GST

১ জুলাই থেকে কীসে বেশি খরচ, কীসে কম, দেখুন এক নজরে

রাজস্ব বৃদ্ধি, পণ্যের দামের সরলীকরণ হবে বলে দাবি তো ছিলই, জিএসটি চালু হলে পরবর্তী কালে সার্বিক কর নীতি প্রয়োগ আরও সহজ হবে বলেও দাবি কেন্দ্রের। পাশাপাশি রয়েছে ১.৫ শতাংশ হারে জিডিপি বৃদ্ধির দাবি।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২১ জুন ২০১৭ ১৮:১৭
Share:

১ জুলাই থেকে চালু হচ্ছে জিএসটি

বহু দিনের দড়ি টানাটানি, ‘স্বত্ব’র দাবি, পাল্টা দাবি, একাধিক সংশোধনীর পর অবশেষে আসতে চলেছে সে। তার আসাকে স্মরণীয় করে রাখতে চেষ্টার ত্রুটি নেই মোদী সংকারের। স্বাধীনতার পর এই প্রথম মধ্যরাতে বসতে চলেছে সংসদের অধিবেশন। ৩০ জুন মধ্যরাতের সেই অধিবেশন থেকেই দেশজুড়ে চালু হবে জিএসটি (পণ্য পরিষেবা কর)।

Advertisement

রাজস্ব বৃদ্ধি, পণ্যের দামের সরলীকরণ হবে বলে দাবি তো ছিলই, জিএসটি চালু হলে পরবর্তী কালে সার্বিক কর নীতি প্রয়োগ আরও সহজ হবে বলেও দাবি কেন্দ্রের। পাশাপাশি রয়েছে ১.৫ শতাংশ হারে জিডিপি বৃদ্ধির দাবি। কিন্তু সবচেয়ে বড় দাবিটি হল— জিএসটি চালু হলে চাপ পড়বে না গরিব বা মধ্যবিত্তের পকেটে। উল্টে দাম কমবে এমন কিছু জিনিসের, যার সিংহভাগের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত সাধারণ মানুষ। ফলে আখেরে লাভ হবে তাদেরই। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, জিএসটি পুরোপুরি চালু না হলে জনজীবনে এর সঠিক প্রভাব বোঝা সম্ভব নয়।

মোট ১২১১টি পণ্য এবং পরিষেবাকে আনা হয়েছে জিএসটির আওতায়। পাঁচটি পর্যায়ে ভাগ করে তাদের উপর চাপানো হয়েছে ০-২৮% হারে কর। তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে সোনা এবং না কাটা হিরেকে। সবচেয়ে বেশি পরিমাণে পণ্য-পরিষেবাকে রাখা হয়েছে ১৮% করের আওতায়। তবে উত্পাদন শুল্ক এবং আমদানি শুল্ক উঠে গিয়ে কেবলমাত্র জিএসটি চালু হওয়ায়, যে সব পণ্য ০% জিএসটির আওতায় পড়ছে, সেগুলির দাম নিশ্চিত ভাবেই কমছে। কিন্তু বাকি সামগ্রীগুলির? সেগুলির কি দাম কমছে না বাড়ছে? এক নজরে দেখে নেওয়া যাক জিএসটির পাঁচটি পর্যায়ে থাকা পণ্য-পরিষেবাগুলি কী এবং এদের মধ্যে কোনগুলির দাম বাড়তে বা কমতে পারে।

Advertisement

০% অর্থাত্ কর নেই

পণ্য: খাদ্যশষ্য, দুধ, মাছ, মাংস, ডিম, ফল, সব্জি, নুন, মধু, গুড়, ছোটদের ছবির বই, আদালতে ব্যবহৃত কাগজপত্র, খবরের কাগজ, বেসন, টিপ, সিঁদুর, ময়দা, পাট, সিল্ক, পরচুল ইত্যাদি

পরিষেবা: শিক্ষা, স্বাস্থ্য, রেলে সাধারণ কামরার টিকিট, মেট্রো ও লোকাল ট্রেনের টিকিট, ধর্মীয় যাত্রার টিকিট, দৈনিক হাজার টাকার কম ভাড়ার হোটেল

পণ্য: চিনি, চা, কফি, সাবু, কেরোসিন, কয়লা, কাজু, ধূপ, চা, কফি, পোস্টাল ও রেভিনিউ স্ট্যাম্প, ভোজ্য তেল, জীবনদায়ী ওষুধ, মিষ্টি, ৫০০ টাকা পর্যন্ত দামের জুতো, কৃষি সামগ্রী, হাজার টাকা পর্যন্ত দামের পোশাক, গুঁড়ো দুধ, কয়লা ইত্যাদি

পরিষেবা: ছোট রেস্তোরাঁ, অ্যাপ ট্যাক্সি পরিষেবা, রেলে এসি কামরার টিকিট, বিমানের ইকনমি টিকিট

পণ্য: হাজার টাকার বেশি দামের পোশাক, মাখন, ঘি, ফলের রস, চিজ, শুকনো ফল, সসেজ, ফ্রুট জুস, আয়ুর্বেদীয় ওষুধ, ছাতা, মোবাইল, চশমা, দাবা, তাস, ক্যারম, লুডোর বোর্ড ইত্যাদি

পরিষেবা: বার ও এসি ছাড়া রেস্তোরাঁ, বিমানের বিজনেস ক্লাসের টিকিট, এক হাজার থেকে দু’হাজার টাকা ভাড়ার হোটেল, রাজ্য নিয়ন্ত্রিত লটারি

পণ্য: মাথার তেল, সাবান, টুথপেস্ট, পাঁচশো টাকার বেশি দামি জুতো, বিস্কুট, বিড়ির পাতা, কেক, পেস্ট্রি, কর্নফ্লেক্স, জ্যাম, সস, আইসক্রিম, পাস্তা, মিনারেল ওয়াটার, খাম, স্পিকার, মনিটর, ক্যামেরা, সিসিটিভি ইত্যাদি

পরিষেবা: টেলিকম, তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর পরিষেবা, ব্যাঙ্কিং ও আর্থিক পরিষেবা, বিমা, বার ও এসি-সহ রেস্তোরাঁ, দু’হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা ভাড়ার হোটেল

পণ্য: বিড়ি, চিউয়িং গাম, কোকো ছাড়া চকোলেট, চকোলেটের কোটিং দেওয়া ওয়েফার, পান মশলা, ডিওডরেন্ট, সেভিং ক্রিম, আফটার শেভ, শ্যাম্পু, সানস্ক্রিন, ওয়ালপেপার, সেরামিক টাইলস, ওয়াটার হিটার, ডিস ওয়াশার, এটিএম ভেন্ডিং মেশিন, ভ্যাকুয়াম ক্লিনার, অটোমোবাইল, মোটর সাইকেল, ব্যাক্তিগত এয়ার ক্র্যাফ্ট ইত্যাদি

পরিষেবা: দিনে ৫ হাজার টাকার বেশি ভাড়ার হোটেল, পাঁচ তারা হোটেল, সিনেমা হল

বেশি টাকা দিয়ে গয়না কেনায় এমনিতেই এখন প্যান কার্ড বাধ্যতামূলক। এর পর জিএসটিতে বাড়তি কর যুক্ত হলে ব্যবসা মার খাওয়ার আশঙ্কা করছিল স্বর্ণশিল্প। এ ক্ষেত্রে মাত্র ৩% বিশেষ কর ঘোষণা করায় খুশি অল ইন্ডিয়া জেমস অ্যান্ড জুয়েলারি ট্রেড ফেডারেশন। বিড়িতে কর বসানোর উপরেও দ্বিধায় ছিল সরকার। স্বাস্থ্যের ক্ষতিকর দিকের কথা মাথায় রেখে কেন্দ্র বিড়িতে চড়া হারে কর বসাতে চাইলেও বহু মানুষের রুটি-রুজির কথা মাথায় রেখে কিছুটা পিছু হঠেছে। ২৮% করের আওতায় বিড়িকে রাখলেও তেন্দু পাতায় কর বসানো হয়েছে ১৮%. তবে সিগারেটের মতো এতে বাড়তি সেস থাকছে না। ফলে সিগারেটের দাম বাড়তে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এ ছাড়া পাঁচশো টাকার কম দামের জুতো এবং বিস্কুটে যথাক্রমে ৫% এবং ১৮% হারে কর বসানোয় এগুলির দাম কমার সম্ভাবনাই বেশি। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, যত দিন না জিএসটি পুরো মাত্রায় চালু হচ্ছে, তত দিন বোঝা সম্ভব নয় কোন পণ্য বা পরিষেবার উপর ঠিক কতটা প্রভাব পড়ল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন