সেসেও উঠছে না ক্ষতিপূরণের টাকা

জুলাইয়ে চালুর পর থেকে শুধু সেপ্টেম্বর বাদ দিলে প্রতি মাসেই ধাপে ধাপে জিএসটি থেকে আয় কমেছে।

Advertisement

প্রেমাংশু চৌধুরী

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০১৮ ০২:৩৬
Share:

চিন্তিত: করের দরুন কপালে ভাঁজ? অরুণ জেটলি। —ফাইল চিত্র।

জিএসটি চালুর পরে রাজ্যগুলির রাজস্বে শুরুর দিকে যেটুকু টান পড়বে, সংগৃহীত সেসের তহবিল থেকেই তা মিটিয়ে দেওয়ার বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী ছিল কেন্দ্র। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে যে, ওই তহবিলে জমা যা পড়েছে, ক্ষতিপূরণ দিতে হবে তার থেকে ঢের বেশি। তাই সেই বাড়তি টাকার বন্দোবস্ত কোথা থেকে হবে, তা নিয়ে চিন্তার ভাঁজ ক্রমশ গভীর হচ্ছে অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির কপালে। বিশেষত যেখানে যে কোনও মূল্যে রাজকোষ ঘাটতিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সদ্য ধারের অঙ্ক পর্যন্ত কমানোর কথা বলেছে কেন্দ্র।

Advertisement

জুলাইয়ে চালুর পর থেকে শুধু সেপ্টেম্বর বাদ দিলে প্রতি মাসেই ধাপে ধাপে জিএসটি থেকে আয় কমেছে। এই নতুন কর থেকে রাজ্যগুলির আয় প্রত্যাশা থেকে কম হওয়ায় প্রতিশ্রুতি মেনে ক্ষতিপূরণ মেটাতে হচ্ছে কেন্দ্রকে। তা নিয়ে এত দিন তেমন চিন্তা ছিল না। কারণ, সেই ক্ষতিপূরণ মেটানোর জন্য পৃথক তহবিলের ব্যবস্থা করা হয়েছিল শুরুতেই। দামি গাড়ি, ভোগ্যপণ্য, শরীর ও পরিবেশের পক্ষে ক্ষতিকারক পণ্যে জিএসটির উপরে বসানো বাড়তি সেস থেকে সেই তহবিলে টাকা জমা পড়ে।

কিন্তু এ বার দেখা যাচ্ছে, তহবিলে যা জমা পড়েছে, ক্ষতিপূরণ দিতে হবে তার থেকেও বেশি। সরকারি হিসেব বলছে, নভেম্বরে জিএসটি বাবদ আয়ের ক্ষতিপূরণ হিসেবে রাজ্যগুলিকে প্রায় ৮,৮৯৪ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ মেটাতে হবে। কিন্তু সেস বাবদ তহবিলে জমা পড়েছে, ৭,৮৪৮ কোটি। প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে বাড়তি টাকা আসবে কোথা থেকে?

Advertisement

বৃহস্পতিবার জিএসটি পরিষদের বৈঠকে এখনও পর্যন্ত জিএসটি আয়ের পর্যালোচনা হয়। সেখানেই এই তথ্য উঠে আসে। অর্থ মন্ত্রকের এক কর্তার ব্যাখ্যা, সেস থেকে আয় যে কমেছে, তা নয়। কারণ, প্রতি মাসেই গড়ে সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকা মতোই আয় হয় সেস থেকে। কিন্তু সমস্যা হল, রাজ্যগুলির রাজস্ব আয়ের ঘাটতি অনেক বেড়ে গিয়েছে।

আঙুল উঠেছে গুজরাত ভোটের দিকে তাকিয়ে প্রায় ২০০টি পণ্য ও পরিষেবায় জিএসটি কমানোর দিকে। অর্থ মন্ত্রকের একটি সূত্রের যুক্তি, রাজ্যগুলির জিএসটি আয়ে ঘাটতি ধাপে ধাপে কমছিল। কিন্তু একসঙ্গে এক গুচ্ছ পণ্য-পরিষেবায় জিএসটি কমানোয় এখন ফের তা বেড়েছে।

আইন অনুযায়ী, ২০১৫-’১৬ অর্থবর্ষে রাজ্যগুলির যা রাজস্ব আয় ছিল, তার তুলনায় প্রতি বছর রাজস্ব ১৪% হারে বাড়বে ধরে নিয়ে প্রতিটি রাজ্যের প্রত্যাশিত আয় হিসেব করা হয়। আয় তার থেকে কম হলে, সেটাই কেন্দ্রের মিটিয়ে দেওয়ার কথা। পাঁচ বছর এই ব্যবস্থা চালু থাকবে। এই নীতি তৈরির সময় ভাবা হয়েছিল, হাতে গোনা কিছু রাজ্যকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। কিন্তু জিএসটি চালুর পরে দেখা যাচ্ছে, প্রতি মাসে প্রায় সব রাজ্যেরই ক্ষতিপূরণ দরকার পড়ছে।

রাজ্যের আয় কম হলে, কেন্দ্রেরও আয় কম হবে। কারণ, জিএসটি দু’ভাগে ভাগ হয়। সেই চিন্তা থাকলেও, ক্ষতিপূরণ মেটানোয় সমস্যা হয়নি। কারণ সেস থেকে যথেষ্ট আয় হচ্ছিল। নভেম্বরে সেই হিসেবও উল্টে গিয়েছে।

সূত্রের খবর, পরিস্থিতি সামাল দিতে আন্তঃরাজ্য জিএসটি বা আইজিএসটি থেকে প্রাপ্য ৩৫ হাজার কোটি কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে ভাগ করে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। অর্ধেক পাবে কেন্দ্র। বাকিটা রাজ্যগুলির মধ্যে ২০১৫-’১৬ সালের আয়ের অনুপাতে ভাগ করা হবে। ঘাটতি মেটাতে সেটিই এখন কেন্দ্রের ভরসা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন