরে ঋণদাতাদের সঙ্গে অনেক বেশি দর কষাকষি করতে পারবে গ্রিস।

গত এক সপ্তাহ ধরে বন্ধ থাকা গ্রিসের সব ব্যাঙ্কেই নগদ তলানিতে। ইউরোপীয় শীর্ষ ব্যাঙ্ক (ইসিবি) জরুরি ভিত্তিতে তহবিল না-জোগালে সেগুলি কাজ শুরু করতে পারবে না। এ ব্যাপারে জোটের অন্য দেশগুলির সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেবে ইসিবি। সিপ্রাস ইতিমধ্যেই টেলিফোনে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁকোয়া হল্যান্ডে-র সঙ্গে কথা বলেছেন। জি-৭ জানিয়েছে, তারা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখছে। জার্মান চান্সেলর এঞ্জেলা মার্কেল এবং হল্যান্ডে সোমবার বৈঠকে বসছেন।

এ দিকে রাজকোষ কিছুটা অন্তত ভরাতে মরিয়া গ্রিস সরকার কালো টাকা উদ্ধারের চেষ্টা করছে। সুইস ব্যাঙ্কে যে-সব গ্রিকের অ্যাকাউন্ট আছে, তাঁরা অঘোষিত আয়ের উপর এককালীন ২১% কর দিলেই আর কোনও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবে না আথেন্স।

এই সংক্রান্ত আরও খবর জানতে ক্লিক করুন।

গ্রিসে জিতল ‘না’, পদত্যাগ করলেন অর্থমন্ত্রী ভারুফাকিস

ভারত পারে, গ্রিস পারে না? প্রশ্ন করেছিল পাপা

এ বার কোন পথে গ্রিস

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন